Monsoon in India

মুম্বই ভাসছে, দেশের পশ্চিম ও দক্ষিণ উপকূলে সময়ের আগেই ঢুকে পড়েছে বর্ষা, ‘অনুকূল পরিবেশ’ তৈরির পিছনে ঝঞ্ঝা

সোমবার মুম্বইয়ে এক দিনে যা বৃষ্টি হয়েছে, তা ১০৭ বছরের ‘রেকর্ড’কে ভেঙে দিয়েছে। মৌসুমি বায়ুর এই দস্যিপনার কারণ নিয়ে কৌতূহল তৈরি হয়েছে। মৌসম ভবনের তরফে জানানো হয়েছে, ‘অনুকূল পরিবেশ’ বর্ষার অগ্রগতিকে ত্বরান্বিত করছে।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ২৭ মে ২০২৫ ২০:৩০
Share:

ভারী বৃষ্টিতে জলমগ্ন মুম্বইয়ের বিস্তীর্ণ অংশ। ছবি: পিটিআই।

নির্ধারিত সময়ের বেশ খানিকটা আগেই কেরল উপকূলে প্রবেশ করেছে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু। তার পর তা দ্রুত গতিতে গতিতে ছড়িয়ে পড়েছে দক্ষিণ এবং পশ্চিম ভারতের বিস্তীর্ণ অংশে। মৌসুমি বায়ুর অতিসক্রিয়তায় সোমবার মুম্বইয়ে এক দিনে যা বৃষ্টি হয়েছে, তা ১০৭ বছরের ‘রেকর্ড’কে ভেঙে দিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে মৌসুমি বায়ুর এই দস্যিপনার কারণ নিয়ে কৌতূহল তৈরি হয়েছে। মৌসম ভবনের তরফে জানানো হয়েছে, ‘অনুকূল পরিবেশ’ বর্ষার অগ্রগতিকে ত্বরান্বিত করছে।

Advertisement

কিন্তু এই অনুকূল পরিবেশ তৈরি হচ্ছে কী ভাবে?

আবহবিদদের একাংশের নেপথ্যে একটি ঝঞ্ঝাকে দায়ী করছেন, আবহবিজ্ঞানের পরিভাষায় যার নাম ‘ম্যাডেন-জুলিয়ান অসিলেশন’ বা এমজেও। এই ঝঞ্ঝা সাধারণত ভারত এবং প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে তৈরি হয়ে থাকে। বায়ু, মেঘ এবং চাপের সমন্বয়ে তৈরি এই ঝঞ্ঝা প্রতি সেকেন্ডে পূর্ব দিকে ৪ থেকে ৮ মিটার অগ্রসর হয়। গত মে মাসে এটি খানিক দুর্বল ছিল, তবে ২৫ মে-র পর এটি শক্তি বৃদ্ধি করে। আর এর ফলে ভারত মহাসাগর থেকে বিপুল পরিমাণ জলীয় বাষ্প ঢুকতে থাকে বায়ুমণ্ডলে, যা বৃষ্টিপাতের সহায়ক পরিবেশ তৈরি করে। ঝঞ্ঝাটির নামকরণ করা হয়েছে আমেরিকার দুই আবহবিজ্ঞানী রোল্যান্ড ম্যাডেন এবং পল জুলিয়ানের নামে।

Advertisement

তা ছাড়া এল নিনো পরিস্থিতি সাধারণত দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর প্রভাব এবং গতিকে কমিয়ে দেয়। এই বছর তেমন পরিস্থিতি নেই। এল নিনো পরিস্থিতি তৈরি হলে প্রশান্ত মহাসাগরে জলের উষ্ণতা বৃদ্ধি পায়।

বর্ষার আগাম চলে আসা এবং দেশের নানা এলাকাকে কার্যত ভাসিয়ে দেওয়ার নেপথ্যে আরও একটি কারণকে দায়ী করছেন আবহবিদেরা। মরিশাস এবং মাদাগাসকার থেকে উৎপন্ন হওয়া সোমালি বায়ু প্রচুর জলীয় বাষ্প নিয়ে আরব সাগরে আসে। তার পর সেই জলীয় বাষ্পপূর্ণ বায়ু আসে ভারতের পশ্চিম উপকূলে। চলতি বছরে এই বায়ু তুলনায় বেশিই শক্তিশালী রয়েছে বলে জানিয়েছেন আবহবিদেরা।

সাধারণত ১ জুন কেরল উপকূলে বর্ষা ঢোকে। আর তার ১০ দিন পরে মুম্বই উপকূলে পৌঁছোয় দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু। এ বার অবশ্য স্বাভাবিক সময়ের আট দিন আগে (২৪ মে) কেরলে বর্ষা প্রবেশ করে। আর খানিকটা নজিরবিহীন ভাবে ২৬ মে বর্ষা প্রবেশ করে মুম্বইয়ে। মৌসম ভবন জানিয়েছে, গত ৭৫ বছরের ইতিহাসে মুম্বইয়ে এত দ্রুত বর্ষা ঢোকার নজির নেই।

মঙ্গলবার আলিপুর আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, বৃহস্পতিবারের মধ্যেই রাজ‍্যে ঢুকতে পারে মৌসুমি বায়ু। তা ছাড়া পশ্চিম মধ্য ও উত্তর বঙ্গোপসাগর সং‌লগ্ন এলাকায় মঙ্গলবারই নিম্নচাপ তৈরি হওয়ার প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে বলেও জানিয়েছে তারা। আগামী দু’দিনের মধ্যে আরও শক্তি বাড়িয়ে নিম্নচাপটি ক্রমশ উত্তর বঙ্গোপসাগরের দিকে এগোবে। এই দুইয়ের জেরে সপ্তাহভর ঝড়বৃষ্টি চলবে কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গে।

মঙ্গলবারের মধ্যে মধ্য-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর এবং সংলগ্ন উত্তর বঙ্গোপসাগরে আরও বেশ কিছুটা পথ এগিয়েছে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু। প্রবেশ করেছে উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলিতেও। আগামী দু’দিনের মধ্যেই মৌসুমি বায়ু সিকিম হয়ে উত্তরবঙ্গে ঢুকতে পারে। এ সবের জেরে বুধবার থেকে পর পর কয়েক দিন কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গের বেশ কিছু জেলায় ভারী ঝড়বৃষ্টি চলবে। কোথাও কোথাও ভারী থেকে অতিভারী বর্ষণেরও সম্ভাবনা রয়েছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement