আয়ু ফুরনোর আগেই ময়না তদন্ত শুরু হয়ে গিয়েছে। মনমোহন সরকারের মেয়াদ শেষের দিকে এগোচ্ছে। কার কোথায় দোষ ছিল, তা নিয়েও চাপানউতোর শুরু হয়েছে।
আগামিকাল যোজনা কমিশনের বৈঠকে যোগ দিতে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ। যোজনা কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে সম্ভবত এটাই শেষ বৈঠক তাঁর। বৈঠকের আগে যোজনা কমিশনের তরফে প্রধানমন্ত্রীকে যে নোট পাঠানো হয়েছে, তা নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে। কারণ ওই নোটে দেশের আর্থিক বৃদ্ধির হার কেন কমে এল, তার কারণ খুঁজতে গিয়ে মনমোহন সরকারের বেশ কিছু মন্ত্রকের দিকেই আঙুল তোলা হয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে রেল মন্ত্রক ও অর্থ মন্ত্রকও। যোজনা কমিশনের মূল বক্তব্য হল, অর্থনীতিতে গতি আনার জন্য কমিশনের তরফে যে সব নতুন পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল বা উদ্ভাবনী পরিকল্পনার কথা বলা হয়েছিল, তার বেশির ভাগই বিভিন্ন মন্ত্রক গ্রহণ করেনি।
২০১২ থেকে শুরু হয়েছে দ্বাদশ পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার সময়কাল। যোজনা কমিশনের অনুমান ছিল, এই পাঁচ বছরে দেশের আর্থিক বৃদ্ধির হার গড়ে ৮ শতাংশ থাকবে। কিন্তু যোজনাকালের প্রথম অর্থবর্ষ ২০১২-’১৩-তে আর্থিক বৃদ্ধির হার ছিল মাত্র ৪.৫ শতাংশ। সদ্য শেষ হওয়া ২০১৩-’১৪ অর্থবর্ষে বৃদ্ধির হার ৪.৯ শতাংশ ছোঁবে বলে কেন্দ্রীয় পরিসংখ্যান দফতরের প্রাথমিক হিসেব। আর চলতি বছরে ২০১৪-’১৫-তে বৃদ্ধির হার ৫.৫ শতাংশে পৌঁছে যেতে পারে বলে অনুমান করা হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে যোজনা কমিশনের ৮ শতাংশের গড় বৃদ্ধির হার কীভাবে বাস্তবায়িত হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। কারণ তার জন্য শেষ দুই বছরে বৃদ্ধির হার ১২ শতাংশের উপরে নিয়ে যেতে হবে। যা কার্যত অসম্ভব। ফলে যোজনা কমিশনের পূর্বাভাস সংশোধন করা হবে কি না, তা নিয়েই প্রশ্ন উঠেছে।
সরকারি সূত্রের খবর, নতুন সরকার গঠনের পর চলতি বছরের শেষেই এ নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে। তখন অবশ্য যোজনা কমিশনের চেহারাও পাল্টে যাবে। কারণ মনমোহন সরকারের মেয়াদের সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠ যোজনা কমিশনের উপাধ্যক্ষ মন্টেক সিংহ অহলুওয়ালিয়া ও অন্য সদস্যদেরও মেয়াদ ফুরোবে। ঠিক তার আগে বৃদ্ধির হার কমে আসার কারণ যোজনা কমিশন এখন সরকারের উপরেই চাপাতে চাইছে কি না, কমিশনের নোট ঘিরে সেই প্রশ্ন উঠেছে।
যোজনা কমিশনের অবশ্য বক্তব্য, এতে পারস্পরিক দোষারোপের কোনও প্রশ্ন নেই। গত দশ বছরে ইউপিএ সরকারকে কী কী উদ্ভাবনী পরিকল্পনা দেওয়া হয়েছিল, সেগুলোরই তালিকা পাঠানো হয়েছে প্রধানমন্ত্রীকে। মন্টেকের ব্যাখ্যা, কমিশনের সদস্যরা অনেক সময়ই নতুন নতুন চিন্তাভাবনা জুগিয়ে থাকেন সরকারকে। যার মধ্যে অনেক কিছুই সঙ্গে সঙ্গে গৃহীত হয় না। কোনও সরকারই তা করে না। কিন্তু তার অর্থ এই নয় যে এ সব নিয়ে অভিযোগ করা হচ্ছে। ওই নোটে শুধু এটাই বলা হয়েছে যে যোজনা কমিশন নতুন চিন্তাভাবনা জোগান দেওয়ার একটা ব্যবস্থা তৈরি করে ফেলেছে।
বিজেপির অভিযোগ, ইউপিএ সরকারের জমানায় যোজনা কমিশন ও সনিয়া গাঁধীর জাতীয় উপদেষ্টা পরিষদে মূলত স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ও সামাজিক আন্দোলনের কর্মীদের এনে বসানো হয়েছে। তার ফলেই আর্থিক বৃদ্ধিতে ধাক্কা লেগেছে।
আগামিকাল প্রধানমন্ত্রী যোজনা কমিশনের বৈঠকে কী বলেন তাই এখন দেখার।