মহন্ত গুলাবনাথ বাপু। ছবি: সংগৃহীত।
তাঁকে ‘মুসলিম বিদ্বেষী’ বলে বার বার আক্রমণ করেছেন বিরোধীরা। উত্তরপ্রদেশের বিধানসভা নির্বাচনের প্রচার চলাকালীন তিনি প্রবল কট্টরবাদী ভাষণ দিচ্ছিলেন এবং সাম্প্রদায়িক মেরুকরণ ঘটানোর চেষ্টা করছিলেন। বিরোধীরা এমনও বলেছেন। ভোটে জিতে মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেওয়ার পর তিনি রাজ্যের সব অবৈধ কসাইখানা বন্ধ করে দেওয়ার নির্দেশ দিতেই আদিত্যনাথের বিরুদ্ধে ফের মুসলিম বিদ্বেষের অভিযোগ তুলতে শুরু করেছেন একাংশ। অবৈধ কসাইখানা বন্ধ করা আসল উদ্দেশ্য নয়, মুসলিমদের ব্যবসা বন্ধ করে দেওয়াই মূল লক্ষ্য নতুন মুখ্যমন্ত্রীর— সরাসরি এমন অভিযোগ তুলতে শুরু করেছেন কেউ কেউ। রাজনৈতিক বিরোধীরা এ ভাবে পদে পদে মুসলিম বিদ্বেষের অভিযোগ তোলেন যাঁর বিরুদ্ধে, তাঁর গুরুভাই এক মুসলিম! এই তথ্যে চমকে গিয়েছেন অনেকেই।
গোরক্ষপুর মঠের বর্তমান মহন্ত হলেন যোগী আদিত্যনাথ। কিন্তু তাঁর আগে মঠের মহন্ত ছিলেন অবৈদ্যনাথ। আদিত্যনাথের গুরু ছিলেন মহন্ত অবৈদ্যনাথ। তাঁর হাতেই সন্ন্যাস আদিত্যনাথের। গুরু অবৈদ্যনাথের সূত্রেই এক গুরুভাই পেয়েছিলেন আদিত্যনাথ, যে গুরুভাই মুসলিম পরিবারে জন্মেছিলেন।
নাথ সম্প্রদায়ের সন্ন্যাসী আদিত্যনাথ। সেই সম্প্রদায়ের একটি খুব নামী মঠ রয়েছে গুজরাতের বিসনগরে। সেই বিসনগর মঠের প্রধান ছিলেন মহন্ত গুলাবনাথ বাপু। মুসলিম পরিবারে জন্ম হয়েছিল গুলাবনাথের। ছোটবেলায় নাম ছিল গুল মহম্মদ পাঠান। ১৮ বছর বয়সে বদগামে মহন্ত বালকনাথের কাছ থেকে দীক্ষা নেন গুল মহম্মদ পাঠান। হয়ে ওঠেন গুলাবনাথ। গুজরাতের বিসনগর মঠের প্রধান হওয়ার পর মহন্ত গুলাবনাথ বাপু নামে পরিচিত হন তিনি।
আদিত্যনাথ মুসলিম বিদ্বেষী নন, এমনটা প্রমাণ করতেই গুলাবনাথের কথা তুলে ধরছে বিজেপি, দাবি রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশের। ছবি: পিটিআই।
আদিত্যনাথের গুরু অবৈদ্যনাথকেও নিজের গুরু মানতেন গুলাবনাথ। গোরক্ষপুর মঠে প্রায়শই যেতেন অবৈদ্যনাথের আশীর্বাদ নিতে। অবৈদ্যনাথের প্রয়াণের পরও আদিত্যনাথের সঙ্গে গুলাবনাথের সম্পর্ক কোনও দিন মলিন হয়নি। কোনও কাজে গুজরাত গেলে আদিত্যনাথ সর্বাগ্রে যেতেন গুলাবনাথের বিসনগর মঠে। গুজরাতে আদিত্যনাথের যাবতীয় কর্মসূচি শুরু হত বিসনগর থেকেই। গত বছর প্রধানমন্ত্রী মোদীর হাত দিয়ে গুলাবনাথকে সম্বর্ধিত করার ব্যবস্থাও করেছিলেন আদিত্যনাথ।
২০১৬-র ডিসেম্বরে প্রয়াত হন গুলাবনাথ বাপু। যোগী আদিত্যনাথ ছুটে গিয়েছিলেন বিসনগর মঠে। গুলাবনাথের শেষকৃত্য সম্পন্ন করে গোরক্ষপুর ফিরেছিলেন তিনি। কসাইখানা বন্ধের নির্দেশ দেওয়ার পর আদিত্যনাথকে ফের যখন মুসলিম বিদ্বেষী হিসেবে তুলে ধরতে চাইছে বিরোধী পক্ষ, তখন গুলাবনাথের সঙ্গে আদিত্যনাথের দীর্ঘ সখ্যের আখ্যানটাকেও সমান ভাবে প্রচারের আলোয় তুলে আনতে চাইছে আদিত্যনাথের ঘনিষ্ঠ মহল।