কমিশনই ঢাল, মেরুকরণের প্যাঁচ কষছেন মোদী-মুলায়ম

মল্লযুদ্ধের শেষ রাউন্ড। কিন্তু জিততে মরিয়া প্রতিপক্ষরা পরস্পরের দিকে যতটা না, তার চেয়ে বেশি তেড়ে যাচ্ছে মাঝখানে থাকা রেফারির দিকে! নরেন্দ্র মোদীর কেন্দ্র বারাণসীতে আজ দিনভর দেখা গেল এই কৌশলী ভোটযুদ্ধ। যা চলবে কালও। এবং আরও পাঁচ দিন। নরেন্দ্র মোদীর এক হাতে রাম নাম, অন্য হাতে জাতপাত। গোবলয়ে তাঁর শেষ দুই অস্ত্রই ভোঁতা করে দিতে আখড়ায় নেমেছেন মায়াবতী-মুলায়ম। জাতের খেলায় মায়াবতী, আর ধর্মযুদ্ধে মুলায়ম। মজার ব্যাপার হল, বিজেপির তরফে মুলায়ম-মায়াবতীকে আক্রমণ করা হলেও তোপটা বেশি দাগা হচ্ছে নির্বাচন কমিশনের দিকে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৮ মে ২০১৪ ০২:৫৯
Share:

মল্লযুদ্ধের শেষ রাউন্ড। কিন্তু জিততে মরিয়া প্রতিপক্ষরা পরস্পরের দিকে যতটা না, তার চেয়ে বেশি তেড়ে যাচ্ছে মাঝখানে থাকা রেফারির দিকে! নরেন্দ্র মোদীর কেন্দ্র বারাণসীতে আজ দিনভর দেখা গেল এই কৌশলী ভোটযুদ্ধ। যা চলবে কালও। এবং আরও পাঁচ দিন।

Advertisement

নরেন্দ্র মোদীর এক হাতে রাম নাম, অন্য হাতে জাতপাত। গোবলয়ে তাঁর শেষ দুই অস্ত্রই ভোঁতা করে দিতে আখড়ায় নেমেছেন মায়াবতী-মুলায়ম। জাতের খেলায় মায়াবতী, আর ধর্মযুদ্ধে মুলায়ম। মজার ব্যাপার হল, বিজেপির তরফে মুলায়ম-মায়াবতীকে আক্রমণ করা হলেও তোপটা বেশি দাগা হচ্ছে নির্বাচন কমিশনের দিকে। আবার কমিশন বেশি সক্রিয় হয়ে ভোট মেরুকরণের পথে বাধা হয়ে উঠুক, সেটাও চাইছেন না মুলায়ম বা মোদী।

মোদী বারাণসী যাচ্ছেন কাল। তার আগেই সেখানে ঘাঁটি গেড়েছেন তাঁর দুই সেনাপতি অরুণ জেটলি ও অমিত শাহ। আজ দিনভর তাঁরা এই অভিযোগ তুলে সরব ছিলেন যে, বারাণসী শহরে মোদীর সভা, গঙ্গা-আরতি ও শহরের এক পাঁচতারা হোটেলে বিশিষ্টদের সঙ্গে বৈঠকের অনুমতি দিচ্ছেন না রিটার্নিং অফিসার। প্রাঞ্জল যাদব নামে এই আমলা আসলে মুলায়ম সিংহের ইশারায় কাজ করছেন। কিন্তু প্রকাশ্যে সেই অভিযোগ না এনে জেটলিরা দায়ী করেন নির্বাচন কমিশনকেই। বলেন, স্থানীয় আমলা না হয় রাজনীতির চাপে মোদীকে বারাণসীতে রুখছেন। কিন্তু নির্বাচন কমিশন কেন তাঁকে সরাচ্ছে না? কমিশন মোদীর সভার জন্য বিকল্প ময়দান দিতে চাইলেও বিজেপির তাতে সায় দেয়নি। এ দিন রাতে নাগাদ কমিশন যখন জানিয়ে দেয়, গঙ্গা-আরতি ও হোটেলে বৈঠক করার অনুমতি দেওয়া হচ্ছে, তখন বিজেপির তরফে জানিয়ে দেওয়া হয়, এত দেরিতে আর প্রস্তুতি নেওয়া যাবে না। বারাণসীতে কাল সভা করবেন না মোদী। বরং বারাণসীতে ও দিল্লিতে কমিশন দফতরে ধর্না দিয়েই বিরোধীদের ‘মোদী-রোকো’ রাজনীতির প্রতিবাদ জানাবে বিজেপি।

Advertisement

কেন? বিজেপি নেতারা বলছেন, লালকৃষ্ণ আডবাণীর রথযাত্রার সময় কে তাঁকে গ্রেফতার করবেন, তা নিয়ে রীতিমতো টানাটানি শুরু হয়েছিল মুলায়ম ও লালুপ্রসাদের মধ্যে। কিন্তু আডবাণী বিহারে ঢুকতেই ভৌগোলিক সুবিধা নিয়ে সমস্তিপুরে তাঁকে গ্রেফতার করে বাজিমাত করেন লালু। এটাও সেই রকম। মুলায়মের চাই সংখ্যালঘু ভোট। মোদীকে রুখে তিনিও সেই সম্প্রদায়ের মাসিহা হয়ে উঠতে চাইছেন। কংগ্রেস ও আম আদমি পার্টির অভিযোগ, বারাণসীতে যাওয়ার আগেই মোদী গঙ্গা নিয়ে প্রচার করছেন। গঙ্গা-আরতির কর্মসূচি নিয়েছেন মেরুকরণের উদ্দেশ্যেই।

বেনিয়াবাগে যে ময়দানে মোদী সভা করতে চাইছিলেন, সেটা মুসলিম অধ্যুষিত এলাকা। মোদী যখন এ ভাবে হিন্দুত্ব করছেন, মুলায়মও তখন তাঁকে রুখে মুসলমান ভোট টানতে চাইছেন। বিজেপিও এই সুযোগে মোদীকে বারাণসীতে রুখে দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে বলে ধুয়ো তুলে মেরুকরণের ও-পিঠের সুযোগ নিতে চাইছে। তাই মোদীকে আটকানোর বিষয়টিকে রীতিমতো জাতীয় প্রসঙ্গ করে তুলতে তৎপর হয়ে উঠেছেন অরুণ জেটলি। তিনি আজ তিনটি চিঠি লিখেছেন নির্বাচন কমিশনকে। নিজে কথা বলেছেন মুখ্য নির্বাচনী কমিশনারের সঙ্গে। কমিশনকেই কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে জেটলিদের বক্তব্য, প্রথমে স্থানীয় আমলা অনুমতি দেওয়ার কথা বললেও পরে এক বেসরকারি সংস্থার নামে পিছনের তারিখ দিয়ে সেই ময়দানটি বুক করানো হয়। পরে রাজ্য সরকারের গোয়েন্দা সূত্র উদ্ধৃত করে এমনও বলা হয় যে, মোদীর জন্য বারাণসী শহর নিরাপদ নয়।

জেটলি আজ সন্ধেয় অমিত শাহকে পাশে নিয়ে বারাণসীতে সাংবাদিক বৈঠক করে জানান, কাল তাঁরা বারাণসীতেই ধর্নায় বসবেন। আর দিল্লিতে অন্য কেন্দ্রীয় নেতারা। আর মোদীর সভা না হলেও তাঁকে বারাণসীতে দলের দফতরে নিয়ে আসা হবে। এবং সেটাকে কার্যত রোড-শোয়ে পরিণত করা হবে।

নির্বাচন কমিশন অবশ্য সন্ধেতেই সাংবাদিক বৈঠক করে জানায়, কোনও আমলা পক্ষপাত করলে তাঁর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অভিযোগ খতিয়ে দেখেই যথোচিত ব্যবস্থা নেওয়ারও আশ্বাস দেয় কমিশন। এর পর রাতে তারা জানায় বেনিয়াবাগে সভা ছাড়া বারাণসীতে বিজেপি-র অন্য সব কর্মসূচির অনুমতি দেওয়া হচ্ছে। বিজেপি এতে জানিয়ে দেয় ধর্নার পথেই হাঁটবে তারা। কারণ বিষয়টি নিয়ে প্রচারই মূল লক্ষ্য এখন বিজেপির। দলের এক শীর্ষ নেতা আজ স্পষ্ট বলেন, “কমিশন কোনও ব্যবস্থা না নিলেই আমাদের মঙ্গল। সে ক্ষেত্রে আমরাও কমিশনকে দুষে মোদী-হাওয়া তুলতে পারব।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন