পটনায় সাংবাদিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী জিতনরাম মাঁঝি। শুক্রবার। —নিজস্ব চিত্র।
নীতীশ কুমারকে ফের বিঁধলেন জিতনরাম মাঁঝি। বিহারে রাজনৈতিক টানাপড়েনের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকা মুখ্যমন্ত্রী আজ বললেন, “উনি (নীতীশ) ভুল নয়, মহা ভুল করেছেন। আমাকে ওঁর হাতের পুতুল করতে চেয়েছিলেন। যেটা আমি কখনও হইনি।”
এ দিন নীতীশের আচরণে ক্ষোভ জানিয়ে রাজ্যের ভারপ্রাপ্ত রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠী বলেছেন, “এখন রাজনীতি এমন জায়গায় নেমেছে যে সাংবিধানিক পদেরও মর্যাদা দেওয়া হচ্ছে না। রাজ্যপালের বিরুদ্ধেও রাজনৈতিক বিবৃতি দেওয়া হচ্ছে।” সম্প্রতি নীতীশ বলেছিলেন রাজ্যপাল বিজেপির কথামতো কাজ করছেন। একই দিনে জোড়া-ফলায় বিদ্ধ জেডিইউ জানায়, সাংবিধানিক পদে ব্যক্তিদের নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন
করা উচিত।
সকালে সাংবাদিক বৈঠকে জেডিইউ শিবিরের দিকে একের পর এক তোপ দাগেন জিতনরাম। তিনি বলেন, “শরদ যাদব আমাকে ইস্তফা দিতে বলেছিলেন। ওঁকে জানিয়েছিলাম, কোনও ভুল করে থাকলে পদত্যাগ করব। কিন্তু কী ভুল আমি করেছি তা নিয়ে কেউ কিছু বলেনি।” সরকার গঠনের জন্য প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কাছ থেকে বিধায়ক কেনাবেচার লাইসেন্স নিয়ে এসেছেন জিতনরাম এমন অভিযোগ তুলেছিলেন নীতীশ। তা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী পাল্টা বলেন, “উনি এত জন বিধায়ককে নিয়ে দিল্লিতে গেলেন। তাঁদের বড় হোটেলে রাখলেন। প্রত্যেকের পিছনে লক্ষাধিক টাকা খরচ করা হল। কেনাবেচা তা হলে কে করলেন!” বিজেপি কি আপনাকে সমর্থন দিচ্ছে? তির্যক প্রশ্নে জিতনরামের মন্তব্য, “বিধানসভায় শক্তি পরীক্ষায় জিততে যে কোনও বিধায়কের সাহায্য পেতে চাই। তিনি যে কোনও দলের হোক না কেন।”
মহাদলিত জিতনরামের পাশে দাঁড়ালে জাতপাতের রাজনীতি-পুষ্ট বিহারে আখেরে লাভ হতে পারে, সে অঙ্ক কষে আস্থা ভোটের পক্ষে যেতে পারে বিজেপি। দলীয় নেতাদের একাংশের কথায় এমনই ইঙ্গিত মিলেছে। ঘনিষ্ঠ মহলে ওই নেতারা জানিয়েছেন, দলের ৮৭ জন বিধায়ক জিতনরামকে সমর্থন করলেও হয়তো তিনি বিধানসভার শক্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারবেন না। কিন্তু এতে বিজেপির তরফে রাজ্যের দলিত, মহাদলিত শ্রেণির মানুষের কাছে সদর্থক বার্তা পৌঁছবে। প্রশাসনিক হিসেবে, বিহারে এখন ওই শ্রেণির ভোটারের সংখ্যা প্রায় ১৬ শতাংশ।
এ বিষয়ে প্রদেশ বিজেপির প্রথম সারির নেতা নন্দকিশোর যাদব বলেছেন, “সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য
১১৭ জন বিধায়কের সমর্থন চাই। আমরা ৮৭ জন জিতনরামের পাশে দাঁড়ালেও, তাঁকে আরও ৩০ জনের সমর্থন জোগাড় করতে হবে।” মুখ্যমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ মন্ত্রী ভীম সিংহ অবশ্য দাবি করেছেন, বিজেপি পাশে থাকলেই জিতনরাম বিধানসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতার প্রমাণ দিতে সক্ষম হবেন। তবে, কী ভাবে তা সম্ভব তা নিয়ে মুখে কুলুপ দিয়েছে জিতনরামের শিবির। ২০ ফেব্রুয়ারিই স্পষ্ট হবে, শেষ হাসি কে হাসবেন নীতীশ না জিতনরাম।