বেঙ্গালুরুর রাস্তায় প্রতিবাদ-ধর্না। শনিবার। ছবি: রয়টার্স
বছর দেড়েক আগে নির্ভয়া-কাণ্ডের পরপর যে ছবি দেখেছিল দিল্লি, আজ অনেকটা সে দৃশ্যই দেখল বেঙ্গালুরু। শহরের এক স্কুলে ছ’বছরের পড়ুয়াকে ধর্ষণের ঘটনায় পথে নামল কাতারে কাতারে মানুষ। শুধু সেই স্কুলের অভিভাবকেরাই নন, যোগ দিয়েছিলেন আশপাশের বহু স্কুলের ছাত্রছাত্রীর বাবা-মা-পরিজন। হাজির ছিলেন বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের প্রতিনিধিরাও। হাতে প্ল্যাকার্ড, কোনওটায় লেখা ‘দ্রুত বিচার চাই’। কোনওটায় আবার সরাসরি আক্রমণ, “যারা একটা ছ’বছরের শিশুর সঙ্গে এমন করতে পারে, তাদের যৌনাঙ্গ কেটে দেওয়া হোক! ওটাই একমাত্র শাস্তি।”
সে বারের রাজধানীর মতোই এ দিনও মিছিলে রাজনীতির রং লাগতে দেননি বেঙ্গালুরুর মানুষ। দু’বছর আগে তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী শীলা দীক্ষিতকে যন্তরমন্তরের সামনে প্রতিবাদ-ধর্নায় ঢুকতে দেননি দিল্লিবাসী। আজ প্রাক্তন মন্ত্রী তথা বিজেপি বিধায়ক অরবিন্দ লিম্বাবালি মিছিলে যোগ দিতে চাইলে ক্ষুব্ধ জনতা তাঁকে স্পষ্ট জানিয়ে দেন, এমন একটা ঘটনা নিয়ে রাজনীতি করা চলবে না।
দক্ষিণ বেঙ্গালুরুর সেই স্কুল থেকেই আজ মৌন মিছিল শুরু হয়েছিল। প্রায় ছ’কিলোমিটার হাঁটার পর মিছিল শেষ হয় হ্যাল থানার সামনে। সেখানেই ধর্নায় বসেন বিক্ষোভকারীরা। ভিড়ের মধ্যে থেকে পুলিশের উদ্দেশ্যে ছুটে আসে একের পর এক প্রশ্নবাণ ধর্ষণের ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পরেও চার দিন কেটে গিয়েছে, কেন এখনও ধরা পড়ল না দোষীরা? ছোটদের সুরক্ষার ভার প্রশাসন না নিলে কে নেবে? এক কিশোরীকে দেখা গেল তার এক বছরের বোনকে কোলে নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে। হাতে প্ল্যাকার্ড ‘আমার বোনকে বাঁচাও’।
দিল্লির মতো এখানে অবশ্য লাঠি চার্জ হয়নি। তোপের মুখে পড়ে পুলিশ জলকামান দিয়ে ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করেনি ক্ষুব্ধ জনতাকে। বরং জনতার দাবি মেনে তড়িঘড়ি ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন পুলিশ কমিশনার রাঘবেন্দ্র ঔরদকর। তিনি আসতেই আরও ফুঁসে ওঠেন মানুষ। পুলিশের উপর আস্থা রাখতে অনুরোধ জানিয়ে রাঘবেন্দ্র বলেন, “একটা ছোট্ট বাচ্চাকে কেন্দ্র করে গোটা ঘটনা। অনেক বুঝেশুনে এগোতে হচ্ছে।” একই কথা বলেন অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (আইন-শৃঙ্খলা) কমল পন্ত-ও। তাঁর কথায়, “একটা শিশুকে তো আর পাঁচটা মানুষের মতো বারে বারে জেরা করা যায় না...। তদন্তে দেরি হচ্ছে বলে ভাববেন না, পুলিশ হাত গুটিয়ে বসে।”
স্বাভাবিক ভাবেই এ জবাবে সন্তুষ্ট হননি বিক্ষোভকারীরা। একটা ছোট্ট মেয়েকে শাস্তি দেওয়ার নাম করে যারা স্কুলের স্টোর রুমে বন্দি করে রাখতে পারে, আর তার পর ধর্ষণ করতে পারে, তাদের এখনও কেন গ্রেফতার করা গেল না, জানতে চায় জনতা। তাঁদের দাবি, তদন্ত ঠিক কত দূর এগিয়েছে, তা বিশদ জানাতে হবে সাধারণ মানুষকে। এ নিয়ে পুলিশের তরফে বলা হয়েছে, এত লোককে এক সঙ্গে বোঝানো অসম্ভব। একটা ছোট প্রতিনিধি দল যদি আসে, পুলিশ নিশ্চয়ই সহযোগিতা করবে।
মিছিলের শেষে যদিও অনেককেই বলতে শোনা গেল, “কিছুতেই ভয় কাটছে না। মেয়েকে স্কুলে পাঠাব কী করে!”