কৈমুরের মাওবাদী অঞ্চলে সবুজ বিপ্লব রীতেশের

এক সময়ে রক্তের লালে ভিজে থাকত সেখানকার মাটি। এখন তাতেই সবুজের সমারোহ! এক সময় মাওবাদী অধ্যুষিত রোহতাস জেলার কৈমুর উপত্যকার বদলে যাওয়া ছবিটা আজ এমনই। খেতের সবুজ ফসল বিক্রি করে পয়সা জমছে সেখানকার কৃষক পরিবারের ঘরে ঘরে। এ জন্য তাঁরা সবাই-ই কৃতিত্ব দিচ্ছেন এক জনকেই।

Advertisement

স্বপন সরকার

পটনা শেষ আপডেট: ২২ অগস্ট ২০১৪ ০৩:০৯
Share:

কৈমুরের গ্রামে নিজের কৃষিজমিতে রীতেশ। ছবি: সঞ্জয় চৌধুরী

এক সময়ে রক্তের লালে ভিজে থাকত সেখানকার মাটি। এখন তাতেই সবুজের সমারোহ!

Advertisement

এক সময় মাওবাদী অধ্যুষিত রোহতাস জেলার কৈমুর উপত্যকার বদলে যাওয়া ছবিটা আজ এমনই। খেতের সবুজ ফসল বিক্রি করে পয়সা জমছে সেখানকার কৃষক পরিবারের ঘরে ঘরে। এ জন্য তাঁরা সবাই-ই কৃতিত্ব দিচ্ছেন এক জনকেই। তিনি রীতেশ কুমার পাণ্ডে। দেড় দশক আগে জঙ্গিদের অত্যাচারে কৈমুর ছেড়ে উত্তরপ্রদেশে পালিয়েছিলেন রীতেশের পূর্বসূরিরা। পড়াশোনা শেষ হওয়ার পর ওই যুবক কাজ শুরু করেন লখনউয়ে। কিন্তু দিন পরিবর্তনের স্বপ্ন নিয়ে কয়েক বছর আগে তিনি ফেরেন নিজের জন্মভূমিতে।

স্বপ্নটা বাস্তব করার রাস্তাটা সহজ ছিল না। কৈমুরের পাহাড়ি শুষ্ক এলাকা আর্থ-সামাজিক দিক থেকে অনেকটা পিছিয়ে। ফসল ফলানোর উপায়ও ছিল না। জলের অভাব ছিল, মাটি ছিল বন্ধুর, শুক্নো। বন্ধ্যা ওই জমিরই প্রাণ ফেরালেন রীতেশ।

Advertisement

উত্তরপ্রদেশে থাকাকালীন লখনউয়ের ‘সেন্ট্রাল ইনস্টিটিউট অব মেডিসিন্যাল অ্যান্ড অ্যারোম্যাটিক প্ল্যান্ট’ সংস্থায় প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন রীতেশ। সেই সূত্রে কাজ পান। এক দিন জানতে পারেন, পুলিশের তৎপরতায় পাহাড় ঘেরা কৈমুর ছেড়ে পালিয়েছে মাওবাদীরা। সেখানে ফেরার তাগিদ তখনই অনুভব করেন। সপরিবার সেই গ্রামে চলে আসেন।

সংসার গুছিয়ে নেওয়ার পর বাড়ির সামনের জমিতে ফসল ফলানোর চেষ্টা করেন রীতেশ। ঔষধি গাছের চারা বসান। সেচের জলের অভাব ছিল। সে সমস্যা তিনিই দূর করেন। গ্রামের লাগোয়া পাহাড়ের ঝর্ণা থেকে খাল কেটে জল নিয়ে আসেন তাঁর জমিতে। ঔষধি গাছের জন্য ততটা জলের প্রয়োজন হয় না। তাই কয়েক দিনের মধ্যেই সবুজ ভরে যায় রীতেশের ২৫ একর জমি। ঘৃতকুমারী, অশ্বগন্ধার গাছ দ্রুত মাথা তোলে।

রীতেশের দেখানো পথে এলাকার শ’খানেক কৃষিজীবীও বাঁচার নতুন রসদ খুঁজে পান। সরকারি স্তরে সাহায্য না-মিললেও হারতে রাজি ছিলেন না কেউ। রীতেশ বলেন, “চাষের এলাকা এখন আরও বাড়াতে চাই। পড়শি উত্তরপ্রদেশ, ঝাড়খণ্ডের বন্ধুর এলাকায় ছড়িয়ে দিতে চাই ঔষধি গাছ চাষের সুফল।” রোহতাসের এক দিকে উত্তরপ্রদেশের শোনভদ্র, অন্য দিকে ঝাড়খণ্ডের পলামু, লাতেহার। ওই যুবকের কথায়, “সরকারি সাহায্য পেলে ভালো কিছু করা যেত। তিন রাজ্যের কয়েকটি এলাকায় যদি ঔষধি গাছ ফলানো যায়, তবে স্থানীয় মানুষের অনেক সুবিধা হবে।”

এক সময় তাঁর জন্মভূমির বিস্তীর্ণ এলাকা ছিল মাওবাদীদের দখলে। জমি দখল, লুটপাটের লড়াইয়ে রক্তস্রোত নামত। এখন অন্য রকম এলাকা দখলের নেতৃত্ব রীতেশের হাতে। তবে খুনোখুনি সংঘর্ষের লড়াই নয়, তা এক সবুজ-বিপ্লব।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন