৬ ডিসেম্বর হারিয়েছিলেন স্বামী ও ছেলেকে, স্কুল গড়ে জবাব তাহিরার

তাহিরা বলছিলেন, ক্যালেন্ডারে ৬ ডিসেম্বর এগিয়ে এলেই গলার কাছে দলা পাকিয়ে ওঠে কান্না।

Advertisement

ইন্দ্রজিৎ অধিকারী

অযোধ্যা শেষ আপডেট: ০৬ ডিসেম্বর ২০১৯ ০৪:১৯
Share:

জামাই পারভেজ আহমেদের সঙ্গে তাহিরা বেগম। নিজস্ব চিত্র

পনেরো বছরের ছেলের দেহ থেকে ছুরিটা নিজে হাতে টেনে বার করেছিলেন তাহিরা বেগম।

Advertisement

সামান্য দূরেই শিক্ষক স্বামীর দেহ। বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দিয়েছে দুষ্কৃতীরা। ছাদ উড়ে গিয়েছে গ্যাস-সিলিন্ডার বিস্ফোরণে। ১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর বাবরি মসজিদ ধ্বংসের পরে এক দিনে ছারখার হয়ে গিয়েছিল তাহিরার পুরো পরিবার।

তাহিরা কিছুই ভোলেননি। আর ভুলবেন না বলে ঘরের উঠোনে, ছেলে যেখানে তাঁকে ছেড়ে গিয়েছিল, ঠিক সেখানেই মাদ্রাসা-স্কুল চালাচ্ছেন তিনি ও তাঁর জামাই পারভেজ আহমেদ কাসমি। ছেলে খোয়ানোর ২৭ বছর পরে এখন সেখানে সত্তর পড়ুয়ার ‘কিচিরমিচির’। পাশেই ভাড়া নেওয়া বাড়িতে মাথা তুলেছে ইংরেজি মাধ্যমের স্কুলও। যার স্বাধীনতা দিবস পালনের তেরঙা পোস্টারে মন্দির-মসজিদের ছবি পাশাপাশি!

Advertisement

তাহিরা বলছিলেন, ক্যালেন্ডারে ৬ ডিসেম্বর এগিয়ে এলেই গলার কাছে দলা পাকিয়ে ওঠে কান্না। অন্তত তিন-চার দিন বিছানা থেকে উঠতে ইচ্ছে করে না। কিন্তু রাম মন্দির মামলায় সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পরে প্রথম ৬ ডিসেম্বরের আগে অযোধ্যায় ঢুঁ মেরে মনে হল, তাহিরাই সম্ভবত সব তিক্ত স্মৃতি পিছনে ফেলে নতুন শুরুর সেরা বিজ্ঞাপন। সব খুইয়ে বহু কষ্টে আট মেয়েকে মানুষ করা যে ‘একলা-মা’ বাড়ির জমির ভাগ স্কুল গড়তে দেন, তার কোল খালি করা সত্যিই শক্ত। যদিও সে কথা বললে, এর কৃতিত্ব জামাইকে দিচ্ছেন তিনি।

আরও পড়ুন: জেলে মেরুদণ্ড আরও শক্ত হয়েছে বললেন চিদম্বরম

রায়ের পরে প্রথম ৬ ডিসেম্বরে পুলিশ-সিআরপিএফের কড়া পাহারায় অযোধ্যাকে মুড়ে ফেলা হয়েছে দিন তিনেক আগেই। অযোধ্যায় রাম মন্দির ন্যাসের অন্যতম কর্মকর্তা শরদ শর্মার দাবি, “অন্য বার ৬ ডিসেম্বর যে ভাবে শৌর্য দিবস পালিত হয়, এ বার তেমন না-করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। বরং মন্দির যখন এমনিতেই হচ্ছে, শান্তি বজায় রাখাতেই অগ্রাধিকার। তেমন বলেছে প্রশাসনও।” তাই বাড়িতে-বাড়িতে প্রদীপ জ্বলতে পারে, কিন্তু তার বেশি কিছু নয়।

টেরি বাজারে পারভেজের পড়শি হাজি মেহবুব। মসজিদের হয়ে বাবরি-মামলার পক্ষ হওয়ায় বছরভর দুই পুলিশের পাহারা বরাদ্দ তাঁর জন্য। উঠোনে বসে ’৯২-এ মহল্লায় প্রাণ খোয়ানোদের নাম বলে গেলেন তিনি। দেখালেন, কী ভাবে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল তাঁর বাড়িও। মেহবুব বলছিলেন, সে দিনের উন্মত্ত ভিড়ে বাইরের লোক ছিলই। ছিল এমন অনেকেও, যাদের সঙ্গে পথে-বাজারে দেখা হয় প্রায়ই!

তারাও এসেছিল?

জবাবে নীরবতা। সাতাশ বছরের লম্বা সময়ও অনেক প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পায়নি!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন