নেহরু-সম্মেলনে পেলাম কী, ক্ষোভ কংগ্রেসেই

নিরাপত্তার দমবন্ধ আঁটুনিতে মাছি গলারও উপায় ছিল না রাজধানীর বিজ্ঞান ভবনে। সেখানে দু’দিন ধরে জওহরলাল নেহরুর স্মরণে আন্তর্জাতিক সম্মেলন করে কী পেল কংগ্রেস? ধর্মনিরপেক্ষতার প্রশ্নে সনিয়া-রাহুল কী বললেন, তা দেশবাসী তো পরের কথা, দলের কর্মীরা কি জানতে পারলেন! তাঁদের অনেকে তো ভেতরেই ঢুকতে পাননি। আর নেহরুর যে সমাজতন্ত্র নিয়ে গম্ভীর আলোচনা হল, তা শুনতেই বা সমাজের বিভিন্ন স্তর থেকে কী প্রতিনিধিত্ব ছিল?

Advertisement

শঙ্খদীপ দাস

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২০ নভেম্বর ২০১৪ ০২:৪৩
Share:

নিরাপত্তার দমবন্ধ আঁটুনিতে মাছি গলারও উপায় ছিল না রাজধানীর বিজ্ঞান ভবনে। সেখানে দু’দিন ধরে জওহরলাল নেহরুর স্মরণে আন্তর্জাতিক সম্মেলন করে কী পেল কংগ্রেস? ধর্মনিরপেক্ষতার প্রশ্নে সনিয়া-রাহুল কী বললেন, তা দেশবাসী তো পরের কথা, দলের কর্মীরা কি জানতে পারলেন! তাঁদের অনেকে তো ভেতরেই ঢুকতে পাননি। আর নেহরুর যে সমাজতন্ত্র নিয়ে গম্ভীর আলোচনা হল, তা শুনতেই বা সমাজের বিভিন্ন স্তর থেকে কী প্রতিনিধিত্ব ছিল?

Advertisement

সম্মেলন মিটতেই এ সব প্রশ্ন উঠছে কংগ্রেসেরই অন্দরে! সূত্রের খবর, সম্মেলন নিয়ে ঘরোয়া আলোচনায় দিগ্বিজয় সিংহ, শাকিল আহমেদ, আহমেদ পটেলের মতো নেতারা ক্ষুব্ধ। তাঁদের আক্ষেপ, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী যখন স্বচ্ছতা অভিযানের মতো বিষয় নিয়ে আরও বেশি আম আদমির কাছে পৌঁছচ্ছেন, তখন ঘরে ঢুকে যাচ্ছে কংগ্রেস। অথচ নেহরুর ১২৫ বর্ষপূর্তি ঘিরে তো মানুষের কাছে পৌঁছনো যেত!

এই কাজিয়ার নেপথ্যে অভ্যন্তরীণ রাজনীতি অবশ্য রয়েছে। আনন্দ শর্মা, মুকুল ওয়াসনিক, শীলা দীক্ষিত, মণিশঙ্কর আইয়ারের মতো নেতারা যখন আয়োজনের কুশীলব, তখন বিরোধী গোষ্ঠীর দিগ্বিজয়, আহমেদ পটেলদের তা পছন্দ না হওয়াই স্বাভাবিক। তবে ক্ষোভের কারণটাও অগ্রাহ্য করার মতো নয়। ওয়ার্কিং কমিটির এক নেতা আজ বলেন, হাইকম্যান্ডকে প্রস্তাব দেওয়া হয়, নেহরুর জন্মদিনে ইন্ডিয়া গেটে মানব-শৃঙ্খল গড়ার ডাক দিন সনিয়া-রাহুল। ধর্মনিরপেক্ষতার বদলে জাতীয় ঐক্য ও অখণ্ডতা ‘থিম’ হোক। মোদী স্বচ্ছতা অভিযানে বলিউডকে নামাচ্ছেন। জাতীয় ঐক্যে কংগ্রেসও মানব-শৃঙ্খলে সামিল করুক সচিন তেন্ডুলকর, শাহরুখ-আমির-সলমন খানদের। সব রাজ্যেই এমন শৃঙ্খল গড়া হোক। কিন্তু সময়ের কারণে দেখিয়ে প্রস্তাব আনন্দ শর্মা-রা খারিজ করে দেন।

Advertisement

কংগ্রেসের ওই নেতার কথায়, বিজ্ঞান ভবনের সম্মেলন কেন সংবাদমাধ্যমে প্রচার পেল না, তা নিয়ে এখন কান্নাকাটি চলছে। কিন্তু সচিন-শাহরুখরা যদি মানব-শৃঙ্খলে হাত ধরাধরি করে দাঁড়াতেন, মিডিয়া কি অগ্রাহ্য করতে পারত? নেহরুর সমাজতন্ত্র নিয়ে আফ্রিকার প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট কী ব্যাখ্যা দিচ্ছেন তা টিভি চ্যানেল কেন দেখাবে! আসলে সনিয়া-রাহুল এমন সব পরামর্শদাতা নিয়ে চলছেন, যাঁদের ভাবনার গণ্ডী আন্তর্জাতিক সম্মেলন আয়োজনেই সীমাবদ্ধ! দিগ্বিজয়-শাকিলদের মতে, মোদীর বিপণন কৌশলের মোকাবিলা যে এ ভাবে হবে না, তা বুঝছেন না রাহুল। ঘরে বসে সম্মেলন না করে সামনে থেকে আন্দোলন-সমাবেশে নেতৃত্ব দিতে হবে। বিহার, উত্তরপ্রদেশ থেকে আসা দলীয় কর্মীরাই সে দিন বিজ্ঞান ভবনে প্রবেশাধিকার পাননি বলে ঘরোয়া আলোচনায় অভিযোগ করেন দিগ্বিজয়। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ফোন করে সম্মেলনে আমন্ত্রণ জানান আহমেদ পটেল। প্রকাশ কারাট, সীতারাম ইয়েচুরি, রামগোপাল যাদব, এইচ ডি দেবগৌড়া, শরদ যাদবদের নিমন্ত্রণ করা হয়। সম্মেলনের দিন আহমেদ পটেল, দিগ্বিজয়, অম্বিকা সোনি-রা এই নেতা-নেত্রীদের অভ্যর্থনা করে ভিতরে নিয়ে যান। কিন্তু সনিয়া বা রাহুল তাঁদের সঙ্গে আলাদা করে কথা পর্যন্ত বলেননি। রাহুল তাঁর পাশে বসা কারাটের সঙ্গে কথা বলেন। কিন্তু মমতা, ইয়েচুরি বা শরদ যাদবের সঙ্গে একটা কথাও বলেননি। কংগ্রেসের এক নেতার কথায়, “এটা কি বিভিন্ন দলের নেতাদের ডেকে অপমান করা নয়?” নেতাদের মতে, বিদেশি নেতাদের ডেকে আন্তর্জাতিক সম্মেলন করলে সেই মঞ্চ থেকে খোলাখুলি রাজনৈতিক বার্তা দেওয়া সম্ভব নয়। সেখানে শাসক দলকে সরাসরি নিশানা করাও যায় না। কিন্তু সেটাই তো সময়ের দাবি ছিল। পরিবর্তে দু’দিন ধরে শুধু ভারী আলোচনা হল। আর একটা প্রস্তাব গৃহীত হল, যা ২৪ আকবর রোডের কোনও এক দেরাজে ইতিহাসের দলিল হয়ে পড়ে থাকবে মাত্র। কিন্তু তাতে রাজনৈতিক ভাবে কী লাভ হল কংগ্রেসের!

এই নিয়েই কটাক্ষ করেছিলেন বিজেপির এক নেতা। মাসের গোড়ায় কংগ্রেস নেতারা অভিযোগ তোলেন, বিজ্ঞান ভবনের অনুষ্ঠানে ভাঙচি দিচ্ছে বিজেপি। তখন শাসক দলের ওই নেতা বলেন, “কংগ্রেসের ক’জন নেতা বসে ওই সব ভারী ভারী কথা শোনেন, আমরাও দেখব!” তবু রাহুল কি শুনছেন এ সব? কী করছেন তিনি? সূত্রের খবর, নেহরুর নামে প্রস্তাব গ্রহণের পর কংগ্রেস সহ-সভাপতি এখন একটি নতুন ‘দলিল রচনা’য় ব্যস্ত। মোদী সরকারের তিরিশটি ব্যর্থতা নিয়ে সেই পুস্তিকা সংসদের অধিবেশন শুরুর আগে প্রকাশ করবে কংগ্রেস।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement