পরপর দু’বারের কম্পনে রাস্তায় নেমে এল শহর

রাতের কড়া নাড়া মালুম হল ৯টা ৫২ মিনিটে। একযোগে ঝনঝনিয়ে উঠল দরজা-জানলা। থরথরিয়ে কেঁপে উঠল মেঝে। মাঝারি মাত্রার ভূমিকম্প নাড়া দিয়ে গেল শহর কলকাতাকে। হায়দরাবাদের জাতীয় সুনামি সতর্কতা কেন্দ্র (আইটিইডব্লিউসি) জানাচ্ছে, কম্পন একটি নয়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২২ মে ২০১৪ ০৩:৩০
Share:

রাতের কড়া নাড়া মালুম হল ৯টা ৫২ মিনিটে। একযোগে ঝনঝনিয়ে উঠল দরজা-জানলা। থরথরিয়ে কেঁপে উঠল মেঝে। মাঝারি মাত্রার ভূমিকম্প নাড়া দিয়ে গেল শহর কলকাতাকে।

Advertisement

হায়দরাবাদের জাতীয় সুনামি সতর্কতা কেন্দ্র (আইটিইডব্লিউসি) জানাচ্ছে, কম্পন একটি নয়। এক মিনিটের ব্যবধানে দু’টি কম্পন হয়েছে পারাদীপ বন্দরের কাছাকাছি, বঙ্গোপসাগরের পাঁচ কিলোমিটার নীচে। রিখটার স্কেলে প্রথম কম্পনের মাত্রা ৫.৮। মিনিটখানেকের মধ্যেই দ্বিতীয় কম্পন। তার তীব্রতা তুলনায় কম, রিখটার স্কেলে পাঁচের কাছাকাছি। দ্বিতীয় কম্পনটি প্রথম কম্পনেরই জের বলে ভূকম্প-বিশেষজ্ঞেরা জানান।

কম্পন অনুভূত হয়েছে কলকাতা-সহ সমগ্র পূর্ব ভারতে। দক্ষিণে অন্ধ্রপ্রদেশ থেকে উত্তরে দিল্লিতেও ভূকম্পন টের পাওয়া গিয়েছে। তবে যে-হেতু ভূমিকম্পের উৎসস্থল বঙ্গোপসাগরে, তাই উপকূলবর্তী অঞ্চলেই কম্পনের মাত্রা ছিল তুলনায় বেশি। দিঘা, পুরী, গোপালপুরের হোটেল থেকে পর্যটকেরা ভয়ে বাইরে বেরিয়ে আসেন। ভুবনেশ্বরে উৎকল বিশ্ববিদ্যালয়ের হস্টেল থেকে বেরিয়ে আসেন আবাসিকেরা। তবে গভীর রাত পর্যন্ত ওই ভূমিকম্পের জেরে কোথাও জীবনহানি বা অন্য কোনও ক্ষয়ক্ষতির খবর মেলেনি।

Advertisement

কলকাতায় প্রথম কম্পন অনুভূত হয় বুধবার রাত ৯টা ৫২ মিনিট নাগাদ। ৭-৮ সেকেন্ড স্থায়ী হয় সেই কম্পন। শুধু মেঝে বা দরজা-জানলাতেই কাঁপুনি নয়, নড়ে ওঠে টেবিল-চেয়ারও। টেবিলে উল্টে পড়ে জলের গ্লাস। এক সেকেন্ডের বিরতি। তফের কম্পন। মধ্য কলকাতার একটি ক্লাবে নৈশভোজ সারছিলেন শুভেন্দ্র মল্লিক। তিনি বলেন, “হঠাৎ দেখলাম, বাতানুকূল যন্ত্রের ঢাকনাটা খুলে নীচে পড়ে গেল। কী হল, বোঝার আগেই দেখলাম, গ্লাসে রাখা জল কাঁপছে। তখনই দেখলাম, অনেকে নীচে নেমে যাচ্ছেন। বুঝলাম ভূমিকম্প হয়েছে।” দক্ষিণ কলকাতার একটি বহুতলের ২০তলার বাসিন্দা মনসিজ দত্ত জানান, হঠাৎ জানলার কাচ ঝনঝন করে উঠল। “২০০৪ সালে সুনামির সময়ে এমন কম্পন দেখেছি। তাই এটা যে ভূমিকম্প, বুঝতে অসুবিধা হয়নি,” বললেন মনসিজবাবু।

তত ক্ষণে মহানগরীর বিভিন্ন প্রান্তে বাড়ি ছেড়ে রাস্তায় নেমে এসেছেন অনেকেই। বিশেষ করে ভিড় জমেছে বহুতলের নীচে। সংবাদপত্রের দফতরে বাজছে টেলিফোনগুলি। কী হল, জানতে চাইছেন উৎকণ্ঠিত শহরবাসী। ফোন আসছে কাঁথি, এগরা, বহরমপুর, উলুবেড়িয়া, পুরী, রাঁচি, পটনা থেকেও। দিঘা, পুরীতে বেশি কম্পন অনুভূত হয়েছে। সেখানে পর্যটকদের অনেকেই হোটেল ছেড়ে বেরিয়ে আসেন রাস্তায়।

দিল্লির মৌসম ভবনের ডিরেক্টর জেনারেল লক্ষ্মণ সিংহ রাঠৌর জানান, এ বারের কম্পনের উৎসস্থল পারাদীপ বন্দর থেকে ৬০ কিলোমিটার পূর্বে, বঙ্গোপসাগরের অভ্যন্তরে। বঙ্গোপসাগরের নীচে দু’টি চলমান প্লেটের একটি অন্যটির উপরে উঠে যাওয়ার পরিণামেই এই ভূমিকম্প। সমুদ্রতলে কম্পন কেন্দ্রীভূত হলেও সুনামির কোনও পূর্বাভাস দেয়নি আইটিইডব্লিউসি। ভূকম্প-বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, সমুদ্রের নীচে আট বা তার বেশি মাত্রার ভূমিকম্প হলে তবেই সুনামির জন্ম হয়। এ ক্ষেত্রে ভূমিকম্পের তীব্রতা ছিল অনেক কম।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন