জ্যোতি মলহোত্রা এবং ‘ম্যাডাম এন’। — ফাইল চিত্র।
ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনার পরিস্থিতিতে গত এক মাসে ধরা পড়েছেন একের পর এক ‘গুপ্তচর’! এঁদের কেউ নেটপ্রভাবী, কেউ আবার সরকারি আধিকারিক। এঁরা সকলেই পাকিস্তানের কাছে ভারতের নিরাপত্তা সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ ও সংবেদনশীল তথ্য পাচার করতেন বলে অভিযোগ। সেই আবহে এ বার খোঁজ মিলল ‘ম্যাডাম এন’-এর। পাকিস্তানের লাহোরের ওই ব্যবসায়ীর কাজই ছিল ভারতের নেটপ্রভাবীদের ফুঁসলিয়ে পাকিস্তানের চর বানানো, অভিযোগ এমনটাই।
‘ম্যাডাম এন’-এর বিষয়টি প্রকাশ্যে এসেছে সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি-র একটি প্রতিবেদনে। জানা গিয়েছে, ওই মহিলার পুরো নাম নোশাবা শেহজ়াদ। পাকিস্তানের লাহোরে একটি ভ্রমণ সংস্থার কর্ণধার তিনি। তাঁর সূত্র ধরেই পাকিস্তান ভ্রমণে গিয়েছিলেন ধৃত ভারতীয় নেটপ্রভাবীরা। এনডিটিভি-র ওই প্রতিবেদনের দাবি, নোশাবা পাকিস্তানের গুপ্তচর সংস্থা আইএসআই-এর অধীনে কাজ করতেন। আইএসআই-এ তাঁর সাঙ্কেতিক নাম ‘ম্যাডাম এন’! সম্প্রতি গ্রেফতার হওয়া ভারতীয় নেটপ্রভাবী জ্যোতি মলহোত্রার মতো আরও অনেককেই পাকিস্তান ভ্রমণে সাহায্য করেছিলেন তিনি। ধৃতদের জেরায় একাধিক বার এই রহস্যময়ীর নাম উঠে এসেছে বলে সূত্রের খবর। আরও জানা গিয়েছে, ‘ম্যাডাম এন’ অন্তত ৫০০ জন গুপ্তচরের একটি ‘স্লিপার সেল’ তৈরির চেষ্টা করছিলেন, যাতে তাঁরা ভারতের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে গোপন খবর পাকিস্তানে পাঠাতে পারেন। এ জন্য প্রথমেই ভারতের নেটপ্রভাবীদের পাকিস্তানে যাওয়ার ব্যবস্থা করে দিতেন নোশাবা। তার পর ধীরে ধীরে তাঁদের পাক সেনা এবং আইএসআইয়ের আধিকারিকদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতেন। এ ভাবে গত ছ’মাসে নোশাবা প্রায় ৩,০০০ ভারতীয় নাগরিক এবং ১,৫০০ অনাবাসী ভারতীয় (এনআরআই)-কে পাকিস্তান ভ্রমণে সহায়তা করেছিলেন বলে অভিযোগ।
জানা গিয়েছে, দিল্লিতে অবস্থিত পাকিস্তানি দূতাবাসের ভিসা বিভাগের সঙ্গেও নোশাবার যোগাযোগ ছিল। সেখানকার ফার্স্ট সেক্রেটারি (ভিসা) সোহেল কামার এবং কাউন্সিলর (বাণিজ্য) উমর শেরিয়ারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রেখেছিলেন নোশাবা। কেবলমাত্র নোশাবার একটি ফোনের ইশারায় যে কোনও ব্যক্তির ভিসা পাকা হয়ে যেত বলে সূত্রের খবর। ‘ম্যাডাম এন’-এর অঙ্গুলিহেলনেই ভারতীয় নাগরিকদের পাকিস্তানে যাওয়ার ‘ভিজিটর ভিসা’ প্রদান করত পাকিস্তানি হাই কমিশন। এই পদ্ধতিতে যাঁরা পাকিস্তানে যেতেন, তাঁদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ আদায় করতেন নোশাবা। পুরো টাকাটাই যেত পাকিস্তানের হয়ে প্রচারের কাজে। শুধু তা-ই নয়, আইএসআইয়ের সক্রিয় সদস্য দানিশ ওরফে এহসান-উর-রহমানের সঙ্গেও যোগাযোগ ছিল নোশাবার। এ সব তথ্য প্রকাশ্যে আসার পরেই সক্রিয় হয়েছেন তদন্তকারীরা। ‘ম্যাডাম এন’-এর সাহায্যে আরও কোনও ভারতীয় পাকিস্তানে গিয়েছিলেন কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।