কেউ কট্টর বিরোধী। কেউ গুণমুগ্ধ। নরেন্দ্র মোদীর জন্মদিনে শুভেচ্ছার ঢল নামল উভয় শিবির থেকেই। আজ ৬৮ বছর পূর্ণ হল তাঁর।
রাফাল থেকে বিজয় মাল্য— বিভিন্ন প্রসঙ্গে লাগাতার প্রধানমন্ত্রীকে নিশানা করে যাচ্ছেন রাহুল গাঁধী। আজ জন্মদিনের শুভেচ্ছা বার্তায় তাঁর ‘সুস্বাস্থ্য’ ও ‘সদা সুখ’ কামনা করলেন কংগ্রেস সভাপতি। শুভেচ্ছা বার্তায় এমন বলাই হয়। কিন্তু কিছু দিন আগেই সংসদে আচমকা ‘জাদু কি ঝাপ্পি’ দিয়ে মোদীকে হতচকিত করে দিয়েছিলেন রাহুল। বোঝাতে চেয়েছিলেন মোদীর অহং আর অসহিষ্ণুতার পাল্টা ভালবাসাই তাঁর বিকল্প রাজনীতি। প্রকাশ্যে মন্তব্য না করলেও কংগ্রেসের একাংশ নেতা মোদীর ‘সদা সুখ’ কামনার মধ্যে ‘অসুখী মোদীর প্রতি’ রাহুলের রাজনৈতিক বার্তা দেখতে পাচ্ছেন।
শুভেচ্ছার জবাবে মোদী ধন্যবাদ জানিয়েছেন সকলকেই। তবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের শুভেচ্ছার জবাবে যে ভাবে ‘জি’ না লিখে তিনি মমতা ‘দিদি’-কে ধন্যবাদ জানিয়েছেন— সেটিকে অর্থবহ মনে করছেন অনেকে। আগামী লোকসভা ভোটে মালয়ালি চিত্রতারকা মোহনলালকে কেরলে তাস করতে পারে বিজেপি। তাঁর শুভেচ্ছাকেও রাজনৈতিক ভাবে তাৎপর্যপূর্ণ মনে করা হচ্ছে।
শুভেচ্ছার রাজনীতি থেকে দূরে থাকেননি অরাজনৈতিক ব্যক্তিরাও। চলচ্চিত্র-ক্রীড়া ও অন্যান্য ক্ষেত্রের তারকাদের মধ্যে অক্ষয়কুমার যেমন। তাঁর ‘হৃদয়ের কাছাকাছি বিষয়গুলির পাশে দাঁড়ানোর জন্য’ অক্ষয় ধন্যবাদ জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীকে। বিষয়গুলির সবই তাঁর সাম্প্রতিক ছবি ও সমাজসেবার ক্ষেত্রের সঙ্গে যুক্ত। প্রকাশ্যে শৌচ বন্ধ করা, সস্তায় স্যানিটারি ন্যাপকিন জোগানো ও জওয়ানদের পরিবারের পাশে দাঁড়ানো ইত্যাদি।
অভিবাদন: জন্মদিনে নিজের কেন্দ্র বারাণসীতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তাঁকে স্বাগত জানাচ্ছেন উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। সোমবার। ছবি: পিটিআই।
রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ, উপরাষ্ট্রপতি বেঙ্কাইয়া নায়ডুর পাশাপাশি মোদীকে শুভেচ্ছাবার্তা পাঠিয়েছেন প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়। তাঁর বার্তার একটি অংশ হল, ‘‘আগামী অনেক বছর দেশের সেবা করতে থাকুন।’’ দল নির্বিশেষে অনেকেই প্রণববাবুর বার্তাকে অর্থবহ মনে করছেন। এর আগে নাগপুরে আরএসএসের সভায় গিয়ে কংগ্রেসের অন্দরে আলোড়ন ফেলে দিয়েছিলেন তিনি।
মোদী কী করলেন এ দিন?
লোকসভার ভোট সামনে। এ বারের জন্মদিনটি কাটালেন নিজের নির্বাচনী কেন্দ্র বারাণসীতে। ৫৫৭ কোটি টাকার প্রকল্প উদ্বোধনের পাশপাশি পুজো দিলেন বিশ্বনাথ মন্দিরে। এখানকার নারুর গ্রামে গিয়ে প্রাথমিক স্কুলের শিশুদের সঙ্গে বসে দেখলেন, নিজেরই জীবনের উপরে তৈরি স্বল্প দৈর্ঘ্যের ছবি— ‘চলো জিতে হ্যায় (চলো বাঁচি)’। তার দল সারা দেশে উৎসাহের সঙ্গে পালন করল দিনটি। স্বচ্ছতা-সহ মোদীর শুরু করা বিভিন্ন প্রকল্পের স্তুতিতে বিজেপি দিনভর মুখর রইল রাজ্যে রাজ্যে। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী প্রকাশ জাভড়েকর ও মুখতার আব্বাস নকভি খাওয়ালেন ৫৬৮ কেজির লাড্ডু।
তামিলনাড়ুতে চেন্নাইয়ের শহরতলি তাম্বরমে একটি অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর ছোট ভাই প্রহ্লাদ মোদী। তিনি বলেন, ‘‘গত কাল বালাজি মন্দিরে পুজো দিয়েছি, ঈশ্বর যাতে দাদাকে দেশের উন্নয়নে কাজ করে যাওয়ার শক্তি দেন।’’ বিজেপির তামিলনাড়ু শাখা এ দিন মধ্য চেন্নাইয়ে এক হাসপাতালে জন্মানো সব শিশুকে সোনার আংটি উপহার দিয়েছে। তামিল রাজনীতিতে এমনটা নতুন নয়। গত ফেব্রুয়ারিতে জয়ললিতার জন্মদিনেও এডিএমকে সোনার আংটি উপহার দিয়েছিল সদ্যোজাতদের। চেন্নাই পুরসভা পরিচালিত ওই হাসপাতালে আজ প্রথম যে শিশুটি জন্মেছে, ম অক্ষর দিয়ে তার নাম রাখবেন বাবা সতীশ কুমার। গাড়িচালক সতীশের ইচ্ছা, ছেলেকে ডাক্তার করা। স্বপ্ন, এক দিন এই ছেলেই হোক দেশের প্রধানমন্ত্রী।