কাছাড়ে গণনার দায়িত্বে মহিলারা

কমিশন প্রতি বিধানসভা কেন্দ্রে একটি বুথ মহিলা পরিচালিত করতে নির্দেশ দিয়েছিল। সেখানে প্রিসাইডিং অফিসার, পোলিং অফিসার, নিরাপত্তারক্ষী— সবাই ছিলেন মহিলা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শিলচর শেষ আপডেট: ১৭ মে ২০১৬ ০৩:০৮
Share:

নির্বাচন কমিশন মহিলা বুথ তৈরি করেছিল। কাছাড় জেলা প্রশাসন করল মহিলা গণনাকেন্দ্র।

Advertisement

কমিশন প্রতি বিধানসভা কেন্দ্রে একটি বুথ মহিলা পরিচালিত করতে নির্দেশ দিয়েছিল। সেখানে প্রিসাইডিং অফিসার, পোলিং অফিসার, নিরাপত্তারক্ষী— সবাই ছিলেন মহিলা। কাছাড়ের জেলাশাসক এস বিশ্বনাথন ৭টি বিধানসভা আসনের সব জায়গায় ভোটগণনার জন্য শুধু মহিলাদের নিযুক্তি দিয়েছেন। তাঁর দাবি, সম্ভবত দেশে এই প্রথম এমন হতে চলেছে। তা নির্বিঘ্নে সম্পন্ন হবে বলেই প্রত্যয়ী তিনি।

বিশ্বনাথন জানান, ভোটগণনা হবে কেন্দ্রীয় ভারি শিল্প মন্ত্রকের নেট্রিপ-এ। জেলার ৭টি আসনের জন্য মোট ১৩টি জায়গায় কাজ চলবে। প্রতিটি আসনের জন্য থাকবে দু’টি করে হল। একমাত্র শিলচরের গণনা হবে একটি হলে। সব কটিতেই ১৪টি করে টেবিল। সে জন্য মোট ২৩৬ জন কাউন্টিং সুপারভাইজর ও সহকারীকে নিয়োগ করা হয়েছে। সবাই মহিলা। মূল কাজটা তাঁরাই করবেন। তাঁদের কাজকর্ম দেখভালের জন্য নিয়োগ করা হয়েছে ১৩৫ জন মাইক্রো-অবজার্ভারকে। তাঁদের অধিকাংশই অবশ্য পুরুষ। স্ট্রং-রুম থেকে টেবিলে ইভিএম আনা-নেওয়ার কাজও পুরুষরাই করবেন।

Advertisement

‘‘বিষয়টিকে এক দিকে যেমন গর্বের, তেমনি চ্যালেঞ্জের’’— বললেন বিশ্বনাথন। তাঁর কথায়, ‘‘মহিলাদের শক্তিবৃদ্ধির কথা বলব, আর ভোটগ্রহণ-গণনার সময় তাঁদের দূরে সরিয়ে রাখব, তা হতে পারে না। মহিলা বুথ নিয়েও আশঙ্কার শেষ ছিল না। কিন্তু ভোটের দিন দেখা গিয়েছে, তাঁদের ভূমিকা অন্যদের চেয়ে বরং ভালই ছিল। দৃঢ়তার সঙ্গে তাঁরা কর্তব্য পালন করেন। ভোটের পর মহিলা কর্মীরা খোলামেলা বলেছেন, ভয় কেটে গিয়েছে। সেখান থেকে গণনার জন্য চ্যালেঞ্জ নেওয়া।’’ নির্বাচন কমিশনও তাঁর প্রস্তাবে অনুমোদন জানায়। এর পরই ৩০০ জনকে বাছাই করা হয়। তাঁদের মধ্যে থেকে ২৩৬ জনকে নিয়োগ করা হয়েছে। প্রথম দফার প্রশিক্ষণও এর মধ্যে শেষ হয়ে গিয়েছে। গণনাপর্ব নির্বিঘ্নে সম্পন্ন হবে বলেই দাবি তাঁর। বিশ্বনাথনের আশা, অন্য বারের চেয়ে এ বার দ্রুত গণনা শেষ হবে। বেলা ১টার মধ্যে ৭টি আসনের ফলাফল সরকারি ভাবে ঘোষণা করা হয়ে যাবে।

গণনাকেন্দ্রের বাইরে যাঁরা অপেক্ষা করবেন, তাঁদের জন্য মাইকিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রতিটি রাউন্ডের ফলাফল জনসংযোগ দফতরের স্থায়ী ভাবে লাগানো মাইকেও ঘোষণা করা হবে। ২৮ এপ্রিলের ঝড়ে স্থায়ী মাইকিং ব্যবস্থা ক্ষতিগ্রস্ত হলেও জেলাশাসক কথা দেন, দু’দিনে সব ঠিক করা হবে। এ ছাড়া, ডাকবাংলোর সামনে যে এলইডি বোর্ড রয়েছে, তাতেও ভোটগণনার গতিপ্রকৃতি, ফলাফল দেখানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে।

‘পোল-ফ্রেন্ড’ নামে ‘অ্যাপ’ তৈরি করেও কাছাড় জেলা এ বার নির্বাচন কমিশনের বাহবা কুড়িয়েছে। ভোটকর্মীদের নির্বাচন সামগ্রী বণ্টন থেকে ভোটের পর জমা দেওয়া পর্যন্ত ইভিএম-এর উপর নজরদারি করছিল এই মোবাইল অ্যাপ। বিশ্বনাথনের দাবি মেনে অ্যাপটি তৈরি করেছিল শিলচর এনআইটির পড়ুয়া হর্ষবর্ধন লোধা, যোগেশ চৌহান ও অকলাঙ্ক জৈন।

ভাষাশহিদ দিবসে ভোটগণনার দিন ধার্য হওয়ায় শুরু থেকে তা নিয়ে চর্চা ছিল। এর মধ্যে শান্তিশৃঙ্খলার প্রশ্নে জেলা জুড়ে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। বিশ্বনাথন বলেন, ‘‘এতে শহিদ দিবস পালনে কোনও সমস্যা হবে না। শুধু যাঁরা শোভাযাত্রা বের করবেন বা কোনও বিশেষ কর্মসূচি গ্রহণ করেছেন, জেলা প্রশাসনের কাছ থেকে অনুমতি নিলেই হল। এতে ওই সব জায়গায় পুলিশ মোতায়েন করে উপযুক্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হবে।’’

১৪৪ ধারা অনুসারে গণনার দিন বাজি-পটকা ফাটানো, বিনা অনুমতিতে মিছিলের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। পুলিশ সুপার রজবীর সিংহ রাজনৈতিক দলগুলিকে জানিয়ে দিয়েছেন, কেউ নিষেধাজ্ঞা অমান্য করলে ফৌজদারি কার্যবিধিতে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। বড় মাপের নেতা হলেও রেহাই পাবেন না।

সে দিন পুলিশ পর্যাপ্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেছে, এই দাবি করে রজবীর জানান, জায়গায় জায়গায় পুলিশ পিকেট থাকবে। চলবে টহল। রাজ্য পুলিশ, পুলিশ ব্যাটেলিয়নের সঙ্গে আধা সামরিক বাহিনীকেও মোতায়েন করা হচ্ছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন