মানুষের জীবনের গতিপথ বড় বিচিত্র। কখন যে কোন পথে তা বাঁক নেয় তা বোঝা মুশকিল। এই যেমন ছিলুম বেশ জীবনের প্রথম তিনটে দশক সেই পুবের পশ্চিমবঙ্গে। ওখানেই শিকড় – বেড়ে ওঠা – ডালপালা, পাতা, ফুল মেলে এক নিরবচ্ছিন্ন সময়ের স্রোতে গা ভাসিয়ে দেওয়া। তারপর সেই সময়ের স্রোতেই ভাসতে ভাসতে এই সুদূর পশ্চিমে মুম্বই শহরটায় এসে পড়লাম। সত্যি কথা বলতে কি কোনদিন ঘুণাক্ষরেও ভাবি নি যে পশ্চিমের এই শহরটায় এসে থিতু হব। কোন কর্পোরেট বিগ বস হওয়ার স্বপ্ন সেরকম কোনদিনই ছিল না, তাই হিল্লি-দিল্লি বা মুম্বই কি লণ্ডন, প্যারিস, নিউ ইয়র্ক যাওয়ার কথা কোনদিনই ভাবি নি। কিন্তু বিধাতাপুরুষের (পুরুষ কি নারী না কি অর্ধনারীশ্বর) কি ইচ্ছে হল কে জানে, এনে ফেললেন এক্কেবারে ভারতের এই পশ্চিম প্রান্তের বাণিজ্য শহরটায়। তা এখানেও কমদিন হল না, দেখতে দেখতে এক দশক হতে চলল। এই এক দশক ধরে শহরটার গতি প্রকৃতি লক্ষ্য করে চলেছি, অনুভব করছি এর প্রাণের স্পন্দন। জড়িয়ে গেছি এই শহরটার পালা-পার্বণ, উৎসব-ব্যসন এবং সবথেকে বেশি এর অদম্য প্রাণশক্তির সঙ্গে। কত বিপর্যয় – প্রাকৃতিক দুর্যোগ, বিস্ফোরণ, সন্ত্রাসবাদী হানা – কত কি ঘটেছে এই এক দশক জুড়ে – তবু শহরটার মানুষেরা মাথা নোয়ায় নি, ভেঙে পড়ে নি, বরং এত ঝড়-ঝঞ্ঝাকে উপেক্ষা করে সামনে এগিয়ে গিয়েছে – চরৈবেতি, চরৈবেতি, চরৈবেতি।
মারাঠি মানুষ – তারা এই রুখা শুখা মহারাষ্ট্রের মানুষ - লৌহকঠিন স্নায়ুর অধিকারী। দৈহিক বল বা মানসিক বল দুইই তাদের অসামান্য। তাই সহজে তাদের পরাভূত করা যায় না। মারাঠি সংস্কৃতি, মারাঠি লোকাচার তাঁরা সন্তর্পণে বাঁচিয়ে চলেছেন আজও মুম্বইয়ের এই মিশ্রসংস্কৃতির মধ্যেও। এখানেই তাঁদের কৃতিত্ব। এখানে এসে তাই শিখেছি অনেক। শিখেছি কিভাবে সারাদিন ধরে মারাঠি মহিলারা ঘরে বাইরে সমান তালে পরিশ্রম করেন। কোন কোন পরিবারে দেখেছি সদস্য সংখ্যা অনেক অথচ থাকার জায়গা অপ্রতুল। সেই অপ্রতুল পরিসরেও কিভাবে পরিপাটি করে গুছিয়ে সংসার করা যায় – কি পরিষ্কার ঘরদুয়ার (হয়তো দেখা যাবে নেই কোন সাহায্যকারী বাঈ), পরিপাটি করে রাখা জিনিসে সর্বত্র যত্নের ছাপ। বাড়ি বাড়ি কর্মরতা মারাঠি বাঈদের অভাবের সংসারেও পরিচ্ছন্নতা ও পারিপাট্যের কমতি নেই। শারীরিক পরিশ্রমে এঁরা ক্লান্তিহীন।
বছরভর মারাঠি ঘরে ঘরে ব্রত উপবাস, পালা পার্বণ লেগেই থাকে। এই তো কদিন বাদেই মারাঠি নববর্ষ শুরু হল বলে! তার জন্য মারাঠি মহিলারা ঘর গেরস্থালী সাফ সুতরো করা শুরু করেও দিয়েছেন। আমাদের বাঙালিদের যেমন পয়লা বৈশাখ বাংলা নববর্ষ। মারাঠিদের তেমনি পয়লা চৈত্র থেকে নতুন বছরের সূত্রপাত। এই দিনটিই তাদের গুঢ়ি পাড়ওয়া বা মারাঠি নববর্ষ। চান্দ্রমাস অনুযায়ী মারাঠি নতুন বছরের দিনক্ষণ ধার্য করা হয়। এই বছর গুঢ়ি পাড়ওয়া আটই এপ্রিল।
এই গুঢ়ি পাড়ওয়া নিয়ে নানা কাহিনি প্রচলিত রয়েছে। চলে যাওয়া যাক অনেক অনেক কাল আগে সৃষ্টির প্রারম্ভে। ব্রহ্মপুরাণে কথিত আছে, সৃষ্টিকর্তা ব্রহ্মা এক বিধ্বংসী বন্যার পর আবার নতুন করে জগৎ সৃষ্টি করেছিলেন। এই গুঢ়ি পাড়ওয়ার দিন থেকেই শুরু হয়েছিল নতুন সৃষ্টিকাল। ভারতীয় মতে যে সাড়ে তিন পুণ্য মুহূর্ত আছে তার মধ্যে গুঢ়ি পাড়ওয়া অন্যতম।
গুঢ়ি পাড়ওয়া সম্পর্কে আরো একটি কাহিনি আছে শ্রী রামচন্দ্রকে নিয়ে। চোদ্দ বছরের বনবাস শেষে যখন শ্রী রামচন্দ্র অযোধ্যায় ফিরে আসেন, তখন এই গুঢ়ি বা ধ্বজা দিয়ে তাঁকে অভ্যর্থনা করা হয়। তিনি রাবণবধ করে ফিরেছিলেন – অশুভশক্তিকে বিনাশ করে জয়গান গেয়েছিলেন শুভশক্তির, তাই এই ধ্বজা বা গুঢ়ি শুভশক্তির প্রতীক। আবার শালিবাহন শকাব্দের শুরুও হয়েছিল এই দিনটি থেকে। শক ও হুনদের পরাজিত করেছিলেন শালিবাহনরাজ। তাঁর বিজয়কে স্মরণীয় করে রাখার জন্য শকাব্দের প্রথম দিন হিসাবে এই দিনটিকেই ধার্য করা হয়।
এই গুঢ়ি পাড়ওয়ার দিন সকালবেলা প্রতিটি মারাঠি ঘরে উৎসবের পরিবেশ। ভোরবেলা স্নান করে মহিলারা সদর দরজার সামনে রঙ্গোলি আঁকেন। বাঙালিদের যেমন সাদা আলপনা, মারাঠিদের তেমনি বহুবর্ণের রঙ্গোলি। বাঙালিরা আতপ চাল ভিজিয়ে তা বেটে সেই চালগোলা জলে ছোট্ট কাপড়ের টুকরো চুবিয়ে আলপনা দেন। এখন অবিশ্যি খড়িমাটি গুলেও আলপনা দেওয়া হয়। মারাঠিদের রঙ্গোলি দেওয়ার ধরণটি কিন্তু সম্পূর্ণ অন্যরকম। নানাবর্ণের গুঁড়ো রঙ দিয়ে তিন আঙুলের কারসাজিতে ফুটে ওঠে রঙ্গোলি। কি সুন্দর সুন্দর নকশা কত অল্প সময়ে যে মারাঠি মেয়ে বউরা (কোন কোন পুরুষকেও দেখেছি রঙ্গোলি দিতে) ফুটিয়ে তোলেন। আবার কখনো কখনো ছাঁকনি বা নকশাওলা চালুনি কিংবা ফুটোওলা প্লাস্টিকের পাত্রও ব্যবহৃত হয় রঙ্গোলি আঁকার জন্য। এই মারাঠা দেশে এসেই রঙ্গোলি দেওয়া শিখেছি এবং দিওয়ালিতে দরজার সামনে রঙ্গোলি আঁকা এখন প্রতি বছর নিয়ম হয়ে গেছে। তা সে যাই হোক, বলছিলাম গুঢ়ি পাড়ওয়ার কথা। সকালবেলা গৃহের প্রবেশদ্বারে রঙ্গোলি দেওয়া হয়ে গেলে একটি লাঠির আগায় একরঙা একখানা নতুন কোরা সিল্ক বা সুতির কাপড় বেঁধে প্রবেশদ্বারের সামনে একটি পিঁড়ির ওপর সেটিকে স্থাপন করা হয়। লাঠির গায়ে