পাকিস্তানের আলোচনা প্রস্তাবের জবাবে ভারত আজ স্পষ্ট জানিয়ে দিল, দু’দেশের মধ্যে কথা হতেই পারে। তবে কাশ্মীর প্রসঙ্গ নয়। আলোচনা হতে হবে দু’দেশের মধ্যে প্রাসঙ্গিক বিষয় নিয়ে। এবং ভারত-পাক সম্পর্কের সবচেয়ে প্রাসঙ্গিক বিষয়টি যে সন্ত্রাস, সেটাও স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে দিল্লি।
বালুচিস্তান ও পাক-অধিকৃত কাশ্মীর নিয়ে ভারতের পাল্টা চাপেই গত কাল আলোচনা প্রস্তাব দেন পাক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের বিদেশনীতি উপদেষ্টা সরতাজ আজিজ। বলেন, ‘‘কাশ্মীর নিয়ে ভারতের সঙ্গে আলোচনা করতে চায় পাকিস্তান।’’ আজ তার জবাবে বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ ও বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র বিকাশ স্বরূপ জানিয়ে দিয়েছেন, আলোচনা হতেই পারে। তবে সন্ত্রাসই হতে হবে সেই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। পঠানকোট তদন্ত, মুম্বই হামলার বিচারে দেরি, কাশ্মীরে সাম্প্রতিক সন্ত্রাসের মতো বিষয়গুলি নিয়ে পাকিস্তানকে জবাবদিহি করতে হবে।
এই তরজার মধ্যে পাকিস্তানের এবং পরোক্ষে খানিকটা চিনেরও অস্বস্তি বাড়িয়েছে পাক-অধিকৃত কাশ্মীরের গিলগিটে জন-বিক্ষোভ ও বালুচিস্তানে মানবাধিকার ভঙ্গের বেশ কিছু অভিযোগ। হিজবুল মুজাহিদিন নেতা বুরহান ওয়ানির মৃত্যুর জেরে কাশ্মীরে জনতা ও নিরাপত্তা বাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষের কথা আন্তর্জাতিক মঞ্চে তুলে ভারতকে বিপাকে ফেলার সব চেষ্টাই করেছে পাকিস্তান।
এরই জবাবে পাল্টা চাপ দিতে গত কাল কাশ্মীর নিয়ে সর্বদলীয় বৈঠকে বালুচিস্তান ও গিলগিটে পাক অত্যাচারের কথা তুলে ধরার কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এর পরই ও-পার থেকে আসে আলোচনার প্রস্তাব। পাক কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে বালুচিস্তানবাসীর লড়াইকে সমর্থন করা জন্য প্রধানমন্ত্রী মোদীকে আজ ধন্যবাদ জানান হাম্মাল হায়দার, নাইলা বালোচের মতো বালোচ নেতানেত্রীরা। আর আজই বিক্ষোভে অশান্ত হয়ে ওঠে গিলগিট শহর।
পাক-অধিকৃত কাশ্মীরে ভোটের নামে ঢালাও কারচুপির অভিযোগ উঠেছে নওয়াজের দলের বিরুদ্ধে। তা নিয়ে অশান্তি চলছিলই। আজ পাক সেনার বিরুদ্ধে বিক্ষোভে নামেন গিলগিট-বালটিস্তানের আম জনতা। তাঁদের দাবি, স্থানীয় বাসিন্দাদের স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়ে সেখানে চিন-পাকিস্তান আর্থিক করিডর তৈরি হচ্ছে। তার প্রতিবাদ করলেই দমনপীড়ন চালাচ্ছে পাক সেনা। সম্প্রতি গিলগিটের ৫০০ জন যুবককে জেলে পুরেছে পাক সরকার। পাক সেনার গিলগিট ছেড়ে যাওয়ার দাবিতেও স্লোগান দেন আন্দোলনকারীরা।
গিলগিটে এই অত্যাচারের প্রসঙ্গ এমন একটা সময়ে সামনে এল, যখন চিনের বিদেশমন্ত্রী ওয়াঙ্গ ই ভারতে। এনএসজি-তে ঢোকার পথে কাঁটা মূলত বেজিং। তারাই এখন দক্ষিণ চিন সাগর নিয়ে ভারতকে পাশে পেতে চায়। চিন যে পাক অধিকৃত কাশ্মীরে বিতর্কিত প্রকল্পের শরিক এবং সেখানে ওই করিডর বানাতে গিয়ে যে মানবাধিকার লঙ্ঘন ঘটছে, সে সব আন্তর্জাতিক নজরে চলে এল গোটা পর্বে। পাক অধিকৃত কাশ্মীরে চিনা কার্যকলাপ নিয়ে সরব দিল্লি। ফলে এখন বেজিংয়ের সঙ্গে দর কষাকষিরও পরোক্ষ আর একটা হাতিয়ার পেল সাউথ ব্লক।