বিহারে যা-ই ঘটুক, অমিতই সভাপতি পদে

বিহারে ভোটের ফল যা-ই হোক, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তথা বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, দলের সভাপতি পদ থেকে অমিত শাহকে সরানো হবে না। কেন্দ্রে মন্ত্রী হওয়ায় মেয়াদের মাঝপথে দলের সভাপতি পদ থেকে সরতে হয়েছিল রাজনাথ সিংহকে।

Advertisement

জয়ন্ত ঘোষাল

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০২ নভেম্বর ২০১৫ ০৩:০৯
Share:

বিহারে ভোটের ফল যা-ই হোক, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তথা বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, দলের সভাপতি পদ থেকে অমিত শাহকে সরানো হবে না। কেন্দ্রে মন্ত্রী হওয়ায় মেয়াদের মাঝপথে দলের সভাপতি পদ থেকে সরতে হয়েছিল রাজনাথ সিংহকে। সে সময় দায়িত্ব নেন অমিত। তাঁর সভাপতিত্বের মেয়াদ ফুরোচ্ছে ডিসেম্বরে। সঙ্ঘ পরিবারও সিদ্ধান্ত নিয়েছে, আগামী দু’টি মেয়াদের জন্য অর্থাৎ পরবর্তী ছ’বছর অমিতই দলের কান্ডারি থাকবেন।

Advertisement

সুষমা স্বরাজ, রাজনাথ সিংহ এবং নিতিন গডকড়ী দলের সভাপতি বদলের জন্য ভিতরে-ভিতরে একজোট হচ্ছেন, এমন জল্পনা ছিল। এই ত্রয়ীকে একজোট করতে লালকৃষ্ণ আডবাণীর একটি প্রচ্ছন্ন সমর্থন কাজ করেছে বলেও কেউ কেউ অভিযোগ করেছেন আরএসএসের কাছে। তবে প্রধানমন্ত্রী সম্প্রতি ঘনিষ্ঠ মহলে স্পষ্ট করে দিয়েছেন, নির্বাচনে হার-জিতের সঙ্গে দলের দায়িত্বে অমিতের থাকা না থাকা নির্ভর করছে না। কেননা, তাঁর কাজকর্মে তিনি সন্তুষ্ট। সন্তুষ্ট নাগপুরের আরএসএস-ও। অতএব দলের পরবর্তী রণকৌশল কী হবে, সেটি নিয়ে আলোচনা হতে পারে। অসম বা পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচনে দলের অভিমুখ কী হবে, তা নিয়ে নতুন সিদ্ধান্ত হতে পারে। কিন্তু দলের সভাপতি পরিবর্তন করা হবে না। বিজেপি সূত্র বলছে, গডকড়ী সম্প্রতি দিল্লিতে তাঁর একটি বই প্রকাশের অনুষ্ঠানে শুধুমাত্র রাজনাথকে নিমন্ত্রণ করেছিলেন। কিন্তু তা নিয়ে গোষ্ঠী রাজনীতির আবহ তৈরির আশঙ্কায় শেষ মুহূর্তে তিনি অমিতকেও আমন্ত্রণ জানান। এবং অমিত হাজিরও হয়ে যান।

অমিতের মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী রাজ্য সংগঠনগুলিরও মেয়াদ শেষ হয়ে যাবে। ফলে দ্বিতীয় দফায় দায়িত্ব নিয়েই দলকে নতুন ভাবে সাজানোর সুযোগ পাবেন অমিত। এই সুযোগে তিনি রাজ্যগুলির সভাপতি বদল করতে পারেন। এ ছাড়া, প্রধানমন্ত্রী নিজেও ডিসেম্বরে সংসদের অধিবেশন বসার আগে বা পরে মন্ত্রিসভায় রদবদল করে সরকারের কাজে একটা ঝাঁকুনি দিতে পারেন। কিছু মন্ত্রীকে সংগঠনের কাজে পাঠিয়ে কয়েক জনকে মন্ত্রিসভায় নিয়ে আসতে পারেন।