লাগানো হয় হলদি কুমকুমের ফোঁটা। লাঠিটিতে পরানো হয় ফুলের মালা, সাদা গোল গোল বাতাসার মালা। লাগানো হয় আমের পল্লব, নিমপাতা। তারপর একটি ঘট লাঠির আগায় উপুড় করে রাখতে হয়। ঘটটি পিতলের, তামা বা রূপোরও হতে পারে। যার যেমন সামর্থ। এইভাবে সাজানো দণ্ডটিকে বলা হয় গুঢ়ি। এই গুঢ়ি সাজিয়ে তারপর পুজো করা হয়। বানানো হয় মারাঠিদের বিশেষ পদ পূরণপোলি। গুঢ়ি পাড়ওয়ার দিন নিমপাতা গুঁড়ো করে তাতে চিনি মিশিয়ে শরবত বানিয়ে খাওয়ার প্রচলন আছে। এর অন্তরালে রয়েছে একটি গুঢ় অর্থ। তেঁতোর সঙ্গে মিঠে স্বাদ অর্থাৎ জীবনটা সবসময় মধুময় হয় না, এর সঙ্গে মিশে থাকে অনেক তিক্ততা। জীবনে এই মিষ্টি ও তিক্ত এই দুধরণের অভিজ্ঞতাকেই সমানভাবে গ্রহণ করতে হয়। এখানেই জীবনের সার্থকতা।
গুঢ়ি পাড়ওয়া মূলত বসন্তের আগমনবার্তা নিয়ে আসে। বসন্তে পত্রে পুষ্পে শোভিত প্রকৃতির সঙ্গে মানুষের যে নিবিড় যোগাযোগ তারই উৎসবময় রূপ যেন এই গুঢ়ি পাড়ওয়া। মাটি আমাদের মা। মাটির সঙ্গে চিরকালই মানুষের বন্ধন অটুট। তাই প্রকৃতি ও মৃত্তিকার সঙ্গে সম্পৃক্ত যে উৎসব, তাকে কি অগ্রাহ্য করা যায় কোনমতেই?
ভারতের পশ্চিম প্রান্তে মহারাষ্ট্রের নববর্ষের কথা বলতে বলতে মনে পড়ে গেল ভারতের পূর্ব প্রান্তের রাজ্য আসামের নববর্ষ বোহাগ বিহুর কথা। এপ্রিলের মাঝামাঝি সময়েই অনুষ্ঠিত হয় এটি। বোহাগ বিহুও বসন্তের জয়গান গাইতে গাইতেই আসে। ভারতের পূর্ব প্রান্তের এই রাজ্যটিও তো কম সুন্দর নয়। বসন্ত সমাগমে প্রকৃতি উজাড় করে দেয় নিজেকে। পাহাড়, জঙ্গল জুড়ে যেন মহোৎসব। প্রকৃতির বিচিত্র বর্ণের সমাবেশ রঙ লাগায় মানুষের মনেও। তারা নৃত্য-গীতের অনাবিল আনন্দে মাতোয়ারা হয়ে ওঠে। তাই বোহাগ বিহুকে রঙ্গালি বিহুও বলা হয়। রঙ্গালি মানে আনন্দ-উল্লাস।
আসামের দিনপঞ্জিকা অনুযায়ী বোহাগ হল বছরের প্রথম মাস আর চোত হল শেষ। বোহাগ বিহু নববর্ষের সূচনা করে। এই মুম্বইয়ে কালবৈশাখী হয় না। কিন্তু পূর্বপ্রান্তের রাজ্য আসামে সাধারণত বছরের এই সময়টাতেই আসে কালবৈশাখীর উথালপাথাল করা ঝড়, যেমন তা আসে পশ্চিমবঙ্গেও। আসামের লোককথায় এক কাহিনি আছে এই কালবৈশাখীকে ঘিরে। বরদৈচিলা নামে এক রমণী না কি এই কালবৈশাখীর নিয়ন্তা। এই নারী এই সময় তার বাপের বাড়ি আসেন মায়ের কাছে। কয়েকদিন অতিবাহিত করে আবার ফিরে যান শ্বশুরালয়ে। বাচ্চাদের কাছে এই গল্পটি বেশ জনপ্রিয়। এই সময়ের কালবৈশাখী নিয়ে আসে বছরের প্রথম বৃষ্টি। প্রকৃতি শীতল হয়। এই সময়ই বপন করা হয় বীজ, মোট কথা এই সময় থেকেই কৃষিকাজ শুরু হয়। চোত সংক্রান্তি থেকেই শুরু হয়ে যায় এই বিহু উৎসব। এখানেও সেই প্রকৃতিই মুখ্য। প্রকৃতির সঙ্গে মানুষের সখ্যতা থেকেই উদ্ভব এই সব অনুষ্ঠানের। বিহুর প্রথম দিনটিকে বলা হয় গোরু বিহু। গৃহপালিত পশু বিশেষ করে গাভী গৃহস্থের লক্ষ্মী। তাই নতুন বছরে গাভীকে বিশেষরূপে মার্জনা করে তাদের সেদিন সারাদিনের জন্য মুক্ত করে দেওয়া হয়। আবার সন্ধেবেলা ঘরে ফিরিয়ে আনা হয়। গোয়ালঘরে প্রদীপ জ্বেলে ঘুঁটের ধোঁয়া বা সাঁজাল দেওয়া হয় যাতে গাভীগুলি মশা বা অন্য কোন রোগের প্রকোপ থেকে বাঁচতে পারে। নানারকমের পিঠে বা মিষ্টি খেতে দেওয়া হয় তাদের। বোহাগবিহুর প্রথম দিন বিউলির ডাল, হলুদ, নিমপাতা বেটে তা দিয়ে ভাল করে স্নান করে বাড়ির সকলে। বাড়ির বড়দের প্রণাম করে আশীর্বাদ নেয় ছোটরা। ঠাকুরঘরে বিশেষ পুজো অর্চনা করা হয়। বোহাগ বিহুর দ্বিতীয় দিন হল ‘মানুহ বিহু’ অর্থাৎ এই দিনটি মানুষদের জন্য নির্দিষ্ট। এই দিনেও বয়স্কদের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করা হয় এবং আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধবদের বাড়ি যাতায়াত এসব হয়েই থাকে। এই দিনের বিশেষ খাবার চিঁড়ে, দই আর মিষ্টি। বিহুর তৃতীয় দিনটিকে বলা হয় গোসাই বিহু; এই দিনে ভগবানের পূজার্চনা করা হয়। বিহুর সপ্তম দিনে সাত বিহু। এই দিনে গ্রামের বয়স্ক মহিলারা গান গাইতে গাইতে সাত রকমের শাক সংগ্রহ করেন এবং তাই দিয়ে সুস্বাদু পদ তৈরি করেন। বিহু উপলক্ষে গান ও নাচের অসাধারণ বর্ণময় সমাবেশ দেখতে পাওয়া যায়। নারী, পুরুষ নির্বিশেষে যোগদান করেন এই নৃত্যগীতে। লোকগানের সুরে মেয়েরা গোল হয়ে ঘুরে ঘুরে নাচেন। গানের সঙ্গে বাজে বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্র – ঢোল, পেপা, তাকা, তাল, গগনা। এছাড়া হাতে তালিও দেওয়া হয়।
বোহাগ বিহু বা রঙ্গালি বিহু ছাড়াও আরও দুধরণের বিহু আছে। সেগুলি বছরের অন্য সময়ে অনুষ্ঠিত হয়। মাঘ বিহু এবং কাতি বিহু। মাঘ বিহু শীতে অনুষ্ঠিত হয়। এই সময় শস্য চাষ হয়ে যায়। তাই গ্রামবাসীরা একটু অবসর পায়। একে ভোগালি বিহুও বলে। এই সময় সন্ধ্যায় আগুনের চারদিকে সবাই গোল হয়ে বসে। অগ্নিদেবতার উদ্দেশ্যে প্রার্থনা করা হয়। নানা রকমের মাছ, মাংস রান্না হয়। গৃহস্থ বউ ঝি’রা চিঁড়ে, পিঠে, নানা রকমের নাড়ু ও কড়াই ঘরে তৈরি করে। কাতি বিহু অনুষ্ঠিত হয় আহিন মাসের শেষ দিনে; ধান তখনও ওঠে নি এবং ফসলের গোলা প্রায় খালি। তাই একে কাঙ্গালি বিহু বলা হয়। এই কাতি বিহু একদিনই অনুষ্ঠিত হয় এবং এই সময় কোনও ভোজ দেওয়া হয় না।
এই দেখুন, পুবের বিহু নিয়ে লিখতে লিখতে আবার যে ভারতের পশ্চিম প্রান্তের আর এক রাজ্যের কথা মনে পড়ে গেল। পাঞ্জাব। সেখানেও অত্যন্ত জনপ্রিয় এক উৎসব ‘বৈশাখী’। বৈশাখী অনুষ্ঠিত হয় এপ্রিলেরই মাঝামাঝি। সাধারণত তেরোই এপ্রিল বা কখনো কখনো চোদ্দই এপ্রিল। বৈশাখী মূলত শিখধর্মাবলম্বীদের অনুষ্ঠান। এর মূলে রয়েছে শিখগুরু তেগ বাহাদুরের আত্মত্যাগ। নবম শিখগুরু তেগ বাহাদুর মুঘল সম্রাট আওরঙ্গজেবের কাছে নতি স্বীকার করেন নি। প্রাণের থেকেও বড় ছিল তাঁর কাছে তাঁর ধর্মের সম্মানরক্ষা; তাই নিজের শির দিয়েছিলেন তিনি। গুরু তেগ বাহাদুরের এই আত্মবিসর্জন শিখদের মধ্যে জাগিয়ে তুলেছিল এক অদম্য জাতীয়তাবোধ। দশম গুরু গোবিন্দ সিং সমস্ত শিখকে সংঘবদ্ধ করার জন্য ১৬৯৯ সালে বৈশাখী দিনটিকে নির্বাচন করলেন। তিনি পাঁচজন অসমসাহসী পুরুষ সিংহকে নিয়ে স্থাপন করলেন খালসা পন্থ। শিখদের পঞ্চ ‘ক’ নির্ধারিত হল – কেশ, কাংঘা, কৃপাণ, কচ্ছ ও কড়া। গ্রন্থসাহিব হল শিখদের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ; যা অনুসরণ করে চলবেন তাঁরা।
বৈশাখী উৎসবের সময় রবিশস্য ঘরে ওঠে। তাই কৃষকদের এই সময়টা বড় সুখের সময়। নববর্ষের শুরুও এই দিনটি থেকে। এই দিন ভোরবেলা ঘুম থেকে উঠে স্নান সেরে সবাই গুরুদ্বারে যায়। ঈশ্বরকে ধন্যবাদ জানায় ফসল দেওয়ার জন্য এবং ভবিষ্যতেও যাতে ভগবান এমন সৌভাগ্য থেকে তাদের বঞ্চিত না করেন, সেইজন্যও প্রার্থনা জানায় তারা।
পাঞ্জাব ও হরিয়ানাতেই এই বৈশাখী উৎসবের রেশ চলে। দিনভর চলে ভাংরা এবং গিদ্দা নাচ ও গান। অপরিমিত প্রাণপ্রাচুর্যের প্রকাশ এইসব নাচ ও গানে, যাতে ঢোলের তালে তালে আনন্দে মেতে ওঠেন নারী, পুরুষ। পুরুষদের নানা রঙের লুঙ্গি, কুর্তা, পাগড়ি ও মেয়েদের সালোয়ার কামিজ বা লেহেঙ্গা এই উৎসবকে বর্ণময় করে তোলে। কৃষিকাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত এই বৈশাখীতে চাষবাসের নানা কর্মকাণ্ড অভিনয় করেও দেখান কলাকুশলীরা নাচ ও গান সহযোগে। সব মিলিয়ে অত্যন্ত জমজমাট ভরন্ত এক উৎসব এই বৈশাখী।
সত্যি, ভাবলে অবাক হতে হয়, ভারতবর্ষ কি বিপুল বৈচিত্র বহন করে চলেছে আবহমান কাল ধরে। ভারতের বিভিন্ন প্রান্তের এইসব উৎসব কি নিবিড় এক ঐক্য রচনা করে না সকলের সঙ্গে? শেষ করার সময় হয়েছে, আজ আসি। আবার আগামী সংখ্যায় হাজির হব বাংলা নববর্ষ নিয়ে। ভাল থাকবেন।
ঋণস্বীকার: Festivals of India: National Book Trust