খরপোশের মামলায় পর্যবেক্ষণ সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি বিআরগবইয়ের। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।
একটি বিএমডব্লিউ গাড়ি, মুম্বইয়ে একটি বাড়ি এবং নগদ ১২ কোটি টাকা। ১৮ মাসের বিয়ে ভেঙে যাওয়ার পর খোরপোশ হিসাবে প্রাক্তন স্বামীর কাছে এটাই দাবি এক মহিলার। সেই আবেদন শুনে বিস্মিত আদালত। সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি বিআর গবই মামলাকারীর উদ্দেশে বললেন, ‘‘আপনি নিজে এক জন যোগ্য মানুষ। নিজে উপার্জন করুন।’’
মুম্বইয়ের এক দম্পতির বিবাহবিচ্ছেদ হয়েছে কয়েক মাস আগে। তবে দাবি মতো খোরপোশে না-পেয়ে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হন মহিলা। সুপ্রিম কোর্ট প্রশ্ন করেছিল, খোরপোশে ঠিক কী কী চান তিনি? জবাব আসে, ‘‘মুম্বই শহরে একটা বাড়ি। একটা বিএমডব্লিউ গাড়ি। আর ভরণপোষণের জন্য নগদ ১২ কোটি টাকা।’’ যার প্রেক্ষিতে মহিলাকে কিছু প্রশ্ন করেন সর্বোচ্চ আদালতের প্রধান বিচারপতি গবই। তিনি বলেন, ‘‘কল্পতরুতে আপনার একটা বাড়ি তো রয়েছে (খোরপোশে পাওয়া)... খুবই ভাল আবাসনে থাকেন।’’ নথিপত্র ঘেঁটে প্রধান বিচারপতির সংযোজন, ‘‘তথ্যপ্রযুক্তিতে দখল আপনার। এমবিএ ডিগ্রি করেছেন। হায়দরাবাদ, বেঙ্গালুরুর মতো শহরে আপনার মতো পেশাদারের তো বিশাল চাহিদা। আপনি কাজ করেন না কেন?’’
বিপুল অঙ্কের খোরপোশ চাওয়া মহিলা জানান, তাঁর প্রাক্তন স্বামী অনেক বড়লোক। সিটি ব্যাঙ্কের ম্যানেজার। পাশপাশি দুটো ব্যবসা রয়েছে তাঁর। অনেক টাকার মালিক। পাল্টা সওয়ালে মহিলার প্রাক্তন স্বামীর আইনজীবী জানান, তাঁর মক্কেলের প্রাক্তন স্ত্রী-ও তো কাজ করতে পারেন। তিনি যা যা দাবি করছেন, সেগুলো নিজের উপার্জনে করতে পারেন। তখন মহিলা যুক্তি দেন, ডিভোর্সের মামলা তিনি করেননি, করেছেন স্বামী। তিনি বলেন, ‘‘আমি সন্তান চেয়েছিলাম। উনি (প্রাক্তন স্বামী) সন্তান দিতে পারেননি। উল্টে ডিভোর্সের মামলা করেছেন। বলেছেন আমি নাকি সিজ়োফ্রেনিয়ার (মানসিক ব্যাধি। অবাস্তব শব্দ শোনা, অবাস্তব কিছু বিশ্বাস করা ইত্যাদি) রোগী!’’ প্রধান বিচারপতির উদ্দেশে তিনি আরও বলেন, ‘‘ধর্মাবতার, আমার কি সিজ়োফ্রেনিয়া রয়েছে বলে আপনার মনে হয়?’’
এই কথোপকথনের মধ্যে সর্বোচ্চ আদালতের পর্যবেক্ষণ, ভরণপোষণ হিসাবে এত কিছু চাওয়া সমীচীন নয়। আদালত মামলাকারীর প্রাক্তন স্বামীর আয়কর রিটার্নের খতিয়ান দেখেন। ওই যুবকের আইনজীবী জানান, তাঁর মক্কেল এখন চাকরি করেন না। তাই তাঁর আয় কমেছে। এর পর প্রধান বিচারপতি মামলাকারীকে বলেন, ‘‘ওই ফ্ল্যাটটি নিয়ে সন্তুষ্ট থাকুন। নিজে একটা ভাল কাজ খুঁজুন।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘আপনার এত পড়াশোনা। কারও মুখাপেক্ষী হওয়া আপনাকে মানায় না। নিজে খেটে রোজগার করুন।’’
এর পরে মামলা মুলতুবি হয়ে যায়। পরবর্তী শুনানিতে রায় ঘোষণা করতে পারে সুপ্রিম কোর্ট।