ঘরে ঢুকে গালিগালাজ, বিধায়ক তাড়ালেন সজল

সরকার পক্ষের দুই বিধায়ককে নিজের ঘর থেকে বের করে দিলেন ঝাড়খণ্ডের ভারপ্রাপ্ত মুখ্যসচিব সজল চক্রবর্তী! অভিযোগ, ওই দুই বিধায়ক সজলবাবুর সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেছিলেন। এ নিয়ে মুখ্যসচিব রীতিমতো সাংবাদিক বৈঠকও করেন। সেখানেই তিনি বলেন, “ওই দুই বিধায়কের অভব্যতা এমন পর্যায়ে যায় যে আমি বাধ্য হয়েই তাঁদের ‘গেট আউট’ বলে ঘর থেকে বের করে দিই।”

Advertisement

প্রবাল গঙ্গোপাধ্যায়

রাঁচি শেষ আপডেট: ২৫ জুন ২০১৪ ০২:৪৭
Share:

ঝাড়খণ্ডের ভারপ্রাপ্ত মুখ্যসচিব সজল চক্রবর্তী

সরকার পক্ষের দুই বিধায়ককে নিজের ঘর থেকে বের করে দিলেন ঝাড়খণ্ডের ভারপ্রাপ্ত মুখ্যসচিব সজল চক্রবর্তী! অভিযোগ, ওই দুই বিধায়ক সজলবাবুর সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেছিলেন। এ নিয়ে মুখ্যসচিব রীতিমতো সাংবাদিক বৈঠকও করেন। সেখানেই তিনি বলেন, “ওই দুই বিধায়কের অভব্যতা এমন পর্যায়ে যায় যে আমি বাধ্য হয়েই তাঁদের ‘গেট আউট’ বলে ঘর থেকে বের করে দিই।” মুখ্যসচিবের বক্তব্য, ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চার ওই দুই বিধায়কের কথা তিনি বিধানসভার স্পিকার এবং মুখ্যমন্ত্রীকে জানিয়েছেন। প্রয়োজনে রাজ্যপালকেও জানাবেন। তবে ওই দুই বিধায়ক পলুস সোরেন ও আকিল আখতার দমে যেতে নারাজ। মুখ্যসচিবের ‘স্পর্ধা’-কে চ্যালেঞ্জ করে তাঁরা মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেনের ঘরের বাইরে ধর্নায় বসেন।

Advertisement

রাঁচির প্রোজেক্ট ভবনে আজ দুপুরে সংখ্যালঘু উন্নয়নের একটি প্রকল্প নিয়ে বৈঠক ছিল। কেন্দ্রীয় সরকারি এই প্রকল্পের পর্যালোচনায় কেন্দ্রের প্রতিনিধিদের থাকার কথা ছিল। কিন্তু তাঁরা না আসায় শেষ মুহূর্তে বৈঠকটি বাতিল হয়। ওই বৈঠকেই যোগ দিতে আসেন জেএমএমের দুই বিধায়ক আকিল আখতার ও পলুস সোরেন। তাঁদের জানিয়ে দেওয়া হয়, বৈঠক হচ্ছে না। মুখ্যসচিবের দফতরের আধিকারিকরা জানান, বৈঠক হচ্ছে না জানার পরে ওই দুই বিধায়ক ভারপ্রাপ্ত মুখ্যসচিব সজলবাবুর সঙ্গে দেখা করতে চান। তাঁদের জানানো হয়, সজলবাবু অন্য একটি বৈঠকে ব্যস্ত। পরে দেখা করবেন। অভিযোগ, অপেক্ষা করতে বলা সত্ত্বেও দুই বিধায়ক চেঁচামেচি শুরু করেন। পরে কনফারেন্স হলের দরজা ঠেলে ঢুকে পড়েন। এর পরেই সজলবাবুর সঙ্গে দুই বিধায়কের বচসা বাধে।

সজলবাবুর কথায়, “বিধায়কদের অপেক্ষা করতে বলে আমি তাঁদের কফি দিতে বলি। ওঁরা হঠাৎ দরজা ঠেলে ঢুকে আমার সঙ্গে বিশ্রী ভাবে কথা বলতে শুরু করেন। চিৎকার করেন। গালাগালিও দেন। প্রথমে আমি চুপচাপই ছিলাম। পরে আমার ধৈর্যের বাঁধ ভাঙে। তখন আমি ওঁদের বলি, আমি তেমন অফিসার নই যে এক জন বিধায়কের কাছে অপমানিত হয়েও চুপ করে থাকব। জাস্ট গেট আউট।” মুখ্যসচিবের ধমক খেয়ে দুই বিধায়ক প্রোজেক্ট ভবনেই মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেনের ঘরের সামনে ধর্নায় বসেন। সজলবাবুর অভিযোগ উড়িয়ে আকিল বলেন, “বারবার বৈঠক পিছোচ্ছিলেন মুখ্যসচিব। আমি সেটাই ওঁকে বলতে চেয়েছিলাম। কিন্তু উনি আমায় ঘর থেকে বের করে দেন। আমি কোনও অশ্রাব্য কথা বলিনি।”

Advertisement

আমলা-রাজনীতিক লড়াই সব সময়েই চলতে থাকে। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তা প্রকাশ্যে আসে না। মন্ত্রীর সঙ্গে সচিবের বিরোধের নজির তো পশ্চিমবঙ্গেই ভূরি-ভূরি। তবে এই লড়াইয়ে অধিকাংশ ক্ষেত্রে আমলারাই ‘সরকারের জন্য বলি প্রদত্ত’ হন। তৎকালীন কৃষি-বিপণন মন্ত্রী কলিমুদ্দিন শামসের সঙ্গে দফতরের সচিব অর্কপ্রভ দেবের ঝগড়া তো মন্ত্রীর ঘর ছাপিয়ে মহাকরণের অলিন্দে এসে গড়ায়। অর্কপ্রভকে বদলি হয়ে যেতে হয়। তৎকালীন তথ্য-সংস্কৃতি মন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের সঙ্গে তাঁর দফতরের সচিব অরুণ ভট্টাচার্যের বিরোধও সকলেরই জানা। সেখানেও বদলি হতে হয় অরুণবাবুকে। বুদ্ধবাবু মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর অবশ্য দু’জনের সম্পর্কের উন্নতি হয়। গত লোকসভা ভোটের সময় পশ্চিমবঙ্গেই ‘নিয়ম মেনে চলা’ এক বিডিও-র উপরে চড়াও হন শাসক দলের বিধায়ক। বিডিও-র পক্ষে তাঁর অনেক সহকর্মী দাঁড়ালেও ভোট মিটতেই তিনি চলে গিয়েছেন কম্পালসারি ওয়েটিং-এ।

পশ্চিমবঙ্গ ক্যাডারের এক পদস্থ আইএএস অফিসারের কথায়, “বেশির ভাগ ক্ষেত্রে নীতিগত কারণেই মতবিরোধ হয়। তা আমরা আমাদের চাকরির শর্তেই প্রকাশ্যে আনি না। আসলে আমলারা নেপথ্যে থেকেই কাজ করেন।” অন্য এক অফিসারের কথায়, “সজলবাবু সাংবাদিক বৈঠক ডেকে ঠিক করেননি।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন