২০২৪ সালের মার্চে বিয়ে হয়েছিল দুই চিকিৎসক কৃতিকা রেড্ডি এবং মহেন্দ্র রেড্ডির। চলতি বছর এপ্রিলে মারা যান স্ত্রী। সম্প্রতি গ্রেফতার হয়েছেন স্বামী। ছবি: সংগৃহীত।
পরকীয়ায় জড়িয়ে স্ত্রীকে খুন করেছেন জামাই! বেঙ্গালুরুতে ২৯ বছর বয়সি চিকিৎসকের অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনায় এমনই অভিযোগ করছেন তাঁর বাবা এবং বোন। অন্য দিকে, ধৃত স্বামীর দাবি, বিয়ের পর থেকেই তিনি জানতে পারেন স্ত্রীর নানা অসুখের কথা। পাকস্থলীর সমস্যা ছিল তাঁর। স্ত্রীর অকালমৃত্যুতে তাঁর কোনও হাত নেই।
ত্বক বিশেষজ্ঞ কৃতিকা রেড্ডি এবং শল্যচিকিৎসক মহেন্দ্র রেড্ডির বিয়ে হয়েছিল ২০২৪ সালের মার্চে। বেঙ্গালুরুর বাসিন্দা তাঁরা। গত এপ্রিলে হঠাৎ করে মৃত্যু হয় কৃতিকার। ২৯ বছরের চিকিৎসকের মারা যাওয়ার ৬ মাস পর বৃহস্পতিবার গ্রেফতার হয়েছেন তাঁর চিকিৎসক স্বামী। অভিযোগ, স্ত্রীর শরীরে অতিরিক্ত মাত্রায় অ্যানাস্থেশিয়া প্রবেশ করিয়ে তাঁকে ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিয়েছেন ওই চিকিৎসক। তদন্তে উঠে আসছে একাধিক ‘তত্ত্ব।’ কৃতিকার বাপের বাড়ির দাবি, জামাইয়ের বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্ক ছিল। স্ত্রী প্রেমের পথে কাঁটা হচ্ছিলেন বলে তাঁকে ষড়যন্ত্র করে খুন করেছেন চিকিৎসক। যদিও ধৃত চিকিৎসক এবং তাঁর পরিবার ওই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে।
কৃতিকার বোন নিখিতাও পেশায় চিকিৎসক। তাঁর কথায়, ‘‘দিদির মৃত্যুর দিন থেকে আমার সন্দেহ হচ্ছিল জামাইবাবুকে। দিদির দেহ ময়নাতদন্তে পাঠাতেও ওঁর অনীহা ছিল। ‘ইমোশনাল ড্রামা’ শুরু করেছিলেন। বলেছিলেন, স্ত্রীর দেহে কাটাছেঁড়া তিনি সহ্য করতে পারবেন না। নিজে এক জন চিকিৎসক হয়ে এমন কথা বলছিলেন! আমার সন্দেহ ছিল, খুনই করা হয়েছে দিদিকে।’’ তিনি জানান, কৃতিকা বরাবরই স্বাস্থ্যসচেতন ছিলেন। কখনও বিশেষ অসুখ-বিসুখে ভোগেননি। তবে পুলিশি জেরায় ধৃত মহেন্দ্র দাবি করেছেন, স্ত্রীর বেশ অসুখ ছিল। ওষুধপত্র খেতে হত। মৃত্যুর দিন বাড়িতে সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়ে যান কৃতিকা। সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।
মেয়ের অকালমৃত্যুতে জামাইয়ের কড়া শাস্তি চেয়েছেন মুনি রেড্ডি। তিনি বলেন, ‘‘কৃতিকা স্বামীকে অন্ধের মতো ভালবাসত। কিন্তু কী পেল ভালবাসার মানুষের কাছে! যে জ্ঞান দিয়ে রোগীর জীবন ফেরান চিকিৎসকেরা, সেই শিক্ষা কাজে লাগিয়ে স্ত্রীকে মেরে ফেললেন একজন চিকিৎসক!’’ ইতিমধ্যে জামাইয়ের বিরুদ্ধে থানায় খুনের অভিযোগ করেছেন তিনি।
মেয়ের মৃত্যুর পর বাড়ির সামনে নেমপ্লেট লাগিয়েছেন মুনি। তাতে লেখা, ‘ডক্টর কৃতিকা এম রেড্ডির স্মৃতিতে।’ মুনির কথায়, ‘‘এই বাড়ি তৈরি করেছিলাম মেয়ে-জামাই, তাদের ছেলেমেয়েকে হেসেখেলে থাকতে দেখব বলে। মেয়ের মৃত্যুর পর বাড়িটি ইস্কনকে দান করে দিয়েছি।’’
পুলিশ জানাচ্ছে, বেশি মাত্রায় অ্যানাস্থেশিয়া ঢোকায় ক্রমশ অসুস্থ হয়ে পড়ছিলেন ওই চিকিৎসক। স্ত্রী মারা গেলে তাঁর মৃত্যুকে স্বাভাবিক বলে দেখাতে চেয়েছিলেন স্বামী। তিনি থানায় অভিযোগ দায়েরও করেননি। তবে পুলিশ সুপারের দাবি, তাঁর সহকর্মীরা দারুণ কাজ করেছেন। কারণ, তাঁরা ভিসেরার নমুনা সংগ্রহ করেছিলেন। অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলাও রুজু করেছিলেন। ফরেন্সিক সায়েন্স ল্যাবরেটরি (এফএসএল)-তে ভিসেরার নমুনা পাঠানো হয়েছে। তার পর ধাপে ধাপে তদন্ত এগিয়েছে। সেই অনুযায়ী গ্রেফতার করা হয়েছে মৃতার স্বামীকে। আপাতত তিনি পুলিশের হেফাজতে।
প্রাথমিক তদন্তের পর পুলিশ জানাচ্ছে, স্ত্রীর অসুস্থতা নিয়ে বিরক্ত ছিলেন চিকিৎসক স্বামী। এ নিয়ে নাকি দম্পতির অশান্তিও হত। মহেন্দ্র অভিযোগ করেন, কৃতিকার যে ‘অনেক অসুখ’ আছে, বিয়ের আগে তা লুকিয়েছিল পরিবার। ঘন ঘন স্ত্রী অসুস্থ হয়ে পড়ছেন বলেই কি বিয়ের বছর ঘুরতেই তাঁকে খুন করেছেন চিকিৎসক? তদন্ত চলছে।