আপ ছাড়লেন গোপীনাথ সাজিয়া, নিশানায় অরবিন্দ

উত্তর থেকে দক্ষিণ— আম আদমি পার্টিতে ভাঙনের চিহ্ন সর্বত্রই। সদ্য লোকসভা নির্বাচনে ভরাডুবি হয়েছে দলের। শীর্ষ নেতা অরবিন্দ কেজরীবালও বর্তমানে জেলে। দিশাহীনতায় ভুগছেন দলীয় কর্মী-সমর্থকদের একটা বড় অংশই। এরই মধ্যে আজ মতপার্থক্য ও দলে গণতন্ত্রের অভাবের অভিযোগ তুলে দল ছাড়লেন আপ-এর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সদস্য সাজিয়া ইলমি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৫ মে ২০১৪ ০৩:১০
Share:

ইস্তফা দেওয়ার পর নয়াদিল্লির সাংবাদিক বৈঠকে আপ-এর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সাজিয়া ইলমি। ছবি: পিটিআই

উত্তর থেকে দক্ষিণ— আম আদমি পার্টিতে ভাঙনের চিহ্ন সর্বত্রই।

Advertisement

সদ্য লোকসভা নির্বাচনে ভরাডুবি হয়েছে দলের। শীর্ষ নেতা অরবিন্দ কেজরীবালও বর্তমানে জেলে। দিশাহীনতায় ভুগছেন দলীয় কর্মী-সমর্থকদের একটা বড় অংশই। এরই মধ্যে আজ মতপার্থক্য ও দলে গণতন্ত্রের অভাবের অভিযোগ তুলে দল ছাড়লেন আপ-এর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সদস্য সাজিয়া ইলমি। দিল্লিতে সাজিয়ার পাশাপাশি এ দিনই দল ছেড়েছেন আপ-এর কর্নাটক শাখার আহ্বায়ক ক্যাপ্টেন জি আর গোপীনাথ। একই দিনে দলের দুই শীর্ষ নেতার এ ভাবে ইস্তফায় রীতিমতো অস্বস্তিতে আপ নেতৃত্ব। পরিস্থিতি সামাল দিতে দলের তরফে দাবি করা হয়েছে, সাজিয়া এবং গোপীনাথের সঙ্গে আলোচনায় বসে মতপার্থক্য দূর করার চেষ্টা করা হবে।

লোকসভা নির্বাচনের ফল ঘোষণার পর থেকেই আপের অন্দরে ক্ষোভের ইঙ্গিত পাচ্ছিলেন দলের শীর্ষ নেতৃত্ব। কিন্তু তাঁদের আশা ছিল, যে হেতু কেজরীবাল নিজে এখন জেলে, তাই তাঁর প্রতি সহানুভূতি দেখিয়ে অনেকেই হয়তো এখন প্রকাশ্যে ক্ষোভ জানাবেন না। কিন্তু এই অঙ্ক মিলল না। আজ সাংবাদিকদের সামনে সাজিয়া নিজের ইস্তফার কথা ঘোষণা করতে গিয়ে বলেন, আপ-এ গণতন্ত্র বলে কিছু নেই। এবং এ জন্য তিনি আঙুল তুলেছেন খোদ কেজরীবালের দিকে। সাজিয়ার অভিযোগ, কেজরীবালকে ঘিরে একটি গোষ্ঠী রয়েছে, যারা তাঁর সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করে থাকেন। সেখানে অন্য কারও বক্তব্যকে গুরুত্ব দেওয়া হয় না। সাজিয়া বলেন, “সেই বলয় ভেঙে আমার মতো প্রতিষ্ঠাতা সদস্যরাই কেজরীবালের কাছে পৌঁছতে পারেন না! সেখানে সাধারণ কর্মী-সমর্থকদের বক্তব্য কী ভাবে পৌঁছবে? আপ মুখে স্বরাজ প্রতিষ্ঠার কথা বললেও আসলে দলেই গণতন্ত্র নেই!” সাজিয়া-ঘনিষ্ঠ শিবিরের বক্তব্য, মূলত এই কারণেই ক্রমশ মনোবল হারাচ্ছেন দলীয় কর্মীরা। কর্মীদের যে কিছু বক্তব্য থাকতে পারে, সে বিষয়টিকে অগ্রাহ্য করছেন শীর্ষ নেতৃত্ব। উল্টে তাঁরা নিচুতলার কর্মীদের উপর নিজেদের সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিচ্ছেন। ফলে ক্রমশ জনভিত্তি হারাচ্ছে দল। যাঁরা এক সময় আপ এর পাশে দাঁড়িয়েছিলেন, সেই আমজনতার একটা বড় অংশই মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। লোকসভার ভোটের ফলই তার প্রমাণ। আপ শীর্ষ নেতৃত্বের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ আগেও উঠেছে। কিন্তু সাজিয়ার মতো কেজরী-ঘনিষ্ঠ নেত্রী প্রকাশ্যে এই ধরনের মন্তব্য করায় দলে কেজরীর নেতৃত্ব ঘিরেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।

Advertisement

সাজিয়ার মতোই কেজরীবালের সমালোচনা করে দল ছেড়েছেন আর এক শীর্ষ নেতা গোপীনাথ। বিশেষ করে যে ভাবে কেজরীবাল জামিন নিতে অস্বীকার করে জেল যাওয়ার রাস্তা বেছে নিয়েছেন, তা সমর্থনযোগ্য নয় বলে মন্তব্য করেছেন গোপীনাথ। নিজের ব্লগে তিনি বলেছেন, “এক জন রাজনৈতিক দলের নেতাকে অনেক দায়িত্বশীল আচরণ করতে হয়। কিন্তু প্রচারে থাকতে বা জনতার সহানুভূতি পেতে এই ধরনের আচরণ মানা যায় না।”

সাজিয়া বা গোপীনাথের মতো শীর্ষ নেতারা মুখ খোলায় বিপাকে পড়ে আপ নেতৃত্ব এখন তাঁদের ক্ষোভ প্রশমনের চেষ্টা চালাচ্ছেন। সাজিয়ার অসন্তোষের আঁচ কালই পেয়েছিলেন আপ নেতৃত্ব। সকালে দলের নেতা সোমনাথ ভারতী দেখা করেন সাজিয়ার সঙ্গে। তার পরেও সিদ্ধান্ত বদলাননি সাজিয়া। দলের আর এক নেতা আশুতোষ দাবি করেছেন, “সাজিয়ার সঙ্গে কথা বলে দল তাঁর ক্ষোভ নিরসনের জন্য চেষ্টা চালাবে।” কিন্তু দলের আশঙ্কা, সাজিয়া বা গোপীনাথের পথ ধরে আরও কিছু আপ নেতা ইস্তফার পথে হাঁটতে পারেন। আপাতত সেই ভাঙন রুখতেই তৎপর নেতারা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন