ফাঁকা মাঠে গোল, নাকি লালকার্ড

সুষমার যুক্তি সড়কে নেমে ওড়াল কংগ্রেস

আপাতদৃষ্টিতে মনে হয়েছিল যেন ফাঁকা মাঠে গোল! বিরোধীশূন্য লোকসভায় দাঁড়িয়ে ললিত মোদীকে ভিসা দেওয়ার অনুরোধের বিষয়টি নিয়ে আবেগঘন সওয়াল। যুক্তি দিয়ে বলা, ললিত মোদী নন, মানবিকতার স্বার্থে তাঁর অসুস্থ স্ত্রীকে সাহায্য করেছেন তিনি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৭ অগস্ট ২০১৫ ০২:৫১
Share:

আপাতদৃষ্টিতে মনে হয়েছিল যেন ফাঁকা মাঠে গোল! বিরোধীশূন্য লোকসভায় দাঁড়িয়ে ললিত মোদীকে ভিসা দেওয়ার অনুরোধের বিষয়টি নিয়ে আবেগঘন সওয়াল। যুক্তি দিয়ে বলা, ললিত মোদী নন, মানবিকতার স্বার্থে তাঁর অসুস্থ স্ত্রীকে সাহায্য করেছেন তিনি। নিজের সওয়ালে প্রধান বিরোধী দলের নেত্রীকেও বিঁধে বলা যে, আমার জায়গায় আপনি থাকলে কী করতেন? ওঁকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিতেন?

Advertisement

বিরোধীদের লাগাতার আক্রমণের মুখে দাঁড়িয়ে এক সঙ্গে অনেক পাখি মারতে চাইলেন মরিয়া বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ। কিন্তু তাতে লাভ হল কোথায়!

সংসদ বিরোধীশূন্য হলেও রাজনীতির মাঠে কিন্তু বিদেশমন্ত্রীর সামনে ফাঁকা গোলপোস্ট রাখেনি প্রধান বিরোধী পক্ষ কংগ্রেস। কংগ্রেস নেতারা কটাক্ষের সুরেই বলছেন, সুষমা গোল করবেন কী? উনি নিজেই তো ‘লাল কার্ড’ দেখে বসে রয়েছেন! আজই সংসদের বাইরে ধর্না মঞ্চে নাগা চুক্তি নিয়ে সরব হওয়ার ফাঁকে কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গাঁধী আরও একবার নরেন্দ্র মোদী সরকারের ‘ঔদ্ধত্য’ নিয়ে সরব হয়েছেন। লোকসভায় তাদের ২৫ সাংসদের সাসপেনশনের মেয়াদ শেষ হচ্ছে কাল। সোমবার থেকে লোকসভায় ফের ঝড় তুলতে তৈরি হচ্ছে কংগ্রেস।

Advertisement

তার আগেই অবশ্য শুক্রবার রাজ্যসভার প্রস্তুতি সেরে ফেলছে তারা। তৈরি বিজেপিও। আগামিকাল রাজ্যসভায় সব সাংসদকে হাজির থাকতে হুইপ জারি করেছে দু’দলই। কংগ্রেসের বক্তব্য, শুক্রবার সাধারণত ‘প্রাইভেট মেম্বার বিল’ নিয়ে আলোচনা হয়। কিন্তু বিরোধীদের অনুপস্থিতির সুযোগ নিয়ে সরকার পক্ষ আগামিকাল কিছু বিল পাশ করানোর চেষ্টা করতে পারে। অন্য দিকে বিজেপি সূত্রের খবর, বিতর্কিত নয় এমন কিছু বিল পাশ করাতে চাইছে সরকার। তাতে সফল হলে জিএসটি বিল নিয়ে ফের আসরে নামা হবে।

এ দিন লোকসভায় এসে ‘গ্রহের দশা’র কথা বলে, ‘রামচরিতমানস’ আউড়ে, ‘অসুস্থকে সাহায্য করা যদি অপরাধ, তা হলে আমি অপরাধ করেছি, তার জন্য সাজা ভুগতেও রাজি’ জাতীয় সংলাপের আশ্রয় নিয়ে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুবর্ণ সুযোগটি হাতছাড়া করতে চাননি সুষমা। কুড়ি মিনিটের নিখুঁত বুনোটে বিদেশমন্ত্রীর আবেগঘন বক্তৃতায় একই সঙ্গে ছিল সনিয়াকেও আক্রমণ। সুষমার কথায়, ‘‘ললিত মোদীর স্ত্রী নির্দোষ, কোনও আইন ভাঙেননি। আমি সনিয়া গাঁধীকে প্রশ্ন করতে চাই, আমার জায়গায় থাকলে উনি কী করতেন?’’ সুষমার এ দিনের বক্তব্যের সারমর্ম হল, তিনি ললিত মোদীকে ছাড়পত্র দেওয়ার কোনও অনুরোধ বা সুপারিশ ব্রিটিশ সরকারকে করেননি। যেটি বলেছেন, এর জন্য দু’দেশের সম্পর্কে ফারাক পড়বে না। আইন মেনেই ললিত মোদীকে ছাড় দিয়েছে ব্রিটেন।

‘ভাবমূর্তির লড়াই’-এ এগিয়ে থাকতেই বিরোধীশূন্য লোকসভায় সুষমাকে দিয়ে সওয়াল করানোর ঝুঁকি নিল বিজেপি। যাতে সোমবার থেকে সংসদে এসে আর ইস্তফার দাবি নয়, সুষমার বক্তব্য নিয়েই আলোচনা করতে পারে কংগ্রেস-সহ বিরোধীরা। কিন্তু তা যে হবে না, তা স্পষ্ট করে দিয়েছে কংগ্রেস। তা ছাড়া এই মুহূর্তে সড়কে নেমে হট্টগোল করা ও বিজেপি-বিরোধী আন্দোলনেই বেশি লাভ। তাই নেতারা টিভির পর্দায় দেখে সুষমার বক্তব্যের ফাঁকগুলি নিমেষে জরিপ করে ফেলেছেন।

আনন্দ শর্মা বলছেন, ‘‘বিদেশমন্ত্রীর বিবৃতি শুধু খারিজ করছি না, ছিঁড়ে কুটি কুটি করে ফেলতে চাইছি!’’ কেন? ‘‘মানবিকতার যুক্তি খাটছে কোথায়? বিদেশমন্ত্রীর কীসের এত স্বার্থ?’’ লিবিয়ায় আটকে পড়া ভারতীয়কে সাহায্য করলে যে বিদেশমন্ত্রী টুইট করে জানাতে খামতি রাখেন না, তিনি কেন লন্ডনে নিযুক্ত ভারতীয় রাষ্ট্রদূত, বিদেশসচিব ও প্রধানমন্ত্রীর থেকে ললিত মোদীর বিষয়টি গোপন করেছিলেন? মানবিকতা এত গোপনে কেন?

একগুচ্ছ ছবিও এ দিন সামনে এনেছে কংগ্রেস। ভেনিস, ব্যাঙ্কক, মন্টিনেগ্রোতে ললিত মোদী ও তাঁর স্ত্রীর ঘুরে বেড়ানোর ছবি। কংগ্রেসের দাবি, এ সবই ব্রিটিশ সরকারের ছাড়পত্র পাওয়ার পরের। কংগ্রেসের অভিযোগ, সুষমার সুপারিশের ভিত্তিতেই ললিত মোদীকে ভিসা দেয় ব্রিটিশ সরকার। সুষমা নিজের বক্তব্যে ললিত মোদীর স্ত্রী-র অসুখের কারণকে ঢাল করলেও প্রাক্তন ওই ক্রিকেট-কর্তা কিন্তু ভিসার আবেদনে অন্য কারণ দেখিয়েছিলেন! ললিত মোদীর তালিকায় প্রথমে ছিল সেসলসের রাষ্ট্রপতির নিমন্ত্রণ, বোনের বিয়ে এবং শেষ কারণ হিসেবে স্ত্রীর চিকিৎসা! দেখা যায়, ভিসা পাওয়ার দু’দিন পর স্পেনের বিলাসবহুল রিসর্টে সস্ত্রীক ছুটি কাটিয়েছেন ললিত। কংগ্রেসের বক্তব্য, স্ত্রীর চিকিৎসার বিষয়টি আদৌ গুরুতর ছিল না। ব্রিটিশ ভিসা পাইয়ে দেওয়ার বদলে সুষমা তাঁকে ভারতের ভিসার ব্যবস্থা করতে পারতেন!

বিজেপি কী বলছে? বিরোধীশূন্য সংসদে দাঁড়িয়ে সুষমার বক্তব্যে যতই আবেগ থাক, তা যে বিশেষ দাগ কাটতে পারেনি, তা ভালই বুঝেছে তারা। এই অবস্থায় দলের নেতারা বলছেন, ‘‘ভাল তো! তবে কংগ্রেস এই প্রশ্নগুলিই সংসদে এসে করুক। বিদেশমন্ত্রী আবার জবাব দেবেন।’’

কিন্তু সে কথা শুনছে কে?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন