এত দিন তটস্থ ছিলেন মন্ত্রীরা। কাজ ফেলে রাখা যাবে না। সকাল থেকে রাত-- যে কোনও বিষয়ে তাঁদের কাজে নজর রেখে যাচ্ছেন এক জন। অবস্থাটা এমন যে সরকারের এক শীর্ষ মন্ত্রী আক্ষেপ করে বলেছিলেন, “নরেন্দ্র মোদীর ঠেলায় রাতের ঘুমটাও এখন চলে গিয়েছে আমাদের।”
রাতে ঘুম না হলে, সকালে দেরি করে ওঠাটা স্বাভাবিক। কিন্তু সেখানেও নিস্তার নেই। দিল্লির শীতে সকাল সকাল দলের বৈঠকে যেতে দেরি হলে এখন থাকতে হচ্ছে দরজার বাইরে। প্রধানমন্ত্রী মোদীর নতুন ফরমানে মন্ত্রীদের পরে এ বার নতুন করে টেনশনে বিজেপির সাংসদরা। একেবারে স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের মতো হাল হয়েছে তাঁদের।
মঙ্গলবারে বিজেপির সংসদীয় দলের বৈঠকের কথাই ধরা যাক। সংসদ শুরু হয় সকাল এগারোটায়। তার আগে সংসদ ভবনের বালযোগী অডিটোরিয়ামে বৈঠক। শুরু হওয়ার কথা সকাল সাড়ে ন’টায়। মোদী এসে পৌঁছে গিয়েছেন দশ মিনিট আগেই। তার পর একে একে সাংসদরা আসতে শুরু করে দিয়েছেন। ঠিক সময়েই বৈঠক শুরু। আর ঠিক তার পাঁচ মিনিট পরে, ন’টা পঁয়তিরিশেই সংসদীয় মন্ত্রী বেঙ্কাইয়া নায়ডুকে মোদীর নির্দেশ, “অডিটোরিয়ামের দরজাটা বন্ধ করে দিতে বলুন। যাঁরা এখনও আসেননি, তাঁরা আজ বাইরেই থাকুন।” সংসদীয় মন্ত্রী আর কী করবেন? যেমন কথা, তেমন কাজ। তত ক্ষণে বন্ধ দরজার বাইরে ব্যাজার মুখে ভিড় জমিয়েছেন অন্তত কুড়ি জন বিজেপি সাংসদ। কী করবেন, কোথায় যাবেন কেউ বুঝে উঠতে পারছেন না।
আর ভিতরের অবস্থাটা কী? যাঁরা ভেবেছিলেন বৈঠক চলতে চলতে চট করে বাইরের কাজটাও সেরে আসবেন, তাঁদের মাথায় হাত। তবে সে সব কথা কি মুখে প্রকাশ করেন কেউ? বরং বাধ্য ছাত্রের মতোই বিজেপির সাংসদরা শুনে গিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী মোদীর কথা। আর বৈঠকের শেষে বেঙ্কাইয়ার ঘোষণা, “এখন থেকে ন’টা পঁয়তিরিশেই দরজা বন্ধ হয়ে যাবে। সংসদীয় দলের বৈঠকে তার আগেই পৌঁছতে হবে সাংসদদের।”
বিজেপি সূত্রের খবর, সাংসদ ও মন্ত্রীদের মধ্যে সময়ানুবর্তিতার ভাবনা জাগিয়ে তুলতেই প্রধানমন্ত্রীর এই প্রয়াস। দলের সাংসদদের আগেই সতর্ক করা হয়েছিল, জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল, দলীর বৈঠকে অনুপস্থিত থাকা চলবে না। কেননা, প্রধানমন্ত্রীর কাছে তাঁদের উপস্থিতির রিপোর্ট পাঠানো হবে।
এতো ছিল মুখের কথা। কিন্তু মঙ্গলবার তো একেবারে মুখের ওপর দরজা বন্ধ।
পরের সপ্তাহে কী হয়, সেই আশঙ্কায় এখন দিন কাটছে শাসক দলের সাংসদদের।