দল ভাঙিয়ে পটনা দখলে নারাজ মোদী

বিহারে সরকার গঠনে বিজেপি কোনও ভাবেই বিধায়ক কেনাবেচাকে প্রশ্রয় দেবে না বলে রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়কে বার্তা পাঠিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। রাষ্ট্রপতি ভবন সূত্রে খবর, প্রণববাবুও ব্যক্তিগত ভাবে দল ভেঙে সরকার গঠনের চেষ্টার বিরোধী। বিষয়টি নিয়ে বিজেপি-বিরোধী রাজনীতি করতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও আসরে নেমেছেন বলে মনে করা হচ্ছে। বিহারে জেডিইউ নেতা নীতীশ কুমারের বিরুদ্ধে মুখ্যমন্ত্রী জিতনরাম মাঁঝির বিদ্রোহ নিয়ে নাটক চলেছে আজও।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি ও পটনা শেষ আপডেট: ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০৩:১৬
Share:

বিহারে সরকার গঠনে বিজেপি কোনও ভাবেই বিধায়ক কেনাবেচাকে প্রশ্রয় দেবে না বলে রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়কে বার্তা পাঠিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। রাষ্ট্রপতি ভবন সূত্রে খবর, প্রণববাবুও ব্যক্তিগত ভাবে দল ভেঙে সরকার গঠনের চেষ্টার বিরোধী। বিষয়টি নিয়ে বিজেপি-বিরোধী রাজনীতি করতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও আসরে নেমেছেন বলে মনে করা হচ্ছে।

Advertisement

বিহারে জেডিইউ নেতা নীতীশ কুমারের বিরুদ্ধে মুখ্যমন্ত্রী জিতনরাম মাঁঝির বিদ্রোহ নিয়ে নাটক চলেছে আজও। রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠী আজ পটনায় মুখ্যমন্ত্রী জিতনরাম মাঁঝি এবং জেডিইউ-এর পরিষদীয় দলনেতা নীতীশ কুমারের সঙ্গে আলাদা আলাদা বৈঠক করেছেন। রাজ্যপালের সামনে নীতীশ তাঁর অনুগামী ১৩০ জন বিধায়কের তালিকাও পেশ করেছেন। কিন্তু রাজ্যপাল বিষয়টি ঝুলিয়ে রেখেছেন। আগামিকাল রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করে তিনি তাঁর মতামত জানাবেন। নীতীশ ও তাঁর জোটসঙ্গী লালু প্রসাদের দাবি, আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে বিধানসভায় শক্তিপরীক্ষার সুযোগ দেওয়া হোক। তাঁদের মতে, রাজ্যপাল যদি তার চেয়ে বেশি সময় শক্তিপরীক্ষার জন্য দেন তা হলেই বুঝতে হবে বিজেপি দল ভাঙার চেষ্টা করছে। অন্য দিকে জিতনরামের দাবি, বিহার বিধানসভায় বাজেট অধিবেশন আগামী ২০ ফেব্রুয়ারি শুরু হবে। তিনি মন্ত্রিসভা সম্প্রসারণ করতে আগ্রহী। তার পরে তিনি বিধানসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতার প্রমাণ দিতে চান। তবে জিতনরামের মন্ত্রিসভা সম্প্রসারণের আর্জি রাজ্যপাল খারিজ করে দিয়েছেন বলে জেডিইউ সূত্রে খবর। নীতীশ শিবিরের মতে, মন্ত্রিত্বের লোভ দেখিয়ে জেডিইউ ভাঙতে চাইছেন জিতনরাম। তিনি ইতিমধ্যেই বিজেপির ৮৭ জন বিধায়কের সমর্থন চেয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে আজ সকালেই জিতনরামকে দল থেকে বহিষ্কার করে দিয়েছেন নীতীশ। যাতে দলহীন মুখ্যমন্ত্রী কিছুতেই বিধানসভায় দাঁড়িয়ে দল ভাঙার সুযোগ না পান।

রাজ্যপাল দল ভাঙার কারিগর হলে রাষ্ট্রপতি ভবনের সামনে ধর্না-বিক্ষোভের হুমকি গত কালই দিয়েছিল নীতীশ শিবির। আজ তাদের সঙ্গে গলা মিলিয়েছেন লালু প্রসাদও। নীতীশ শিবিরের দাবি, ওই বিক্ষোভে সামিল হবেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, মুলায়ম সিংহ যাদব এবং বাম ও আপের নেতা-কর্মীরা। জেডিইউ সূত্রে খবর, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আজ বিহারে সংবিধান ও গণতন্ত্রকে সুরক্ষিত রাখতে প্রণববাবুকে অনুরোধ করেছেন। রাজনীতিকদের মতে, বিজেপির বিরুদ্ধে যৌথ মঞ্চ গড়তে বিষয়টিকে ব্যবহার করতে চাইছেন মমতা। তৃণমূলের কেউই ধর্না বা রাষ্ট্রপতিকে বিহার নিয়ে মমতার অনুরোধ প্রসঙ্গে কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তবে এক তৃণমূল নেতার বক্তব্য, “শনিবারই তৃণমূল নেত্রী টুইটারে জানান নীতীশ ফের বিহারের মুখ্যমন্ত্রী হতে চলেছেন। নীতীশকে অভিনন্দনও জানান তিনি। এ থেকেই স্পষ্ট জেডিইউ নেতার সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন নেত্রী।”

Advertisement

বিজেপি কী ভাবছে? অমিত শাহ ও তাঁর সেনাপতিরা জিতনরামকে সমর্থন দিয়ে নীতীশের পাল্টা সরকার গঠনে আগ্রহী। কিন্তু দিল্লির ভোটের ফল প্রকাশিত হবে আগামিকাল। বুথ ফেরত সমীক্ষা ঠিক হলে আপ নেতা অরবিন্দ কেজরীবালের হাতে বিজেপি বড় ধাক্কা খাবে। সে ক্ষেত্রে বিহারে সরকার গঠনের ক্ষেত্রে জিতনরামকে সমর্থন করলে আরও বিপাকে পড়তে পারে বিজেপি। এক বিজেপি নেতার কথায়, “জিতনরামকে মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে মনোনীত করেছিলেন নীতীশ কুমার নিজেই। এখন তিনিই মুখ্যমন্ত্রীকে তাড়াতে সক্রিয়। নরেন্দ্র মোদীর মতে, কেন নীতীশ জিতনরামকে তাড়াচ্ছেন তা তাঁদের অভ্যন্তরীণ বিষয় বলেই মনে করেন নরেন্দ্র মোদী।” ওই নেতার মতে, জেডিইউ ভাঙলে বিজেপি নয়া রণকৌশল নিয়ে এগোতে পারে। কিন্তু নীতীশ-জিতনরাম বিতর্কে জড়াতে রাজি নন মোদী।

আগামিকাল রাষ্ট্রপতি ভবনে রাজ্যপালদের বৈঠকে যোগ দেবেন কেশরীনাথ ত্রিপাঠী। তখন প্রণববাবুর সঙ্গে বিহার পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন