পদত্যাগপত্র নিয়ে দিল্লিতে গগৈ, কটাক্ষ বিরোধীদের

রাজ্যপাল নয়, দিল্লিতে কংগ্রেস হাইকম্যান্ডের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দিতে গেলেন অসমের মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ। বিরোধীরা মুখ্যমন্ত্রীর এই পদক্ষেপকে ‘নাটক’ বলে চিহ্নিত করছেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২১ মে ২০১৪ ০৩:১২
Share:

রাজ্যপাল নয়, দিল্লিতে কংগ্রেস হাইকম্যান্ডের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দিতে গেলেন অসমের মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ। বিরোধীরা মুখ্যমন্ত্রীর এই পদক্ষেপকে ‘নাটক’ বলে চিহ্নিত করছেন। প্রদেশ কংগ্রেসের কয়েক জন নেতা ঘনিষ্ঠ মহলে বলেছেন, পদত্যাগ নয়, দলে বিদ্রোহ দমনে শীর্ষ নেতৃত্বের সাহায্যের আশাতেই গগৈ দিল্লি গিয়েছেন।

Advertisement

লোকসভা ভোটে অসমে কংগ্রেসের ভরাডুবির দায় নিয়ে পদত্যাগের কথা ঘোষণা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। ফল ঘোষণার পর তিনি বলেছিলেন ‘আমাদের কোথাও বড় ভুল হয়েছে। মানুষের মন বুঝতে পারিনি। পরাজয়ের কারণ দ্রুত খুঁজে বের করতে হবে।’ দলের একাংশ নেতা-কর্মীদের অভিযোগ, বাস্তবে সে পথে এগোননি গগৈ। কংগ্রেসের হার নিয়ে কারও সঙ্গে সে ভাবে আলোচনাও করেননি। ভোটের ফলাফল ঘোষণার পর এক দিন গল্ফ খেলে সময় কাটিয়েছেন। শুধু তাই নয়, মন্ত্রী-পরিষদের বৈঠক ডাকলেও, সেখানে সরকারের তৃতীয় বর্ষপূর্তির উৎসব নিয়েই তিনি কথাবার্তা বলেন।

আজ দিল্লিতে রওনা দেওয়ার আগে গগৈ বলেন, “কোনও বিধায়ক আনুষ্ঠানিকভাবে আমার কাছে এসে বৈঠক ডাকার অনুরোধ জানাননি। অথচ এ নিয়ে অপপ্রচার করা হচ্ছে।”

Advertisement

প্রদেশ কংগ্রেস সূত্রের খবর, গগৈ পদত্যাগপত্র নিয়ে দিল্লিতে গেলেও তা গৃহীত না-হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। উল্টে, রাজ্যে দলের অভ্যন্তরীণ বিদ্রোহ দমনে মন্ত্রিসভায় বড় রদবদলের বিষয়ে হাইকম্যান্ডের ‘সবুজ সঙ্কেত’ নিয়েই তিনি ফিরতে পারেন। কারণ গগৈ ও তাঁর অনুগামীদের নেতাদের সন্দেহ, মোদী-ঝড় নয়, বিদ্রোহী বিধায়কদের অসহযোগিতা ও প্রকাশ্য সমালোচনার জেরেই অসমে কংগ্রেসের ভরাডুবি হয়েছে।

বিরোধীরা প্রশ্ন তুলেছেন সংবিধান অনুযায়ী রাজ্যপালের কাছে পদত্যাগপত্র দেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। তা না করে গগৈ সেটি সনিয়া গাঁধীর কাছে জমা দিতে যাচ্ছেন কেন? বিরোধী শিবিরের বক্তব্য, এক দিন আগে সনিয়া-রাহুল পদত্যাগ নিয়ে যে ‘নাটক’ করেছেন, গগৈও সম্ভবত সে পথেই এগিয়েছেন।

এ নিয়ে সমালোচনায় মুখর প্রধান বিরোধী দল এআইইউডিএফ। দলের সভাপতি বদরুদ্দিন আজমল বলেন, ‘‘গগৈয়ের এমন গা-ছাড়া মনোভাবের জন্যই রাজ্যে বিজেপি-র শক্তিবৃদ্ধি হয়েছে।”

প্রদেশ কংগ্রেসে গগৈ-বিরোধী শিবির অনেক দিন ধরেই তাঁর নেতৃত্বের বিরুদ্ধে সরব। ইতিমধ্যে, বিদ্রোহী গোষ্ঠী নিজেদের মধ্যে বৈঠকও করেছে। তাঁদের বক্তব্য, পরাজয়ের পরও গগৈয়ের কোনও অনুশোচনা হচ্ছে না। তিনি আত্মসমালোচনাও করেননি। মুখ্যমন্ত্রী পদত্যাগের কথা ঘোষণা করার পরেই, বিদ্রোহীরা দ্রুত নেতৃত্ব বদল ও পরাজয়ের কারণ খুঁজতে কংগ্রেস বিধায়কদের বৈঠক ডাকার দাবি জানান। ক্ষুব্ধ নেতাদের বক্তব্য, বিহারে নীতীশ কুমার পদত্যাগ করে দেখিয়েছেন। নতুন মুখ্যমন্ত্রীও সেখানে শপথ নিয়েছেন। অসমেও তা হওয়া উচিত।

এই পরিস্থিতিতে অঞ্জন দত্ত, রকিবুল হুসেন, বীরেন সিংহ ইংতির মতো নেতারা গগৈয়ের পাশেই দাঁড়িয়েছেন। দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, গত রাতে কয়নাধারায় মুখ্যমন্ত্রীর বাসভবনে একটি বৈঠক হয়। সেখানে মন্ত্রী-বিধায়কদের একাংশ গগৈয়ের পদত্যাগের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেন। তাঁরা বলেন, “পরাজয়ের দায় গগৈয়ের একার নয়। তেমন হলে, আমরাও পদত্যাগ করতে রাজি।” অঞ্জনবাবু বলেন, “১৫ দিনের মধ্যে মন্ত্রিসভায় রদবদল হওয়া উচিত। যে সব মন্ত্রী-বিধায়ক মুখ্যমন্ত্রীকে চান না, তাঁরাই আগে পদত্যাগ করছেন না কেন?”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement