সেই দু’টি কোমরবন্ধনী
নীলগিরি পর্বতের ঢালে প্রায় দু’হাজার একর জুড়ে কোডানাড় চা-বাগিচা। এত বড় এলাকা যে, ন’খানা ফটক। ভিতরে হেলিপ্যাড। বাগানের এক কোণে প্রাসাদের মতো বাংলো। গ্রীষ্মে চেন্নাই ছেড়ে এখানেই চলে আসতেন জয়ললিতা। রাজনীতির কচকচানি থেকে দূরে, শান্তির খোঁজে। আয়ুর্বেদিক চিকিৎসা করিয়ে, ঝরঝরে হয়ে ফিরতেন।
শশিকলার বোনপো ভি এন সুধাকরনের বিয়েতে একটি সোনার কোমরবন্ধনী পরেছিলেন জয়ললিতা। কথিত, ১৯৯৫-তে এই বিয়ের খরচ ও জাঁকজমক দেখেই জয়ললিতার বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলা করার সিদ্ধান্ত নেন সুব্রহ্মণ্যম স্বামী। ওই বিয়ের দিন ঠিক একই রকম সেজেছিলেন শশিকলাও। তিনিও পরেছিলেন একই রকম এক কোমরবন্ধনী। দুর্নীতির তদন্তে অবশ্য একটি কোমরবন্ধনীই উদ্ধার হয়েছিল। এক একটি অলঙ্কারের ওজন ১ কিলো ৪৪ গ্রাম। তাতে ২,৩৮৯টি হিরে, ১৮টি পান্না এবং ৯টি চুনি বসানো।
জয়ললিতার শাড়ি, জুতো এবং হাতঘড়ির সংখ্যা প্রবাদপ্রতিম। তদন্তকারীরা আদালতে রিপোর্ট দিয়েছিলেন, তাঁর শাড়ির সংখ্যা ১০ হাজারেরও বেশি। মোট দাম ৯২ লক্ষ ৪৪ হাজার টাকা। সাড়ে সাতশো জোড়ারও বেশি জুতো তাঁর। দাম দু’লক্ষ টাকারও বেশি। তা ছাড়া, ছিল ৯১টি হাতঘড়ি, যার মূল্য প্রায় ১৬ লক্ষ টাকা। তদন্ত-রিপোর্টে বলা হয়েছিল, জয়ললিতার পোয়েজ গার্ডেনের বাড়ি থেকে আটক হওয়া সোনা-হিরের গয়নার দাম প্রায় ৫ কোটি ৫৩ লক্ষ টাকা। রুপোর বাসনের দাম প্রায় ৪৯ লক্ষ টাকা। এই তদন্ত রিপোর্ট অবশ্য প্রায় ২০ বছর আগের।
ওই সব সোনা-হিরের গয়নার দাম এখন কত? দু’বছর আগে জয়ললিতা নিজে নির্বাচন কমিশনে হলফনামায় জানিয়েছিলেন, তাঁর ২১.২৮ কিলোগ্রাম সোনার গয়না কর্নাটক সরকারের ট্রেজারিতে বন্দি। আয়ের সঙ্গে সঙ্গতিহীন সম্পত্তির মামলায় ওই সব গয়না আটক করা হয়েছে। কাজেই ওই গয়নার দাম ঠিক করা তাঁর পক্ষে সম্ভব নয়। তবে তাঁর কাছে ১২৫০ কিলোগ্রাম রুপোর বাসন রয়েছে। যার বাজারদর ৩ কোটি ১২ লক্ষ টাকা।
আয়ের সঙ্গে সঙ্গতিহীন সম্পত্তির ওই মামলাতেই মঙ্গলবার রায় দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। আদালতের নির্দেশ, ১০০ কোটি টাকার জরিমানা জয়ললিতার সম্পত্তি বেচেই তুলতে হবে। ১৯৯১ থেকে ১৯৯৬— মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে জয়ললিতা তাঁর প্রথম শাসনকালে ৬৬.৬৫ কোটি টাকার বেআইনি সম্পত্তি জড়ো করেছিলেন বলে আদালতের রায়। যার মধ্যে রয়েছে জয়ললিতা-শশিকলার মালিকানাধীন ৬টি সংস্থার নামে থাকা সমস্ত স্থাবর সম্পত্তি এবং বাজেয়াপ্ত হওয়া অলঙ্কার, ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে থাকা ফিক্সড ডিপোজিট, নগদ ও শেয়ার।
আরও পড়ুন:
অথচ ওই সময়ে জয়ললিতা মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে সরকারি কোষাগার থেকে মাত্র ১ টাকা করে বেতন নিতেন। তার মধ্যে আবার তিনি ২৭ টাকা আয়করও মিটিয়েছিলেন! এখন এই সব বেআইনি সম্পত্তি, গয়না বেচেও যদি ১০০ কোটি টাকার জরিমানা না ওঠে, তা হলে জরিমানা আদায় করতে কোডানাড় চা-বাগানের মতো অন্যান্য সম্পত্তিতে হাত পড়বে।
আইনজীবীদের মতে, ওই ১০০ কোটি টাকা জরিমানা দেওয়ার পরেও আম্মার যে সম্পত্তি পড়ে থাকবে, তার পরিমাণও নেহাত কম নয়। দু’বছর আগে জয়ললিতা নির্বাচন কমিশনকে দেওয়া হলফনামায় জানিয়েছিলেন, তাঁর মোট সম্পত্তির পরিমাণ ১১৩.৭৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে স্থাবর সম্পত্তির পরিমাণ ৭২.০৯ কোটি টাকা। যার মধ্যে রয়েছে পোয়েজ গার্ডেনের ‘ভেদা নিলয়ম’ বাংলো। যার বাজারদর প্রায় ৪৪ কোটি টাকা। তার সঙ্গে রয়েছে তামিলনাড়ু, তেলঙ্গানায় বহু একর জমি। ওই হলফনামায় ৪০ লক্ষ টাকা দামের দু’টি টয়োটা প্রাদো গাড়ি-সহ আটটি গাড়িরও হিসেব দিয়েছিলেন জয়ললিতা। যাদের তখনকার বাজারদর ছিল প্রায় ৮২ লক্ষ টাকা।
আইনজীবীদের বক্তব্য, ১০০ কোটি টাকা জরিমানা মেটানোর পরেও জয়ললিতার যে সম্পত্তি পড়ে থাকবে, তা তাঁর ভাইঝি-ভাইপোরা দাবি করতে পারেন। জয়ললিতার নিজের স্বামী-সন্তান না থাকায়, তাঁর ভাই-বোন বা তাঁদের ছেলেমেয়েরাই এখন প্রয়াত আম্মার সম্পত্তির উত্তরাধিকারী। তবে জয়ললিতা উইল করে কারও নামে কিছু সম্পত্তি লিখে গিয়েছেন কি না, তা-ও দেখার।