কেন্দ্রীয় সরকারের আমলাদের সঙ্গে চায়ের আড্ডায় নরেন্দ্র মোদী। নয়াদিল্লিতে প্রধানমন্ত্রীর রেস কোর্স রোডের বাসভবনে। ছবি: পিটিআই
হেমন্তের সন্ধেয় সাত নম্বর রেস কোর্স রোডের লন। ছোট ছোট গাছগুলো আলো দিয়ে সাজানো। বড় মাটির ভাঁড়ে গরম চায়ের উষ্ণতা। ‘চাওয়ালা’ প্রধানমন্ত্রী সেই চায়ের উষ্ণতাই আনতে চাইলেন আমলাদের সঙ্গে সম্পর্কে। বোঝাতে চাইলেন, শিকড়ে ফিরতে হবে আমলাদের। তবেই নীতি তৈরির ক্ষেত্রে নতুন ভাবনা আনতে পারবেন তাঁরা।
ক্ষমতায় আসার পরে পাঁচ মাস হয়ে গিয়েছে। প্রশাসনের শীর্ষ পদে নিজের পছন্দের আমলাদের নিয়ে এসেছেন মোদী। সকলের জন্য ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট বা জন ধন যোজনা, স্বচ্ছ ভারত অভিযান, কারখানার উৎপাদনকে চাঙ্গা করতে ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’, ‘ডিজিটাল ইন্ডিয়া’-র মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পের কর্মসূচি ঘোষণা হয়ে গিয়েছে। এ বার বাকি রূপায়ণ। শীর্ষ আমলাদের সক্রিয় সাহায্য ছাড়া যা সম্ভব নয়।
কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রকের শীর্ষ কর্তাদের আজ সেই কথাই বলেছেন মোদী। নতুন সরকারের প্রথম পাঁচ মাসে যে ইতিবাচক পরিবেশ তৈরি হয়েছে, প্রশাসনের কাজে গতি এসেছে, তাকে কাজে লাগিয়ে আরও এগিয়ে যাওয়ার ডাক দিয়েছেন।
মোদী বলেন, “ভাল কাজ হতে শুরু করেছে। বাজেট আসছে। আপনারা নতুন নতুন ভাবনা ও প্রস্তাব নিয়ে আসুন।” মোদীর নিজের প্রস্তাব, বাজেটের প্রস্তুতি পর্ব তিন মাস আগে থেকেই শুরু হয়ে যাক। তা হলে আগামী ১ এপ্রিল নতুন আর্থিক বছর শুরুর সঙ্গে সঙ্গেই নতুন বাজেটের সিদ্ধান্ত রূপায়ণ শুরু করা যাবে। প্রধানমন্ত্রী আজ স্পষ্ট করে দিয়েছেন, তিনি শুধুই ফাইলে সই করে গতানুগতিক পথে কাজ চালিয়ে যাওয়া সচিব চাইছেন না। তাঁর চাই নতুন নতুন ভাবনা। দিল্লির বাতানুকূল দফতরে বসে নয়, বাস্তবের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
সচিবদের জন্য তাঁর পরামর্শ, আইএএস হিসেবে চাকরি পাওয়ার পরে প্রথম যে জেলায় কাজ করেছিলেন, সেখানে এক বার ঘুরে আসুন। নতুন করে অনেক কিছু দেখতে, বুঝতে পারবেন। নতুন নীতি তৈরির সময়ে সেটাই রসদ হয়ে উঠবে। তাঁর সরকারের কোনও প্রকল্পে সাধারণ মানুষের মতামত নেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী ‘মাই গভ ডট ইন’ নামের একটি ওয়েবসাইট খুলেছেন। সচিবদের জন্য মোদীর পরামর্শ, যে সব ভাল ভাল মত আসছে, সেগুলিও কাজে লাগাতে হবে।
আজ কনফারেন্স হলে না গিয়ে, বাড়ির লনে গোল করে চেয়ার পেতে ৮০ জন শীর্ষ আমলাকে নিয়ে বসেছিলেন মোদী। আবহ থেকেই বোঝা গিয়েছে, আড্ডার মেজাজে দূরত্ব ঘোচাতে চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
হাজির ছিলেন রাজনাথ সিংহ, অরুণ জেটলি, বেঙ্কাইয়া নায়ডুর মতো গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রীরা।
প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেওয়ার পর জুন মাসে নরেন্দ্র মোদী সব সচিবের সঙ্গে ম্যারাথন বৈঠকে বসেছিলেন। জানতে চেয়েছিলেন, কোথায় সমস্যা হচ্ছে? কেন সিদ্ধান্ত নিতে অসুবিধা হচ্ছে? কোন কোন বড় প্রকল্পের কাজ আটকে রয়েছে? তখনই আমলারা জানিয়েছিলেন, মনমোহন সিংহ সরকারের আমলে সব চেয়ে বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছিল সিদ্ধান্তহীনতা। একের পর এক দুর্নীতির অভিযোগের জেরে আমলারা সিদ্ধান্ত নিতেই ভয় পেতেন।
আজও মোদীর সঙ্গে বৈঠকে হাজির ৮০ জন আমলার মধ্যে অনেকেই সেই সমস্যার কথা বলেছেন। মোদীর আশ্বাস, সচিবরা নির্ভয়ে সিদ্ধান্ত নিন। তাঁদের সুরক্ষা দেওয়ার কাজ সরকারের। কিন্তু কী কাজ হচ্ছে, তার কী ফল ফলছে, সে দিকে তাকিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
পাঁচ মাসে আমলাতন্ত্রের একাংশের ক্ষোভের মুখে পড়তে হয়েছে মোদী সরকারকেও। আমলা স্তরে নিজেদের টিম সাজাতে গিয়ে অরবিন্দ মায়ারামকে প্রথমে অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্বপূর্ণ পর্যটন মন্ত্রকে সরিয়েছে মোদী সরকার। আবার সেই দায়িত্ব নেওয়ার আগেই তাঁকে বদলি করা হয় সংখ্যালঘু মন্ত্রকে। প্রত্যাশিত ভাবেই আশঙ্কা দেখা দিয়েছিল শীর্ষ আমলাদের মধ্যে। তার পরেই এই চায়ের আড্ডা। আবহে বদল আনতেই কি?