উত্তরপ্রদেশে আসন-জট কাটানোর জন্য এ বারে দিল্লিতে এসে ঘাঁটি গাড়লেন আরএসএসের শীর্ষ নেতৃত্ব। স্বয়ং সরসঙ্ঘচালক মোহন ভাগবতও দিল্লি এসে দলের কিছু নেতার সঙ্গে বৈঠক করেন।
বিজেপি-র শীর্ষ নেতারা কাল সকাল থেকে বৈঠকে বসছেন বিভিন্ন রাজ্যের প্রার্থী-তালিকা চূড়ান্ত করার জন্য। নরেন্দ্র মোদীর আসনও চূড়ান্ত হওয়ার কথা এই বৈঠকে। গুজরাতের বাইরে মোদীর বারাণসীতে দাঁড়ানোর একটা প্রস্তাব থাকলেও মুরলীমনোহর জোশী সেই আসন ছাড়তে নারাজ। এই অবস্থায় মোদীর জন্য লখনউ বা ইলাহাবাদের মতো বিকল্প কোনও আসন নিরাপদ কি না, তা আলোচনার জন্য সঙ্ঘের শীর্ষনেতারা এ বারে দিল্লিতে এসে বিজেপি নেতাদের সঙ্গে আলোচনা শুরু করলেন।
বিজেপি সূত্রের খবর, সঙ্ঘের শীর্ষনেতা ভাইয়াজি জোশী, সুরেশ সোনি, কৃষ্ণগোপালরা আজ বিজেপি সভাপতি রাজনাথ সিংহ, মোদী-ঘনিষ্ঠ নেতা অমিত শাহর সঙ্গে বৈঠক করেন। সন্ধেয় উত্তরপ্রদেশের নেতাদের সঙ্গে আলাদা বৈঠক করেন রাজনাথ। স্থির হয়েছে, আগামিকাল সংসদীয় বোর্ড ও নির্বাচন কমিটির বৈঠকে এই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হবে। যদি কালই মোদীর আসন নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়ে যায়, তবে সে দিনই তা ঘোষণা করে দেওয়া হবে। তা না হলে দোলের আগে শনিবার আর একটি বৈঠক ডাকা হয়েছে। সে দিনও ঘোষণা হতে পারে।
সঙ্ঘ সূত্রের মতে, জোশী যদিও বলেছেন, দল চাইলে তিনি বারাণসী আসন ছেড়ে দিতে রাজি। কিন্তু ভোটের আর এক মাস বাকি। এর মধ্যে নতুন কোনও আসনে তাঁকে যেতে হলে সেটা নিরাপদ হতে হবে। যদি জোশীকে বোঝানো সম্ভব হয়, তবে বারাণসীই কৌশলগত ভাবে মোদীর জন্য উপযুক্ত হবে বলে মনে করছেন সঙ্ঘ নেতারা। কারণ, তাতে উত্তরপ্রদেশের কর্মীরা তো চাঙ্গা হবেনই, পাশের রাজ্য বিহারেও তার প্রভাব পড়বে। কিন্তু জোশী এখনও বারাণসীতেই গিয়ে থাকছেন নিয়মিত। এই অবস্থায় জোশীকে নারাজ করে মোদী নিজেও বারাণসী থেকে লড়তে চাইবেন কি না, তা নিয়েও সংশয় রয়েছে। তার জন্য সঙ্ঘ নেতারা অটলবিহারী বাজপেয়ীর প্রাক্তন নির্বাচনী কেন্দ্র লখনউয়ের কথাও ভাবছেন।
সমস্যা লখনউ নিয়েও। সেখান থেকেই লড়তে চাইছিলেন রাজনাথ সিংহ। সঙ্ঘের এক নেতা বলেন, “রাজনাথ লখনউ থেকে লড়তে চান, এটার প্রচার একটু বেশিই হচ্ছে। মোদী যদি শেষ পর্যন্ত লখনউয়ে লড়েন, তা হলে রাজনাথকে নিজের কেন্দ্র গাজিয়াবাদ থেকেই লড়তে হবে। অথবা দলের সভাপতি হিসেবে তিনি না লড়ার সিদ্ধান্তও নিতে পারেন।” আগেই ঠিক হয়েছিল, দলের কিছু শীর্ষনেতা লড়বেন না। যার মধ্যে অরুণ জেটলির নামও ছিল। কিন্তু পঞ্জাবের অমৃতসর আসন থেকে জেটলিকে ভোট-দৌড়ে নামানোর চাপ বাড়ছে। পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী প্রকাশ সিংহ বাদলও চাইছেন, জেটলি অমৃতসর থেকে লড়ুন। সে ক্ষেত্রে সেই কেন্দ্রের সাংসদ নভজ্যোৎ সিংহ সিধুকে দিল্লির কোনও আসন দেওয়া যেতে পারে।
মোদী যদি শেষ পর্যন্ত উত্তরপ্রদেশ থেকে না দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নেন, তা হলে গুজরাতের কোনও একটি আসন থেকে তিনি লড়তে পারেন। প্রথমে তাঁর জন্য শুধু আমদবাদ-পূর্ব আসনটিকেই বেছে রাখা হয়েছিল। কিন্তু এখন সুরাত, বডোদরার মতো আসনের কথাও ভাবা হচ্ছে। গুজরাত রাজ্য শাখার একাংশ লালকৃষ্ণ আডবাণীকে গাঁধীনগর আসনটি দেওয়ার ব্যাপারেও আপত্তি তুলেছেন। কিন্তু আডবাণী স্পষ্ট করে দিয়েছেন, তিনি গাঁধীনগর থেকেই লড়বেন। সুষমা স্বরাজও তাঁর নির্বাচনী কেন্দ্র বিদিশা থেকে লড়তে চান।