মা দুর্গার ফিরে যাওয়া কার্যত অনিশ্চিত করে দিল দিল্লির দশ খুদে পড়ুয়া নাট্যকর্মী। দিল্লির বিভিন্ন স্কুলের ৯ থেকে ১৪ বছরের দশটি বাচ্চা দশমীতে মায়ের নিরঞ্জনের নিয়মের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াল। এরা প্রতেকেই দিল্লির একটি নাট্যদল ‘স্বপ্ন এখন’-এর সঙ্গে জড়িত।
গত বেশ কয়েক বছর ধরে এই নাট্য সংস্থা বিভিন্ন ঐতিহাসিক ঐতিহ্যকে সামনে রেখে তাদের নিয়মিত কর্মশালা করে যাছে। নাটকের পাশপাশি সমাজকল্যাণমূলক বিভিন্ন কাজে তাদের ভূমিকা অগ্রণী। গত এক বছর ধরে তারা যমুনা নদী সংরক্ষণের কাজ করছে। দলের পরিচালক শমিক রায় বললেন, “নোংরা আবর্জনা আর পলিমাটির ভারে প্রায় অবলুপ্ত যমুনা নদীর ধারা আজ দিল্লি তথা সারা দেশের মানুষের কাছে এক আতঙ্কের প্রতিচ্ছবি হয়ে দাঁড়িয়েছে। অথচ এক সময় ইন্দ্রপ্রস্থের প্রাণ ছিল এই যমুনা। ডিএনডি, নিজামুদ্দিন অথবা আইটিও থেকে যমুনা ব্রিজ পার হওয়ার সময় মানুষ এখন বাচ্চাদের গল্প শোনায়, ‘এখানে এক সময়ে যমুনা ছিল’। সেই বাচ্চারাই আজ যমুনা বাঁচাও আন্দোলনের পুরোধা।’’
উত্তরাখণ্ডের বান্দারপুঞ্জ চূড়া থেকে উৎপত্তি স্বচ্ছ সুন্দর যমুনা নদী ধীরে ধীরে যখন হরিয়ানা উত্তরপ্রদেশ হয়ে দিল্লি পৌঁছয় তখন সে মানবসভ্যতা দ্বারা ধর্ষিত, বিপন্ন। বেশ কিছু বছর ধরে বহু নেতা, অভিনেতা, সমাজসেবক, রাজনৈতিক দল এগিয়ে এসেছেন এক দিনের জন্য ঢাকঢোল পিটিয়ে যমুনা উদ্ধারে। বহু সরকারি, বেসরকারি পয়সার নয়ছয়ের অভিযোগ উঠেছে যমুনা সংরক্ষণের নামে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়েনি।
‘স্বপ্ন এখন’-এর এই প্রকল্পের নেত্রী সাহানা চক্রবর্তী বললেন, “কোনও সরকারি সাহায্য ছাড়া সারা বছর ধরে যমুনাকে ঘিরে বিভিন্ন কাজ করে চলেছি। শুধু নদীকে ভালবাসাই নয়, তার ইতিহাসকে খুঁজে বার করা, নদীর চারপাশের কৃষক, শ্রমিক, মাঝিদের সুবিধা-অসুবিধার কথা জানা, তাদের জীবনকে কাছ থেকে দেখা— এই সব কিছুই করছে ওই খুদের দল, কোনও আড়ম্বর ছাড়াই।’’
প্রচণ্ড গরমে ও বেড়ে চলা শহরের চাহিদা মেটাতে যেখানে জলস্তর ক্রমশ নীচে নেমে যাচ্ছে সেখানে যমুনা দিল্লি শহরের প্রাণ। দিল্লির এই নাট্যদলের এই সব খুদে নাটক, ছবি আঁকা ও বিভিন্ন মডেল তৈরি করে যমুনা বাঁচাও অভিযানকে সফল করার প্রতিজ্ঞায় মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছে দিচ্ছে। শুধু তাই নয়, আর্য, টিয়া,আকাঙ্খা, সুর্যার্ভ, অগাস্থিয়া, শ্রীজিয়া, মমতা, ঐশী, অনুষ্কা ও বেদান্ত— এই ১০ জন দুর্গাপুজোর আগে প্রতিটি মণ্ডপের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনায় বসে প্রতিমা বিসর্জনের পর নদীর দুরবস্থার বিষয়ে সচেতন করছে। বছর দশেকের টিয়ার প্রশ্ন, “মোদী সরকার যদি গঙ্গা বাঁচাও আন্দোলন নিয়ে এত সচেতন হন তবে যমুনার প্রতি মানুষের এত অবহেলা কেন?” আর্য,আকাঙ্খা, সুর্যার্ভ প্রায় একযোগে বলে, ‘মানুষকে বোঝাবো, দরকার হলে বাধা দেব। কিন্তু এ ভাবে যমুনাকে নষ্ট করার অধিকার কারও নেই।”