Advertisement

সাত দিন পরেই বিহার ভোটের ফল বেরোবে। তার আগে বহু মন্ত্রীই এখন উদ্বেগে দিন কাটাচ্ছেন। কিছু দিন আগে মন্ত্রিসভার বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী সকলের সামনে রবিশঙ্কর প্রসাদকে কড়া ভাষাতেই বকুনি দিয়েছিলেন। মোবাইল ফোনে ‘কল ড্রপ’-এর প্রসঙ্গে তিনি জানিয়ে দেন, এই সমস্যার সমাধান না করতে পারলে অন্য কাউকে দায়িত্ব নিতে হবে। যদিও প্রধানমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ মহল বলছে, একটি বিশেষ বিষয়ের জন্য প্রধানমন্ত্রী বকাবকি করলেই যে মন্ত্রিসভা থেকে কাউকে সরিয়ে দেওয়া হবে, এমনটা ভাবা ঠিক নয়। রেলমন্ত্রী সুরেশ প্রভু কাজ ভাল করলেও শারীরিক ভাবে বেশ অসুস্থ। তাঁকে কোনও লঘু মন্ত্রক দিয়ে রেলে কোনও নতুন মুখ আনা নিয়েও আলোচনা হচ্ছে। সুষমা, মহেশ শর্মা, ভি কে সিংহের মতো অনেক মন্ত্রীই উদ্বেগে রয়েছেন তাঁদের মন্ত্রক নিয়ে। প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয় সূত্র অবশ্য বলছে, জল্পনার ঘুড়ি ওড়ানো তাঁদের কাজ নয়। প্রধানমন্ত্রী কবে মন্ত্রিসভার রদবদল করবেন, কাকে সরানো হবে বা আনা হবে— তা প্রধানমন্ত্রী ছাড়া আর কেউই জানেন না।

বিবার ভোটের মুখে আরএসএস-প্রধান মোহন ভাগবত সংরক্ষণ নিয়ে যে কথা বলেছিলেন, সেটি সময়োচিত নয় বলে বিজেপির অনেক নেতা মনে করছেন। তবে এ বারের বিহার নির্বাচনে এটাও স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে, সাংগঠনিক ভাবে বিজেপি আরএসএসের উপর ভীষণ ভাবে নির্ভরশীল। বিহার ভোটের ফল বেরনোর পরে বিজেপির রাজনীতিতে মূলত তিনটি সম্ভাবনা থাকছে। এক, পটনায় বিজেপি যদি জেতে, তা হলে আরএসএস দাবি করবে, তাঁদের মেরুকরণের রাজনীতি সফল হয়েছে। তখন গোটা দেশে এই কৌশল প্রয়োগের জন্য বিজেপির উপর আরএসএসের প্রবল চাপ থাকবে। বিশেষ করে অসমের জন্য এই রাজনৈতিক লাইনকেই আরও জোরালো ভাবে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকবে। দুই, বিহারে হারলে গোটা দেশেই মেরুকরণের রাজনীতি চালিয়ে যাওয়ার জন্য সঙ্ঘের তরফে চাপ তুলনামূলক ভাবে কমে আসার সম্ভাবনা। যদিও বিহারে হার-জিত যা-ই হোক না কেন, অসমের নির্বাচনে আরএসএসের মেরুকরণের রাজনীতি থেকে সরে আসা বিজেপির পক্ষে সম্ভব হবে না বলেই অনেকে মনে করছেন। কেননা, অসমের ভোটে সঙ্ঘের সঙ্গে সংঘাতের পথে যাওয়ার কথা বিজেপির পক্ষে ভাবা সম্ভব নয়।

তিন, বিহারে বিজেপি যদি হারে, তবে মোদী সঙ্ঘ পরিবারের পছন্দসই মেরুকরণের রাজনীতিকে ত্যাগ করে আর্থিক সংস্কার, পাকিস্তানের সঙ্গে সম্প্রীতির মতো বিষয়গুলি নিয়ে এগোনোর রাজনৈতিক পরিসর পাবেন। সেটি তিনি ব্যবহার করবেন কি না, সেটাও দেখার বিষয়।

এই মুহূর্তে মোদী সরকার বাম ও ধর্মনিরপেক্ষ নাগরিক সমাজ ও সাহিত্যিকদের আক্রমণের মুখোমুখি। বিহার ভোটের পরে একে প্রতিহত করতে মোদী কী করবেন, তা নিয়েও জল্পনা থাকছে। পাল্টা জবাব দিতে মোদী-অমিত জুটি কি বিশিষ্ট জনেদের সংগঠিত করে তুলবেন? নাকি মেরুকরণের বদলে বহুত্ববাদী লাইন নেবেন মোদী? ভবিষ্যৎ রণকৌশল তৈরির লক্ষ্যে আপাতত অমিত ও ভাগবতের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা চালাচ্ছেন মোদী।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন