পুলিশের জালে ঝাড়খণ্ডের শীর্ষ মাওবাদী নেতা

পশ্চিমবঙ্গের জঙ্গলমহলে ঝাড়খণ্ড ঘেঁষা কয়েকটি তল্লাটে মাওবাদী তৎপরতা হঠাৎ করে বেড়ে যাওয়ার মধ্যেই শুক্রবার পুলিশের হাতে ধরা পড়লেন ‘প্রভীলদা’। তিনি দুমকা তথা সাঁওতাল পরগনায় মাওবাদীদের এরিয়া কম্যান্ডার বলে ঝাড়খণ্ড পুলিশের দাবি। গত বছর জুলাইয়ে দুমকার কাঠিকুণ্ডে পাকুড়ের পুলিশ সুপার অমরজিৎ বলিহার-সহ ৬ পুলিশকর্মীকে হত্যা এবং এ বছর লোকসভা ভোটের সময়ে দুমকার শিকারিপাড়ায় পুলিশ ও ভোটকর্মী মিলিয়ে আট জনকে ল্যান্ডমাইন বিস্ফোরণে ওড়ানোর ঘটনায় মূল অভিযুক্ত এই প্রভীলদা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

রাঁচি শেষ আপডেট: ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০৩:২১
Share:

পশ্চিমবঙ্গের জঙ্গলমহলে ঝাড়খণ্ড ঘেঁষা কয়েকটি তল্লাটে মাওবাদী তৎপরতা হঠাৎ করে বেড়ে যাওয়ার মধ্যেই শুক্রবার পুলিশের হাতে ধরা পড়লেন ‘প্রভীলদা’। তিনি দুমকা তথা সাঁওতাল পরগনায় মাওবাদীদের এরিয়া কম্যান্ডার বলে ঝাড়খণ্ড পুলিশের দাবি।

Advertisement

গত বছর জুলাইয়ে দুমকার কাঠিকুণ্ডে পাকুড়ের পুলিশ সুপার অমরজিৎ বলিহার-সহ ৬ পুলিশকর্মীকে হত্যা এবং এ বছর লোকসভা ভোটের সময়ে দুমকার শিকারিপাড়ায় পুলিশ ও ভোটকর্মী মিলিয়ে আট জনকে ল্যান্ডমাইন বিস্ফোরণে ওড়ানোর ঘটনায় মূল অভিযুক্ত এই প্রভীলদা। পুলিশের বক্তব্য, ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে প্রায় ২০টি মামলা ঝুলছে। পশ্চিমবঙ্গে পুলিশ ও গোয়েন্দারা এত দিন তাঁকে ‘প্রবীরদা’ নামে জানতেন।

পুলিশের সূত্রের দাবি, দুমকার রামগড় থানা এলাকার হাড়োয়াডাঙ্গাল গ্রামে স্থানীয় পঞ্চায়েত প্রধান সন্তোষ কিস্কুর বাড়িতে বৃহস্পতিবার প্রভীলদা যান নতুন নাশকতার ছক কষতে। খবর পেয়ে শুক্রবার বিকেলে ওই মাওবাদী নেতাকে পুলিশ ধরে। আটক করা হয় দুই মহিলাকেও, যাঁদের এক জন আসন্নপ্রসবা ও শনিবার দুপুরে দুমকা হাসপাতালে ওই মহিলা কন্যা সন্তানের জন্ম দিয়েছেন। শুক্রবার সন্তোষ কিস্কুও এলাকায় একটি ছাপানো বিবৃতি বিলি করে জানান, পুলিশ বাড়ি থেকে তাঁর স্ত্রী ও আসন্নপ্রসবা শ্যালিকাকে তুলে নিয়ে গিয়েছে।

Advertisement

তবে পুলিশের অন্য একটি সূত্রের খবর, ওই মহিলা প্রভীলদারই স্ত্রী কিরণলতা। প্রসবের সম্ভাব্য দিন চলে আসায় কিরণলতাকে নিয়ে গোপন ডেরা ছেড়ে প্রভীলদা হাড়োয়াডাঙ্গাল গ্রামে এক পরিচিতের বাড়িতে যান। সেখানেই পুলিশের পাতা ফাঁদে ধরা পড়ে যান তিনি। কিরণলতাকেও শুক্রবার প্রভীলদার সঙ্গেই গ্রেফতার করা হয় এবং তিনি পুলিশি হেফাজতেই হাসপাতালে কন্যা সন্তান প্রসব করেন বলে পুলিশের ওই সূত্রের দাবি।

বিষয়টি এতটাই স্পর্শকাতর যে, শনিবার প্রভীলদার গ্রেফতার হওয়া বা ওই প্রসূতির পরিচয় নিয়ে পুলিশের কোনও আধিকারিকই মুখ খোলেননি। ডিআইজি (দুমকা) প্রিয়া দুবে শুধু বলেন, “যা বলার রবিবার সাংবাদিক বৈঠক ডেকে বলা হবে।” এমনকী, প্রভীলদার আসল নাম কী, সেটা জিজ্ঞেস করলেও পুলিশের মুখে এ দিন কুলুপ আঁটা ছিল।

পুলিশ ও গোয়েন্দা সূত্রের খবর, চল্লিশোর্ধ্ব প্রভীলদার নেতৃত্বেই সাঁওতাল পরগনায় পুলিশের উপরই বেশি আক্রমণ হেনেছে মাওবাদীরা। গত বছর জুলাইয়ে পাকুড়ের পুলিশ সুপার অমরজিৎ বলিহার যখন দুমকা থেকে পাকুড়ে ফিরছিলেন, সেই সময়ে তাঁর উপর হামলা চালায় ৫০-৬০ জন মাওবাদীর একটি দল। প্রথমে চাকায় গুলি করে গাড়ি থামানো হয়। তার পর এসপি এবং পাঁচ পুলিশকর্মীকে ঝাঁঝরা করে দেয় মাওবাদীরা। তার পর থেকেই প্রভীলদাকে পুলিশ খুঁজছিল। গোয়েন্দা সূত্রের খবর, সাঁওতাল পরগনার মধ্যে থাকা সত্ত্বেও প্রভীলদার নাগাল পুলিশ পাচ্ছিল না।

ঝাড়খণ্ডে লোকসভা ভোটের শেষ দিন, ২৪ এপ্রিল দুমকার শিকারিপাড়ায় পুলিশ ও ভোটকর্মীদের নিয়ে যাওয়া একটি বাস ল্যান্ডমাইন বিস্ফোরণে উড়িয়ে দেয় মাওবাদীরা। ওই ঘটনায় আট জন নিহত হন। পুলিশ জানায়, ওই হানার পরিকল্পনা প্রভীলদারই।

দুমকা জেলা পুলিশের এক আধিকারিক জানান, এক জায়গায় প্রভীলদা দু’রাতের বেশি থাকতেন না। ফলে একাধিক বার তল্লাশি চালিয়েও খালি হাতে ফিরতে হয়েছে পুলিশকে। পুলিশের একটি সূত্রের দাবি, অমরজিৎ বলিহার হত্যাকাণ্ডে অভিযুক্ত, এখন দুমকা জেলে বন্দি তিন মাওবাদীকে জেরা করে জানা গিয়েছিল, প্রভীলদার স্ত্রী সন্তানসম্ভবা। সেই সূত্র ধরে এগিয়েই সাফল্য মিলেছে বলে পুলিশের একাংশের দাবি।

পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের একাংশের দাবি, ‘প্রবীরদা’-র আনাগোনা ছিল দুমকা ও পাকুড় লাগোয়া বীরভূম জেলার মাসাঞ্জোর, খয়রাশোল, ভীমগড় ও রাজনগরের মতো এলাকায়। এমনকী, অমরজিৎ বলিহারের উপর হামলায় বীরভূমের বাসিন্দা কয়েক জন মাওবাদী স্কোয়াড সদস্য ছিল বলেও গোয়েন্দারা জানেন। বীরভূমের মাওবাদী প্রভাবিত এলাকায় ওই দলটিকে ‘প্রবীর গ্রুপ’ নামে অভিহিত করা হয়।

মঙ্গলবার দুমকার বিধায়ক তথা ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেনের সঙ্গে রাজ্যের মাওবাদী সমস্যা নিয়ে আলোচনা করতে এসেছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ। তিনি রাজ্যকে মাওবাদী সমস্যা সমাধানে গুরুত্ব দিতে বলেন। রাজনাথের রাঁচি সফরের ৭২ ঘণ্টার মধ্যে প্রভীলদার গ্রেফতার হওয়ার ঘটনাকে তাই বড় সাফল্য বলে দাবি করছে পুলিশ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন