দল তো পর্যুদস্ত হয়েইছে, বড় নেতারাও প্রায় সকলেই হেরেছেন। এই অবস্থায় লোকসভায় দলের হয়ে কথাটা বলবেন কে? চিন্তায় কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্বের যখন ঘুম উড়ে গিয়েছে, তখন আচমকাই লোকসভায় দলের নেতা হিসেবে কর্নাটকের সাংসদ মল্লিকার্জুন খার্গেকে মনোনীত করে বসলেন কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গাঁধী। সে দিন ক্ষুব্ধ কংগ্রেস নেতাদের অনেকেই আজ মানলেন, আবির্ভাবেই ৪৫ মিনিটের ঝোড়ো ইনিংস খেলে শুধু নিজে সেঞ্চুরি হাঁকাননি। লোকসভায় হতোদ্যম হয়ে পড়া কংগ্রেসের মানও বাঁচান এই দক্ষিণী সাংসদ। রাষ্ট্রপতির বক্তৃতার ধন্যবাদ প্রস্তাব নিয়ে বিতর্কে অংশ নিয়ে লোকসভায় বিজেপিকে তুলোধনা করেছেন এই প্রাক্তন মন্ত্রী। খার্গের এ দিনের ভূমিকায় উচ্ছ্বসিত সনিয়া এক সময় হাততালিও দিয়ে ওঠেন।
বিজেপি নেতৃত্ব মনে করছেন, খার্গেকে এ দিন খেলার জন্য লোপ্পা বল দেন তাঁদেরই নেতা রাজীবপ্রতাপ রুডি। বিতর্কে অংশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে ধন্যবাদ জানালেও রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়কে ধন্যবাদ জানাতে ভুলে যান রুডি! পরে কংগ্রেসের উদ্দেশে বলেন, “সংসদে বিরোধী কেউ নেই। যে জাতীয় দল ৬৫ বছর দেশ শাসন করেছে, তারা আঞ্চলিক দলে পর্যবসিত হয়েছে! মাত্র ৪৪টি আসন পেয়ে সংসদে এখন কথা বলারই মুখ নেই কংগ্রেসের!” সে সময় বিরোধী বেঞ্চের প্রথম সারিতেই বসে ছিলেন সনিয়া। তাঁর দিকে তাকিয়ে রুডি এ-ও বলেন, “তবে ভয় নেই! আপনাদের পিছনে ফেলে যাব না। নরেন্দ্র মোদী বড় মনের মানুষ। আপনাদের সঙ্গে নিয়েই চলবেন।”
লোকসভা ভোটে বিজেপি এ বার একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে। রাজনৈতিক নেতৃত্বের বক্তব্য, এই পরিস্থিতিতে তাদের নেতাদের কাছে বিনয়টাই প্রত্যাশিত। কিন্তু তা না করে রুডির এই আক্রমণাত্মক বক্তব্য নিয়ে তখনই প্রশ্ন ওঠে। তার পরেই বিতর্কে অংশ নিয়ে কংগ্রেস শিবিরে যেন মহাভারতের অর্জুনের ভূমিকায় অবতীর্ণ হন মল্লিকার্জুন। পৌনে এক ঘণ্টা ধরে রুডির তোলা একের পর এক প্রশ্নের জবাবও দেন তিনি।
কর্নাটকের গুলবর্গার সাংসদ খার্গে এমনিতে চুপচাপ। তিনি যে এত ঝরঝরে হিন্দিতে কথা বলতে পারেন, তা দেখেই বিস্মিত অনেক কংগ্রেস সাংসদ। রুডিকে জবাব দিতে গিয়ে খার্গে বলেন, “লোকসভা ভোটে কংগ্রেস হেরেছে। কারণ, মোদীর মতো প্যাকেজিং করতে পারেনি। জিনিসে পোকামাকড় থাকলেও মোদী সেটা এমন ভাবে প্যাকেজ করেছেন যে, আকর্ষণীয় লেগেছে! কিন্তু বিজেপির যে দম্ভ এখন থেকেই দেখা যাচ্ছে, তা-ই তাদের পথে বসাবে।”
খার্গের এই বক্তব্যের সময় গোটা বিরোধী বেঞ্চই তাঁকে সমর্থন জানাতে থাকেন। এর পরেই মহাভারত থেকে উদ্ধৃতি দিয়ে মোক্ষম কথাটি বলেন প্রাক্তন রেলমন্ত্রী। তাঁর কথায়, “কংগ্রেস ৪৪টি আসন পেয়েছে ঠিকই, কিন্তু তার মানে কংগ্রেস অপাঙ্ক্তেয় হয়ে যায়নি। পাণ্ডবরা সংখ্যায় কম থাকলেও কৌরবরা তাদের হারাতে পারেনি। শেষ পর্যন্ত ক্ষমতায় এসেছিল পাণ্ডবরাই।” খার্গের বক্তব্যে দৃশ্যত উৎসাহী সনিয়া টেবিল চাপড়ে তাঁকে সমর্থন জানাতে থাকেন।
খার্গের বক্তব্যের পরে কংগ্রেস নেতারাও উজ্জীবিত। লোকসভায় বিরোধী দলনেতার পদ কংগ্রেস পাবে কিনা, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। কংগ্রেস নেতৃত্বের মতে, বিরোধী দলনেতার পদ স্পিকার সুমিত্রা মহাজন তাঁদের না দিলেও ক্ষতি নেই। লোকসভার বিতর্কে অংশ নিয়ে কংগ্রেস যদি এ ভাবেই গঠনমূলক বিরোধিতা করতে পারে, তা হলে পদের বিষয়টি অপ্রাসঙ্গিক হয়ে যাবে। তবে বিরোধী দলনেতার পদটি হাতছাড়াও করতে চায় না তারা। এ নিয়ে বিজেপিকে আক্রমণও করছে কংগ্রেস। আহমেদ পটেলদের বক্তব্য, খার্গে দলিত নেতা। তাঁকে লোকসভায় দলের নেতা করেছেন সনিয়া। খার্গেকে লোকসভায় বিরোধী দলনেতার মর্যাদা না দিলেও দলিতরাও অসন্তুষ্ট হবেন।
বিজেপি কংগ্রেসের এই কৌশলকে গুরুত্ব দিতে নারাজ। তবে রুডির বক্তব্যে অসন্তোষ তৈরি হয়েছে দলেই। যদিও রাজ্যসভায় ধন্যবাদ প্রস্তাবের বিতর্ক শুরু করে ক্ষত কিছুটা মেরামত করেছেন সভার নেতা তথা কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি। নেতা-কর্মীদের সতর্ক করে জেটলি বলেন, “বিজয়ীকে বিনয়ী হতে হয়। সরকারকেও এ বার কাজ করে দেখাতে হবে।”