ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেনকে ঘিরে জোটবদলের জল্পনা। ছবি: পিটিআই।
ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেন কি বিরোধী জোট থেকে বিজেপি-র জোটে শামিল হবেন? গত ৪৮ ঘণ্টা ধরে দিল্লির রাজনীতিতে যখন এ হেন জল্পনা তৈরি হয়েছে, তখন তাতে আরও বাতাস দিলেন ঝাড়খণ্ডেরই রাজ্যপাল সন্তোষ গঙ্গোয়ার। মঙ্গলবার তিনি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গে ‘সৌজন্য সাক্ষাৎ’ করেছেন। কোনও রাজ্যে ‘অপারেশন লোটাস’ হওয়ার আগে সংশ্লিষ্ট রাজ্যের রাজ্যপালের দিল্লিযাত্রা এবং শাহের সঙ্গে সাক্ষাৎ গত এক দশকে জাতীয় রাজনীতিতে পরিচিত দৃশ্য। সেই সূত্রেই অনেকে মনে করছেন, তলায় তলায় জল অনেক দূর গড়িয়ে গিয়েছে। যে ধারণাকে দৃঢ় করছে স্বয়ং হেমন্তের ‘নীরবতা’। যিনি গত কয়েক দিন ধরে দিল্লিতেই রয়েছেন।
গত কয়েক দিন ধরেই দেশের রাজধানীতে খবর (একাধিক হিন্দি দৈনিক খবরটি করেওছে), দিল্লি পৌঁছে হেমন্ত এবং তাঁর সাংসদ স্ত্রী কল্পনা সোরেন বিজেপির শীর্ষনেতাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। সেই জল্পনার মধ্যেই রাজ্যপালের দিল্লিযাত্রা নতুন মাত্রা যোগ করেছে। বুধবার রাতে বা বৃহস্পতিবার দিল্লি থেকে রাঁচীতে ফিরতে পারেন সস্ত্রীক হেমন্ত। দিল্লিতে যখন হেমন্তকে নিয়ে জল্পনা চলছে, তখন আবার রাঁচীতে কংগ্রেসের বিধায়কদের গোষ্ঠী-বৈঠক শোরগোল ফেলে দিয়েছে।
খনি দুর্নীতি মামলায় ইডির হাতে গ্রেফতার হয়েছিলেন হেমন্ত। জেল থেকে বেরিয়ে এসে ভোটে জিতে বিজেপিকে বিপুল ভাবে পরাজিত করে আবার ঝাড়খন্ডের কুর্সিতে বসেছেন তিনি। ৮১ আসন বিশিষ্ট ঝাড়খণ্ড বিধানসভায় সরকার গড়ার জাদুসংখ্যা ৪১। গত নির্বাচনে হেমন্তের ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চা জিতেছিল ৩৪টি আসনে। কংগ্রেস জেতে ১৬টিতে। আরজেডি এবং বামেরা মিলে জেতে ৬টি আসন। বিরোধী জোটের সমর্থন নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী হন হেমন্ত। বিজেপির হাতে রয়েছে ২১টি আসন। হেমন্ত কংগ্রেসের জোট ছেড়ে বেরিয়ে এলেও অঙ্ক অনুযায়ী তিনিই মুখ্যমন্ত্রী হতে পারেন বিজেপির সমর্থন নিয়ে। কিন্তু ঝাড়ঘণ্ডের রাজনীতিতে শোরগোল ফেলেছে কংগ্রেসের ভূমিকা। ‘হাত’ শিবিরের হাতে থাকা ১৬ জন বিধায়কের মধ্যে ৮ জন বৈঠক করেছেন হেমন্তের দলের এক নেতার সঙ্গে। নিয়ম অনুযায়ী আরও তিন জন কংগ্রেস বিধায়ক এই আট জনের সঙ্গে যোগ দিলে ১১ জন বিধায়ক মিলেমিশে ভিন্ন জোটে শামিল হলে তাঁদের বিরুদ্ধে দলত্যাগ বিরোধী আইনও কার্যকর করা যাবে না।
গত প্রায় তিন সপ্তাহ ধরে বিজেপি-র মধ্যে হেমন্তের ‘মনবদল’ এবং ঝাড়খণ্ডের ওলটপালটের সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা চলছিল। সূত্রের খবর, সেই সলতে পাকতে শুরু করেছিল বিহারের নির্বাচনের মধ্যেই। মধুবনী জেলায় হেমন্তের দলের এক শীর্ষনেতার সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন সর্বভারতীয় বিজেপির এক নেতা। বিজেপি সূত্রে খবর, হেমন্ত সেই নেতাকে তাঁর ‘দূত’ হিসাবেই পাঠিয়েছিলেন। রাঁচীতে যে এ হেন মন্থন চলছে, সে সম্পর্কে ওয়াকিবহাল ছিলেন কলকাতার হাতে গোনা কয়েকজন বিজেপি নেতা। সূত্রের খবর, হেমন্ত বিজেপিকে শর্ত দিয়েছেন, তিনি স্ত্রী কল্পনাকে কেন্দ্রে মন্ত্রী করতে চান। অর্থাৎ, স্বামী রাজ্যে এবং স্ত্রী দিল্লিতে ক্ষমতাসীন থাকবেন। সেই শর্ত বিজেপি আদৌ মানবে কি না, তা নিয়ে অবশ্য প্রশ্ন রয়েছে।
বুধবার সন্ধ্যা পর্যন্ত সমগ্র বিষয়টি জল্পনার স্তরেই রয়েছে। তবে শেষ পর্যন্ত যদি ঝাড়খণ্ডের ক্ষমতায় জোটবদল হয়, তা হলে পশ্চিমবঙ্গ হয়ে উঠবে আক্ষরিক অর্থেই বিজেপি ঘেরা দ্বীপের মতো। কারণ, আশপাশের সব রাজ্যই চলে যাবে পদ্মশিবিরের দখলে। ওড়িশা, বিহার, অসমের পরে ঝাড়খণ্ডও।