শপথগ্রহণের মঞ্চে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।
বিহারের মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে বৃহস্পতিবার দশম বার শপথ নিয়েছেন নীতীশ কুমার। নীতীশের সঙ্গেই শপথ নিয়েছেন আরও ২৬ জন মন্ত্রী। তবে ২৭ জনের বিহারের এনডিএ মন্ত্রিসভায় সংখ্যাধিক্য রয়েছে বিজেপির-ই।
পটনার গান্ধী ময়দানে বড় আকারে সমাবেশ করে শপথ নিয়েছেন নীতীশ। তিনি ছাড়া তাঁর দলের (জেডিইউ) টিকিটে জেতা আরও আট জন মন্ত্রী হিসাবে শপথ নিয়েছেন। অন্য দিকে বিজেপির টিকিটে জেতা ১৪ জন শপথ নিয়েছেন নীতীশের মন্ত্রিসভার সদস্য হিসাবে। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন দুই উপমুখ্যমন্ত্রী সম্রাট চৌধরি এবং বিজয় সিংহ। ফলে মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ হলেও তাঁর মন্ত্রিসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠ বিজেপি-ই। তা ছাড়া এলজেপি (রামবিলাস)-এর বিধায়ক সঞ্জয় কুমার, সঞ্জয় কুমার সিংহ এবং আরএলএম-এর দীপক প্রকাশকে মন্ত্রিসভায় জায়গা দেওয়া হয়েছে। হাম থেকে মন্ত্রিসভায় জায়গা পেয়েছেন এক জন।
বিহারের মোট বিধানসভা আসন ২৪৩টি। নির্বাচনে বিজেপি পেয়েছিল ৮৯টি, জেডিইউ ৮৫টি, এলজেপি (রামবিলাস) ১৯টি এবং আরএলএম পায় ৪টি আসন। তা ছাড়া হিন্দিবলয়ের এই রাজ্যে বিধানপরিষদও রয়েছে। বিহারে মন্ত্রিসভার সর্বোচ্চ সংখ্যা হতে পারে ৩৬। ফলে আরও ৯ জনকে মন্ত্রিসভায় জায়গা দেওয়ার রাস্তা খোলা রাখল এনডিএ। পরে মন্ত্রিসভার সম্প্রসারণ হতে পারে।
আরজেডি এবং কংগ্রেসের জোট থেকে ২০২৪ সালে বেরিয়ে এসেছিলেন নীতীশ। লোকসভা ভোটের চার মাস আগে বিজেপির সমর্থন নিয়ে সরকার গড়েছিলেন। সেই মন্ত্রিসভাতেও নীতীশের দলের চেয়ে বিজেপির সদস্য সংখ্য ছিল বেশি। গত মন্ত্রিসভায় জেডিইউর মন্ত্রী ছিলেন ১৩ জন। আর বিজেপির ১৯ জন। এ বার দুই দলেরই সংখ্যা কমেছে। তার কারণ চিরাগ পাসোয়ান, জিতনরাম মাঝিঁর দলের মতো ছোট দলকেও জোট রক্ষায় মন্ত্রিসভায় জায়গা দিতে হয়েছে।
প্রাথমিক ভাবে বিজেপির তরফে বলা হয়েছিল, ৬:১ সূত্রে মন্ত্রিসভা গঠন করা হবে। অর্থাৎ এনডিএ-র প্রতিটি দলের ৬ জন বিধায়ক প্রতি এক জন মন্ত্রী হবেন। সেই সূত্র যে মানা হয়নি তা সংখ্যাতেই স্পষ্ট। তবে মন্ত্রিসভা সম্প্রসারণের ক্ষেত্রে সেই সূত্রেই এগোতে পারে পদ্মশিবির। রাজনৈতিক মহলের অনেকের বক্তব্য, জোট ধর্ম পালনের জন্য নীতীশকে ফের মুখ্যমন্ত্রী করলেও দু’জন উপমুখ্যমন্ত্রী এবং মন্ত্রিসভায় সংখ্যাধিক্য রেখে আসলে বিজেপি তাঁকে চাপেই রাখতে চাইল। যদিও এর উল্টো ব্যাখ্যাও রয়েছে। সেই অংশের বক্তব্য, এখনও দফতর বণ্টন বাকি। সেখানে কোন দলের কাকে, কতটা গুরুত্বপূর্ণ দফতর দিচ্ছেন নীতীশ, তা-ও দেখার বিষয়। কারণ, বিজেপি চাইলেই নীতীশকে ‘চাপে’ রাখতে পারবে না। কারণ, কেন্দ্রে নরেন্দ্র মোদীর সরকারে নীতীশের সমর্থন জরুরি।
গত লোকসভা নির্বাচনে ৩০৩ থেকে ২৪০-এ নেমে গিয়েছিল বিজেপি। সেই সরকারে সমর্থন জুগিয়েছে নীতীশের দল জেডিইউ এবং অন্ধ্রপ্রদেশের শাসকদল চন্দ্রবাবু নায়ডুর তেলগুদেশম পার্টি। যা বিরোধীরা প্রায়ই বলেন, তৃতীয় মেয়াদে মোদী সরকারকে হাঁটতে হচ্ছে ক্রাচে ভর করে। নীতীশ এবং চন্দ্রবাবুর দলের সমর্থনের পরে অনেকেরই ধারণা ছিল, কেন্দ্রে গুরুত্বপূর্ণ দফতর পেতে পারেন জেডিইউ এবং টিডিপি সাংসদেরা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা হয়নি। অর্থ, প্রতিরক্ষা, স্বরাষ্ট্র, রেল, সড়কের মতো দফতরগুলি বিজেপি নিজের হাতেই রেখেছে। বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত নতুন মন্ত্রিসভার দফতর বণ্টনের বিষয়ে কিছু জানা যায়নি। বিহারে দফতর বণ্টনের ক্ষেত্রে বিজেপির জন্য নীতীশ কতটা উদার হন, বা আদৌ হবেন কি না, সে দিকেও নজর রয়েছে রাজনৈতিক মহলের।