নীতিগত ভাবে সীমান্ত সংলগ্ন ভারতীয় ভূখণ্ডে যে কোনও ধরনের নির্মাণে আপত্তি রয়েছে চিনা বাহিনীর। তাই ভারত-চিন সীমান্তে সড়ক-সহ অন্যান্য নির্মাণ সংক্রান্ত কাজের পরিধি বাড়ালে চিনা সেনা তা ভেস্তে দিতে পারে বলে আশঙ্কা করছে ভারত-তিব্বত সীমান্ত পুলিশ (আইটিবিপি)। নরেন্দ্র মোদী সরকার ক্ষমতায় এসেই ভারত-চিন সীমান্ত সুরক্ষিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। অথচ সড়ক তৈরির এই সিদ্ধান্তের কারণে আগামী দিনে তাদের আরও বেশি করে চিনা বাধার সম্মুখীন হতে হবে বলেই মনে করছেন বাহিনীর কর্তারা। ভারত ও চিনের মধ্যে ৩৪৮৮ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্ত রক্ষার দায়িত্ব রয়েছে আইটিবিপি-র।
গত সপ্তাহেই কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা ভারত-চিন সীমান্ত বরাবর দু’হাজার কিলোমিটার সড়ক বানানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। উদ্দেশ্য, উত্তর-পূর্বের চিন সীমান্তকে সুরক্ষিত করা। যাতে ভারত-চিন সীমান্তে সংঘাতের পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে দ্রুত সেনা পাঠানো সম্ভব হয়। এ দিকে কাজ শুরু হওয়ার আগেই বিষয়টি নিয়ে আপত্তি জানিয়েছে চিনের বিদেশ মন্ত্রক। কার্যত হুমকির সুরে বেজিং বলেছে, ভারত-চিন সীমান্ত সমস্যা এখনও মেটেনি। সেই সমস্যার সমাধানের আগে ভারত ওই ধরনের কোনও কাজ করলে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক তিক্ত হতে পারে। অন্য দিকে চিনের হুমকিকে অগ্রাহ্য করে কেন্দ্রও স্পষ্ট করে দিয়েছে, সরকার মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্ত রূপায়ণে অনড়।
দু’পক্ষের ‘রণং দেহি’ মনোভাবের কারণে আজ আইটিবিপি বাহিনীর ডিজি সুভাষ গোস্বামী কার্যত স্বীকার করে নেন, “আগামী দিনে সীমান্তে ভারত পরিকাঠামো সংক্রান্ত নির্মাণের কাজ বাড়ালে চিনা সৈন্যদের ভারতে অনুপ্রবেশ আরও বাড়তে পারে।” আইটিবিপি সূত্রের খবর, মূলত ভারতীয়দের কাজে বাধা দিতেই ওই বাহিনী সীমান্ত লঙ্ঘন করে থাকে। ভারতীয় ভূখণ্ডের দখল নেওয়া এদের লক্ষ্য নয়। অতীতেও দেখা গিয়েছে কাজ বন্ধ করলেই এরা নিজেদের জায়গায় ফিরে যায়। বাহিনীর কর্তারা মনে করছেন, ভারতের সঙ্গে
চিনের স্পষ্ট সীমানা বা কাঁটাতারের বেড়া না থাকায় অনায়াসে চিনা সেনা ঢুকে পড়ে।
গত মাসে লাদাখের চুমুর এলাকায় রাস্তা নির্মাণের কাজ বন্ধ করতে ভারতীয় ভূখণ্ডের বেশ কয়েক কিলোমিটার ভিতরে ঢুকে পড়েছিল তারা। বাধা দেন আইটিবিপি জওয়ানেরাও। প্রায় দু’সপ্তাহ ধরে আলোচনার পর সমস্যার সমাধান হয়। নিজেদের শিবিরে ফিরে যায় চিনারা।
কিন্তু অদূর ভবিষ্যতে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হওয়ার আশঙ্কা করছে আইটিবিপি। তাই বিপদ রুখতে সীমান্তে জওয়ানের সংখ্যা বাড়ানো ছাড়াও আধুনিক প্রযুক্তিকেও আরও বেশি করে ব্যবহার করতে চাইছেন তাঁরা।
গোস্বামী বলেন, “চিনা সেনার গতিবিধি জানার জন্য সীমান্তের আউট পোস্টগুলিতে সিসিটিভি লাগানোর কাজ শুরু হয়েছে।” এ ছাড়া নজরদারির কাজে বায়ুসেনাকেও বেশি করে ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। চিনাদের গতিবিধিতে নজরদারির জন্য কৃত্রিম উপগ্রহেরও সাহায্য নেওয়া হচ্ছে।
একই সঙ্গে দু’পক্ষের ভাষাগত ব্যবধানের জন্য ভুল বোঝাবুঝি রুখতে আইটিবিপি বাহিনীর ১২ জন জওয়ানকে চিনা ভাষা শেখানো হচ্ছে। ভাষা শিক্ষা শেষে তাঁদের লাদাখ-অরুণাচল সংলগ্ন ভারত-চিন সীমান্তে মোতায়েন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে কেন্দ্রের তরফে।