বৈঠকে পৌঁছতে একটু দেরি হয়েছিল। আর তার জন্যই ধমক খেতে হল খোদ মন্ত্রীদের! আড়ালে-আবডালে নয়, আর পাঁচ জন নেতা- মন্ত্রীর সামনেই জুটল বকুনি!
প্রধানমন্ত্রী হয়েই নরেন্দ্র মোদী তাঁর মন্ত্রীদের নির্দেশ দিয়েছিলেন, প্রতিটি মন্ত্রকে আমলা-কর্মীদের সময় মতো আসাটা সুনিশ্চিত করতে হবে। সেই নির্দেশ পালনেই অনেক মন্ত্রী সকালের দিকে আচমকা মন্ত্রকে গিয়ে দেখতে শুরু করেন সময়ে আসছেন কত জন। দেরিতে আসার শাস্তি হিসেবে সেই দিন আমলা-কর্মীদের ছুটিও ঘোষণা করে দিয়েছেন মন্ত্রীরা। সময় মেনে চলার চাপটা এ বার মন্ত্রীদের ঘাড়েও। নরেন্দ্র মোদী আজ সংসদীয় দলের বৈঠকে গিয়ে দেখেন সংসদের সেন্ট্রাল হল তখনও ফাঁকা। আসেননি অনেক মন্ত্রী, সাংসদ। ক্ষুব্ধ মোদী দলের চিফ হুইপ বেঙ্কাইয়া নায়ডুকে বলেন, “এমন অনুশাসনহীন অবস্থা বরদাস্ত করা যায়না।
মোদীর মন বুঝে এর পর সাংসদ-মন্ত্রীদের ধমক দেওয়া শুরু করেন বেঙ্কাইয়া। বলেন, “এ ভাবে দেরিতে আসা কোনও ভাবে বরদাস্ত করা হবে না। সংসদীয় দলের বৈঠক শুরু হয় সাড়ে ন’টা। তার ৫ মিনিট আগে যে কোনও মূল্যে সংসদে পৌঁছতে হবে।”
বেঙ্কাইয়া এখানেই থেমে থাকেননি। আরও এক ধাপ এগিয়ে সকলকে জানিয়ে দেন, সংসদ যত দিন চলবে তত দিন কোনও সাংসদ বিদেশ সফরে যাওয়ার জন্য আবদার করবেন না। তার অনুমতি মিলবে না। দলের নেতাদের জিজ্ঞাসা না করে কেউ সংসদের কোনও কমিটিতে নিজের নাম প্রস্তাব করবেন না। এ বিষয়টা দলের উপরেই ছেড়ে দিন। একই ভাবে সংসদে কোনও বিষয়ে মুলতুুবি প্রস্তাব বা ছাঁটাই প্রস্তাব আনতে হলেও দলের নেতাদের সঙ্গে আগে আলোচনা করতে হবে। আগ বাড়িয়ে কোনও রকম পদক্ষেপ করলে দল সেটাকে অনুশাসনহীনতা হিসেবেই দেখবে।
সকলের সামনে এমন ধমক খেয়ে অনেক নেতার মুখই ব্যাজার হওয়ার জোগাড়। দলের সাংসদ অনিল দাভে বলেন, “নানা কারণে একটু-আধটু দেরি অনেকেরই হয়ে যায়। সকাল থেকে সাংসদদের অনেক কাজ করতে হয়। বাড়িতে লোকজন ভিড় করে বসে থাকে। তাঁদের কথাও শুনতে হয়।” রাজীব প্রতাপ রুডির অবশ্য বক্তব্য, “মোদী, জেটলির মতো নেতারা যদি সময়ে পৌঁছে যেতে পারেন, তা হলে অন্যরা পারবেন না কেন? আজ যখন বৈঠক শুরু হয়, সেই সময় সেন্ট্রাল হল কার্যত ফাঁকাই ছিল। ফলে নেতাদের রুষ্ট হওয়ার যথেষ্ট কারণ ছিল। দলের বিপুল জয়ের পর আমাদের সকলের দায়িত্বও অনেক বেড়ে গিয়েছে। নানান বিষয়ে দলের অবস্থান কী, সেটি এ ধরনের বৈঠকে বলা হয়। ফলে সকলেরই শোনা উচিত।”
ইউপিএ আমলে অনেক নেতা-মন্ত্রী দুর্নীতির নানা অভিযোগ ও বিতর্কে জড়িয়ে পড়েছিলেন। যার বিরোধিতা করে বিজেপি আজ ক্ষমতায় এসেছে। এ কারণে কেন্দ্রে ক্ষমতায় আসার পর থেকেই মোদী সতর্ক রয়েছেন, যাতে কোনও ভাবে দলের কোনও নেতা-মন্ত্রী বিতর্কে জড়িয়ে না পড়েন। এর জন্য নতুন সাংসদদের নিয়ে কর্মশালার আয়োজন করে তাঁদের পাঠ পড়ানো হয়েছে। মন্ত্রীরা যাতে পরিবারের কোনও সদস্যকে মন্ত্রকে সচিব হিসেবে নিয়োগ না করেন, তার জন্যও কড়া নির্দেশ জারি করা হয়েছে। মোদী স্থির করেছেন, এ বারে সাংসদদের যাঁরা ব্যক্তিগত সচিব হয়েছেন, তাঁদেরও পাঠ পড়ানো হবে। সে কারণে মুম্বইয়ে ছ’দিনের একটি কর্মশালার আয়োজন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সেখানে তাঁদের বুঝিয়ে দেওয়া হবে, কোন কোন কাজ থেকে তাঁদের বিরত থাকা উচিত।