প্রেমিককে সাজা দিতে লড়াই মস্কোর তরুণীর

জলরঙের ছবির মতো রঙিন ভোলগা নদীর তীরে বসে অসমের ব্রহ্মপুত্রের কথা শুনেছিলেন মস্কোর চিকিৎসক এক্যাটেরিনা রেইজচিকোভা। রাশিয়ার বরফ-ঢাকা প্রান্তরে ঘুরে অসমের প্রেমিক তাঁকে বলতেন উত্তর-পূর্বের সবুজ চা-বাগানের গল্প। দু’চোখে ‘সাতরঙা’ স্বপ্ন নিয়ে ডিব্রুগড়ে হবু শ্বশুরবাড়ি এসেছিলেন ভিন্দেশি ওই তরুণী।

Advertisement

রাজীবাক্ষ রক্ষিত

গুয়াহাটি শেষ আপডেট: ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০৩:১৮
Share:

জলরঙের ছবির মতো রঙিন ভোলগা নদীর তীরে বসে অসমের ব্রহ্মপুত্রের কথা শুনেছিলেন মস্কোর চিকিৎসক এক্যাটেরিনা রেইজচিকোভা। রাশিয়ার বরফ-ঢাকা প্রান্তরে ঘুরে অসমের প্রেমিক তাঁকে বলতেন উত্তর-পূর্বের সবুজ চা-বাগানের গল্প। দু’চোখে ‘সাতরঙা’ স্বপ্ন নিয়ে ডিব্রুগড়ে হবু শ্বশুরবাড়ি এসেছিলেন ভিন্দেশি ওই তরুণী।

Advertisement

আচমকা তাঁকে পাগলা গারদে আটকে দেওয়া হল। শুরু হয় হাত-পা বেঁধে অত্যাচার! খবর পেয়ে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন এক্যাটেরিনাকে উদ্ধার করে। যোগাযোগ করা হয় নয়াদিল্লির রাশিয়ান দূতাবাসের সঙ্গে।

এখন দেশে ফিরতে চান না ওই তরুণী। ‘প্রতারক’ প্রেমিকের বিরুদ্ধে ভারতে থেকেই আইনি লড়াই করতে চান এক্যাটেরিনা। অভিযুক্ত চিকিৎসক শামির রহমানের বিরুদ্ধে প্রতারণা, বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে সহবাস, মানব-পাচারের মতো ধারায় মামলা রুজু করা হয়। গ্রেফতার হয়েছে শামির।

Advertisement

পুলিশ জানায়, মস্কোয় একই কলেজে ডাক্তারি পড়তেন ডিব্রুগড়ের শামির, রাশিয়ার এক্যাটেরিনা। তখনই দু’জনের সম্পর্কের শুরু। অসমের তদন্তকারীদের কাছে এক্যাটেরিনা অভিযোগ করেছেন, শামির তাঁকে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। এ মাসের প্রথম দিকে তাঁরা ডিব্রুগড়ে আসার সিদ্ধান্ত নেন। ভিসা সমস্যায় শামির রাশিয়ায় আটকে যান। বাধ্য হয়ে তাঁকে ছেড়েই ভারত রওনা দেন এক্যাটেরিনা। ৫ ফেব্রুয়ারি তিনি ডিব্রুগড় পৌঁছন। শামিরের বোন তাঁকে বিমানবন্দর থেকে নিজেদের বাড়িতে নিয়ে যান। কিন্তু বিয়ের আগে এক্যাটেরিনাকে ধর্ম পরিবর্তন করতে হবে বলে জানিয়ে দেন শামিরের অভিভাবকরা। আপত্তি জানান তরুণী। অভিযোগ, এর পরই তাঁর উপর অত্যাচার শুরু হয়। ১৫ ফেব্রুয়ারি শামির ডিব্রুগড় পৌঁছন। তিনিও জানান, পরিবারের অমতে এক্যাটেরিনাকে বিয়ে করতে পারবেন না। ওই তরুণীকে স্থানীয় একটি মানসিক হাসপাতালে ভর্তি করে পালান শামির।

‘নর্থ ইস্ট বুদ্ধিস্ট কালচারাল অ্যাসোসিয়েশন’-এর সাধারণ সম্পাদক রাজীব হাজরিকা জানান, খবর পেয়ে তাঁরা ১৮ ফেব্রুয়ারি ওই হাসপাতালে যান। এক্যাটেরিনাকে একটি ঘরে আটকে রাখা হয়েছিল। দোভাষীর মাধ্যমে তাঁর সঙ্গে কথা বলেন সংগঠনের সদস্যরা। রাজীববাবু বলেন, “রাশিয়ার দূতাবাসের মাধ্যমে এক্যাটেরিনার সঙ্গে তাঁর পরিবারের কথাও বলানো হয়।”

এর পরে রাজীববাবুরা শামিরের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তাঁকে জানানো হয়, এক্যাটেরিনাকে বিয়ে না করলে থানায় অভিযোগ দায়ের করা হবে। গ্রেফতার হওয়ার ভয়ে শামির বিয়ে করতে রাজি হন। কিন্তু, এ বার গররাজি হন এক্যাটেরিনা। তিনি জানিয়ে দেন, শামিরকে বিয়ে করে তিনি শান্তি ও নিরাপত্তা পাবেন না। গাভরু পথার ফাঁড়িতে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন রাশিয়ার তরুণী। এফআইআর করা হয় শামিরের মা ও বোনের বিরুদ্ধেও। কোনও কারণ ছাড়াই এক্যাটেরিনাকে ভর্তি করার জন্য মানসিক হাসপাতালের কর্তৃপক্ষ ও এক চিকিৎসকের বিরুদ্ধেও মামলা রুজু করে পুলিশ।

‘পর্যটক ভিসা’ নিয়ে অসমে এসেছেন এক্যাটেরিনা। সেটির মেয়াদ রয়েছে আগামী জুন মাস পর্যন্ত। রাজীববাবু জানান, ওই তরুণীর ভিসার মেয়াদ বাড়ানোর জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে আবেদন জানানো হয়েছে। প্রশাসনিক সূত্রে খবর, এক্যাটেরিনার সঙ্গে কথা বলতে নয়াদিল্লির রাশিয়ান দূতাবাসের প্রতিনিধি ডিব্রুগড়ে যেতে পারেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন