কর্পোরেট গুপ্তচরবৃত্তির ঘটনায় নতুন মোড়।
পেট্রোলিয়াম মন্ত্রকের গোপন নথি চুরি নিয়ে যখন তোলপাড় চলছে, তখনই চুরির রহস্য পৌঁছে গেল কেন্দ্রীয় সরকারের আরও দুটি মন্ত্রকে। কয়লা ও বিদ্যুৎ মন্ত্রকে গুরুত্বপূর্ণ নথি চুরির অভিযোগে দিল্লি পুলিশ লোকেশ শর্মা নামে এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেছে। আটক করা হয়েছে আরও ছ’জনকে। এ ক্ষেত্রেও একই ভাবে চুরির সঙ্গে শিল্প মহলের যোগাযোগের সম্ভাবনা সামনে এসে পড়েছে। চক্রে আর কারা জড়িয়ে রয়েছে, কোন কোন ব্যক্তি বা কর্পোরেট সংস্থা লাভবান হয়েছে, টাকা পয়সার কি ধরনের লেনদেন হয়েছে, এখন সে সব খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এ জন্য দিনভর দিল্লি ও তার উপকন্ঠের শহরগুলিতে বিভিন্ন জায়গায় তল্লাশি চালিয়েছে পুলিশ। আরও গ্রেফতারির সম্ভাবনা রয়েছে।
দিল্লি পুলিশের জয়েন্ট কমিশনার (ক্রাইম) রবীন্দ্র যাদব জানিয়েছেন, পেট্রোলিয়াম মন্ত্রকে গোপন নথি চুরির ঘটনায় অভিযুক্ত শান্তনু শইকিয়া, প্রয়াস জৈনদের জেরা করার সময়েই জনৈক লোকেশ শর্মার কথা সামনে আসে। তাঁর দাবি, লোকেশ দিল্লির শাস্ত্রী ভবনে কয়লা মন্ত্রক ও শ্রমশক্তি ভবনে বিদ্যুৎ মন্ত্রক থেকে গোপন নথি চুরির কাজে যুক্ত। মন্ত্রকগুলির কর্মীদের হাত করে সহযোগীদের নিয়ে সে চুরির কারবার চালিয়ে যাচ্ছিল।
পশ্চিম দিল্লির উত্তমনগরের বাসিন্দা লোকেশকে দ্বারকা এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়। লোকেশ ‘ইনফ্রেলাইন’ নামে জ্বালানি সংক্রান্ত একটি পরামর্শদাতা সংস্থার কর্মী। দিল্লির উপকন্ঠে নয়ডায় তার দফতর। পুলিশের দাবি, তার কাছ থেকে কয়লা ও বিদ্যুৎ মন্ত্রকের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ নথি পাওয়া গিয়েছে। মিলেছে দু’টি ভুয়ো সরকারি পরিচয়পত্র। এগুলি নিয়েই কয়লা ও বিদ্যুৎ মন্ত্রকে পৌঁছে যেত সে। লোকেশের বাবা সরকারি দফতরে গাড়ি চালাতেন। চুরির জন্য মন্ত্রকে পৌঁছনোর রাস্তা খুঁজে বের করাও এ জন্য তার কাছে সহজ হয়েছে। দিল্লি পুলিশের ক্রাইম ব্রাঞ্চ লোকেশের বিরুদ্ধে অবৈধ অনুপ্রবেশ, চুরি, অপরাধমূলক ষড়যন্ত্রের অভিযোগ এনে আলাদা ভাবে এফ আই আর দায়ের করেছে। এর সূত্র ধরেই কয়লা মন্ত্রক থেকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তিন জন, বিদ্যুৎ মন্ত্রক থেকে এক জনকে আটক করেছে দিল্লি পুলিশ।
যাদব জানান, ধৃত লোকেশ নিজের সংস্থার জন্যই শুধু গোপন নথি জোগাড় করত না, অন্য বেশ কয়েকটি পরামর্শদাতা সংস্থাকেও চুরির নথি সরবরাহ করত সে। শান্তনু শইকিয়া, প্রয়াস জৈনরা ছাড়া আর কাদের হাতে সে চুরি করা কাগজপত্র তুলে দিয়েছে, তা তদন্ত করে দেখা হছে। দিল্লির একটি আদালত লোকেশকে তোলা হলে তাকে পাঁচ দিনের পুলিশ হেফাজতে পাঠানো হয়েছে।
অন্য দিকে, পেট্রোলিয়াম মন্ত্রকে গোপন নথি চুরির ঘটনায় গ্রেফতার হওয়া সাংবাদিক শান্তনু শইকিয়া সহ চার জন এ দিন অভিযোগ এনেছেন, জেরার সময়ে তাঁদের সাদা কাগজে সই করিয়ে নিয়েছে পুলিশ। সাংবাদিকদের কাছে শান্তনুর দাবি, তিনি তিরিশ বছর ধরে সাংবাদিকতা করছেন। কিন্তু এই মামলায় তাঁকে ফাঁসানো হচ্ছে। তাঁদের এগারো দিনের জেল হেফাজতে পাঠিয়েছে আদালত।
আগেই গোটা প্রশাসনে তথ্য চুরি চক্রের জাল ছড়িয়ে থাকার কথা বুঝতে পেরেছিলেন গোয়েন্দারা। কয়লা ও বিদ্যুৎ মন্ত্রকের তথ্য চুরির অভিযোগে লোকেশের গ্রেফতারি সেই ধারণাকে আরও দৃঢ় করল।