বিতর্ক চলছিল বেশ কয়েক দিন ধরেই। অভিজাত ক্লাবের পোশাক বিধির জেরে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়নি মাদ্রাজ হাইকোর্টের বিচারপতিকে। কারণ তাঁর পরনে ছিল ধুতি। যা ক্লাবের পোশাক বিধি অনুযায়ী মানা হয় না। তাই নিয়েই শুরু হয় সমালোচনা। আজ বিষয়টিতে মুখ খুলেছেন তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রীও।
জয়ললিতা সাফ বলেছেন, স্বাধীনতার এত বছর পরে এই ঘটনা দুর্ভাগ্যজনক। এটা তামিল ঐতিহ্যের অপমান। ধুতি পরিহিত বিচারপতিকে কেন ক্লাবে ঢুকতে দেওয়া হয়নি প্রশ্ন তুলেছেন তিনি। বিষয়টিকে তিনি মোটেই লঘু করে দেখছেন না। যে কারণে তিনি বলেছেন, ক্লাবগুলির পোশাক বিধি পরিবর্তনের জন্য প্রয়োজনে বিধানসভার বর্তমান অধিবেশনেই নয়া আইন প্রণয়নের প্রস্তাব আনা হতে পারে। আর তাঁর এই প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়েছে বিজেপি এবং কংগ্রেস। সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী বেঙ্কাইয়া নায়ডু আজ বলেন, “এটা ভাল সিদ্ধান্ত। ক্লাবে ধুতি পরিহিত ব্যক্তিকে ঢুকতে দেওয়ার জন্য আইন করতে হবে এটাই আশ্চর্যের। ব্রিটিশ আমলে তৈরি হওয়া আইনের কী মানে আছে এখন? ধুতি পরে কেউ ঢুকছিলেন বলে তাঁকে বাধা দেওয়া হল। ধুতি কি অশালীন পোশাক?” একই সুর দক্ষিণের আর এক নেতা এবং কংগ্রেস সাংসদ শশী তারুরেরও। কুর্তা পরার জন্য তাঁকে নানা সময়ে চেন্নাইয়ের কিছু ক্লাবে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। তাঁর কথায়, “ক্লাবের নিজস্ব নিয়ম থাকুক। সেটা তার সদস্যদের ক্ষেত্রেই লাগু হোক। কিন্তু ক্লাব চত্বর ভাড়া করে কোনও অনুষ্ঠান হলে সেখানে উপস্থিত অতিথিদের উপরে সেই নিয়ম কেন চাপিয়ে দেওয়া হবে?”
বিতর্কের সূত্রপাত দিন পাঁচেক আগে। মাদ্রাজ হাইকোর্টের বিচারপতি ডি হরিপরান্থামানকে ধুতি পরার জন্য তামিলনাড়ু ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনে (টিএনসিএ) ঢুকতে দেওয়া হয়নি। বিষয়টি আজ বিধানসভায় উত্থাপন করে জয়ললিতা বলেন, “এটা তামিল সভ্যতা এবং সংস্কৃতির প্রতি অপমান। আমি এর তীব্র নিন্দা করছি।” ওই কাজের ব্যাখ্যা চেয়ে ক্লাবটিকে শো কজ নোটিস পাঠানো হবে বলে জানান মুখ্যমন্ত্রী। জয়ললিতার বক্তব্য, “বিদেশে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যখন তামিলনাড়ুর ঐতিহ্যবাহী এই পোশাক পরতে কোনও বাধা দেওয়া হয় না, সেখানে খাস তামিলনাড়ুতেই ধুতি নিষিদ্ধ করা সংবিধান-বিরোধী এবং গণতান্ত্রিক ঐতিহ্যের পরিপন্থী।”
এই সূত্রে ঔপনিবেশিক সময়ের একটি ঘটনার কথাও বলেন তিনি। প্রিন্স অব ওয়েলসকে স্বাগত জানাতে মাদ্রাজ কর্পোরেশনের মেয়র পি ত্যাগারায়ারকে পশ্চিমী পোশাক পরতে বলেন মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সির গভর্নর লর্ড উইলিংডন। কিন্তু সেই নির্দেশ মানেননি ত্যাগারায়ার। বিধানসভায় মুখ্যমন্ত্রীর প্রশ্ন, “ব্রিটিশ সরকারের নির্দেশ আমরা উড়িয়ে দিয়েছি। এই ক্লাবগুলোর ক্ষমতা কত দূর?” এই মন্তব্য সমর্থন করেন বিধায়করা।