এপ্রিলেই ব্রডগেজ ট্রেনের আশ্বাস

১৮ বছরের অপেক্ষা ছ’মাসে শেষ করতে তৎপর উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেল। নির্মীয়মাণ লামডিং-শিলচর ব্রডগেজ লাইনে তাই এ বছরের ১ এপ্রিল থেকে যাত্রিবাহী ট্রেন চালাতে চান রেল কর্তৃপক্ষ। তাঁরা জানান, ফেব্রুয়ারির মধ্যেই পরীক্ষামূলক ভাবে ওই লাইনে ট্রেনের ইঞ্জিন পৌঁছবে শিলচরে। উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলের মুখ্য প্রশাসনিক অফিসার (নির্মাণ) অজিত পণ্ডিত বলেন, “দ্রুত গতিতে কাজ চলছে। মার্চের শুরুতেই ওই লাইনে প্রথমে মালগাড়ি চলবে। এপ্রিলে যাবে যাত্রিবাহী ট্রেন।”

Advertisement

উত্তম সাহা

শিলচর শেষ আপডেট: ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০০:০৯
Share:

লামডিং-শিলচর ব্রডগেজ লাইন। বুধবার শিলচর স্টেশনে। ছবি: স্বপন রায়।

১৮ বছরের অপেক্ষা ছ’মাসে শেষ করতে তৎপর উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেল।

Advertisement

নির্মীয়মাণ লামডিং-শিলচর ব্রডগেজ লাইনে তাই এ বছরের ১ এপ্রিল থেকে যাত্রিবাহী ট্রেন চালাতে চান রেল কর্তৃপক্ষ। তাঁরা জানান, ফেব্রুয়ারির মধ্যেই পরীক্ষামূলক ভাবে ওই লাইনে ট্রেনের ইঞ্জিন পৌঁছবে শিলচরে। উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলের মুখ্য প্রশাসনিক অফিসার (নির্মাণ) অজিত পণ্ডিত বলেন, “দ্রুত গতিতে কাজ চলছে। মার্চের শুরুতেই ওই লাইনে প্রথমে মালগাড়ি চলবে। এপ্রিলে যাবে যাত্রিবাহী ট্রেন।”

লামডিং থেকে শিলচর পর্যন্ত ব্রডগেজ লাইন বসাতে গত বছর ১ অক্টোবর ওই রুটের মিটারগেজে ছ’মাস ট্রেন চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। রেলের ‘মেগাব্লকে’ (ট্রেন চলাচল বন্ধ রাখা) উদ্বেগ ছড়ায় বরাক উপত্যকায়। স্থানীয় বাসিন্দাদের বক্তব্য, ২০১ কিলোমিটার দীর্ঘ ব্রডগেজ প্রকল্পের শিলান্যাস হয় ১৯৯৬ সালে। ২০০৬ সালে তার উদ্বোধনের কথা ছিল। কিন্তু সময়ে কাজ শেষ হয়নি। ২০১৪-র অক্টোবরে মিটারগেজে ট্রেন চলাচল বন্ধের ঘোষণায় সে কারণে আশঙ্কা ছড়ায়। রেলকর্তারা আশ্বাস দিয়েছিলেন, ছ’মাসের মধ্যেই ব্রডগেজ লাইনে ট্রেন চলবে। এক রেলকর্তার মন্তব্য, “যে ভাবে কাজ চলছে, তাতে ১ এপ্রিলের দিন পাঁচেক আগেই ওই লাইনে যাত্রিবাহী ট্রেন চলতে পারে।”

Advertisement

ব্রডগেজ লাইনের কাজ দ্রুত শেষ করার দাবিতে এত দিন যে সব সংগঠন আন্দোলন করেছে, তাঁরা এখন অন্য কারণে দুশ্চিন্তায়। ‘অল বরাক ইয়ুথ-স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন’ (অবিসা), ‘ব্রডগেজ রূপায়ণ সংগ্রাম কমিটি’ ও ‘নাগরিক অধিকার রক্ষা সংগ্রাম পরিষদ’-এর বক্তব্য— সময়ের মধ্যে ব্রডগেজ পরিষেবা চালুর কথা তো বলা হচ্ছে, কিন্তু যাত্রী সুরক্ষার দিকেও নজর রাখতে হবে। অবিসা-র মুখ্য আহ্বায়ক বাহারুল ইসলাম বড়ভুঁইয়া বলেন, “সময়ে কাজ শেষ করাই মূল লক্ষ্য হলে, যে কোনও অঘটন ঘটতে পারে।” ব্রডগেজ রূপায়ণ সংগ্রাম কমিটির আহ্বায়ক অজয় রায় বলেন, “ওই লাইনে ১২ নম্বর সুড়ঙ্গ দু’বার ভেঙেছে। এক বার গত বছরের জুলাইয়ে, পরের বার অক্টোবরে। সে বার পুরো সুড়ঙ্গটাই ভেঙে গিয়েছিল। তা ছাড়া ১৬ নম্বর সুড়ঙ্গেও সমস্যা রয়েছে। ব্রডগেজ লাইনের কাজ দেখতে তাই নিয়ে আসা হোকবিশেষজ্ঞদের।” নাগরিক অধিকার রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক হরিদাস দত্ত বলেন, “বর্ষাকালে লাইনে জল জমা রুখতে উপযুক্ত ব্যবস্থা করতে হবে।”

রেল কর্তৃপক্ষ অবশ্য জানিয়েছে, যাত্রী সুরক্ষার সঙ্গে কোনও ভাবে আপস করা হবে না। লামডিং-শিলচর ব্রডগেজ তৈরির পর বদরপুর-আগরতলা রুটে একই ভাবে মিটারগেজ সরিয়ে ব্রডগেজ লাইন বসানোর কাজ হবে। ওই রুটে এ বছর ১ অক্টোবর থেকে ‘মেগাব্লক’ শুরু হবে। কাজ শেষ হবে ২০১৬ সালের ৩১ মার্চের মধ্যে। এখন লামডিংয়ের পর থেকে মাত্র এক জোড়া ট্রেন চলাচল করে। করিমগঞ্জ থেকে ওই ট্রেন যায় আগরতলায়। ফের ফেরে করিমগঞ্জে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, সব সময়ই তাতে প্রচুর ভিড় থাকে। ট্রেনে ওঠার সুযোগ না পেয়ে অনেক যাত্রী স্টেশন থেকে বাড়ি ফিরে যান। সমস্যার কথা মেনে নিয়েও রেলকর্তারা জানিয়েছেন, আপাতত ওই রুটে নতুন ট্রেন চালানো সম্ভব নয়। ‘মেগাব্লক’ শুরু হওয়ার আগে পর্যন্ত এমন পরিস্থিতি থাকবে।

এ দিকে, লামডিং-শিলচর ব্রডগেজের কাজ বন্ধের হুমকি দিয়েছেন ডিএইচডি জঙ্গি সংগঠনের প্রাক্তন শীর্ষ নেতা দিলীপ নুনিসা। তিনি জানিয়েছেন, ডিএইচডি-র সহকারী সাধারণ সম্পাদক মাইজু ডিমাসার খুনের তদন্ত সিবিআই-এর হাতে তুলে না দেওয়া হলে, ১৭ ফেব্রুয়ারি থেকে ডিমা হাসাও জেলায় ব্রডগেজ বা ইস্ট-ওয়েস্ট করিডরের নির্মাণকাজ চলতে দেওয়া হবে না। এতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলের মুখ্য প্রশাসনিক অফিসার (নির্মাণ) অজিত পণ্ডিত। তিনি বলেন, “দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর ওই প্রকল্পের কাজ শেষ হতে চলেছে। এখন তাতে বাধা দেওয়া হলে সমস্যা হবে।” জঙ্গিনেতার হুঁশিয়ারিতে ব্রডগেজ প্রকল্পের শ্রমিক-কর্মীদের মধ্যেও আশঙ্কা ছড়িয়েছে।

গত ৯ জানুয়ারি আততায়ীদের গুলিতে মাইজুর মৃত্যু হয়। এখনও পুলিশ কাউকে ধরতে পারেনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন