বিচ্ছিন্নতা ভাঙতেই ভোটের রেকর্ড গড়লেন কাশ্মীরিরা

২৮ কি ২৯ শতাংশ থেকে একাবারে ৬৬ শতাংশ। আর তাতেই ভেঙে তছনছ বিগত ২৭ বছরের রেকর্ড। আজ, পঞ্চম দফার ভোটের দিন জম্মু-কাশ্মীরে ভোট পড়েছে ৬৬ শতাংশ। নির্বাচন কমিশনের পরিসংখ্যান অনুযায়ী যা সাতাশ বছরের মধ্যে সব চেয়ে বেশি। আজ দিনের শেষে মুখ্য নির্বাচনী অফিসার বিনোদ জুৎসি বলেন, “১৯৮৭ সালের পরে এই প্রথম এত বেশি ভোট পড়েছে জম্মু-কাশ্মীরে। ২৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে এত সংখ্যক ভোট পড়তে দেখেনি গোটা জম্মু-কাশ্মীর।”

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শ্রীনগর শেষ আপডেট: ২১ ডিসেম্বর ২০১৪ ০৩:০৫
Share:

ভোট দেওয়ার পর। শনিবার জম্মুতে। ছবি: পিটিআই।

২৮ কি ২৯ শতাংশ থেকে একাবারে ৬৬ শতাংশ। আর তাতেই ভেঙে তছনছ বিগত ২৭ বছরের রেকর্ড। আজ, পঞ্চম দফার ভোটের দিন জম্মু-কাশ্মীরে ভোট পড়েছে ৬৬ শতাংশ। নির্বাচন কমিশনের পরিসংখ্যান অনুযায়ী যা সাতাশ বছরের মধ্যে সব চেয়ে বেশি। আজ দিনের শেষে মুখ্য নির্বাচনী অফিসার বিনোদ জুৎসি বলেন, “১৯৮৭ সালের পরে এই প্রথম এত বেশি ভোট পড়েছে জম্মু-কাশ্মীরে। ২৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে এত সংখ্যক ভোট পড়তে দেখেনি গোটা জম্মু-কাশ্মীর। এটা এক কথায় ঐতিহাসিক। পাঁচ দফার এই নির্বাচন প্রক্রিয়া একেবারেই শান্তিপূর্ণ ছিল। প্রতিটি দফায় ভোটাররা নিজেদের উৎসাহে অনেক ক্ষণ ধরে লাইনে দাঁড়িয়ে ভোট দিয়েছেন।”

Advertisement

আজ জম্মু, কাঠুয়া আর রাজৌরি জেলায় ভোট ছিল। কুড়িটি আসনে প্রার্থী ৩১২ জন। যাঁদের মধ্যে উপমুখ্যমন্ত্রী তারা চন্দ-সহ মন্ত্রিসভার পাঁচ হেভিওয়েট সদস্যও রয়েছেন। সরপঞ্চ হত্যার ঘটনা আজও ঘটেছে কাশ্মীরে। পুলিশ জানিয়েছে, সোপোর জেলার তারাজু গ্রামের গুলাম মহম্মদ বাটকে জঙ্গিরা পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক রেঞ্জ থেকে গুলি করে পালায়। গত এক মাসে এ নিয়ে চার জন সরপঞ্চ জঙ্গিদের হাতে খুন হলেন।

কিন্তু কনকনে ঠান্ডা, প্রবল তুষারপাত, সীমান্তের ও-পার থেকে আসা জঙ্গি হুমকি আর বিচ্ছিন্নতাবাদীদের বয়কটের ডাক সত্ত্বেও কেন হঠাৎ উপত্যকার মানুষের মধ্যে ভোট দিতে এই উৎসাহ?

Advertisement

সাধারণ কাশ্মীরিদের একটা অংশের দাবি, বিচ্ছিন্নতাবাদী হুরিয়ত নেতারা মুখে বয়কটের কথা বললেও ভিতরে ভিতরে তাঁরা মানুষকে ভোট দিতে বলেছেন এ বার। কিন্তু শুধু কি তাই? এত বেশি ভোট পড়ার কারণ কি একমাত্র হুরিয়ত নেতাদের ইতিবাচক ইঙ্গিত? রাজনৈতিক দলগুলি একে অপরের বিরুদ্ধে রিগিংয়ের অভিযোগ আনছেন বটে। বলা হচ্ছে, এক একটি দলই জোর করে বুথ দখল করে সাধারণ মানুষের ভোটটা দিয়ে দিচ্ছে।

কিন্তু তার পরেও সেটাকেই প্রধান কারণ হিসেবে দেখছেন না নাগরিক নেতারা। তাঁদের কথায় মানুষ বুঝছেন, জঙ্গিদের ভয় না পেয়ে গণতন্ত্রের জোর দেখানোর সময় অবশেষে এসেছে। কাশ্মীরের মানুষ বুঝছেন, বাকি দেশ থেকে বিচ্ছিন্ন থেকে আখেরে কোনও লাভ হচ্ছে না তাঁদের। আজকের রেকর্ড ভোট পড়ার পিছনে অন্তত এই যুক্তিই কাজ করেছে বলে ধারণা। তাঁদের বক্তব্য, গত মঙ্গলবার পেশোয়ারের স্কুলে জঙ্গিদের গুলিতে এত শিশুর মৃত্যু মেনে নিতে পারছে না উপত্যকা। সাধারণ কাশ্মীরিদের মনে এখন একটাই প্রশ্ন, যে পাকিস্তান এত দিন এই সব জঙ্গিকে মদত দিয়ে এসেছে, আজ সে দেশের শিশুরাই যখন রেহাই পাচ্ছে না, তাদের কথায় আর ভরসা রাখা যায় কী ভাবে? আর এই ভয় থেকেই সন্ত্রাসবাদকে সমূলে উচ্ছেদ করার ডাক দিচ্ছেন উপত্যকাবাসী। গত পঁচিশ বছর ধরে সন্ত্রাসবাদী আর বিচ্ছিন্নতাবাদীদের ভয়ে গণতান্ত্রিক পরিকাঠামোর থেকে মুখ ফিরিয়ে থেকেছেন কাশ্মীরিরা। কিন্তু তাঁদের বক্তব্য, তাতে তাঁদেরই ক্ষতি হয়েছে। রাজ্যে যথার্থ উন্নয়ন হয়নি এত দিন। গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগ করে এ বার তাই নিজেদের শুধরে নেওয়ার চেষ্টায় উপত্যকাবাসী। তবে ভোটারদের মানসিকতার এই পরিবর্তন আদৌ রাজ্য রাজনীতিতে কোনও বদল আনতে পারে কি না, তা বলবে আগামী ২৩ তারিখের ফলাফলই।

আরও একটি বিষয় রয়েছে। কাশ্মীরের উন্নয়নে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ভোটের প্রচারে বেশ কয়েক বার তিনি জম্মু ও কাশ্মীরে প্রচারে গিয়েছেন। গণতন্ত্রের মূল ধারায় ফিরে উন্নয়নের সুফল ভাগ নেওয়ার আর্জি জানিয়েছেন উপত্যকার মানুষজনকে। তার একটা প্রভাবও ভোটারদের মধ্যে নিশ্চিত ভাবেই পড়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। ভোটের লাইনে তাই উপচে পড়েছেন মানুষ।

সকাল আটটায় ভোটগ্রহণ শুরু হয়। কিন্তু তার আগে থেকেই বুথে বুথে ভোটারদের লম্বা লাইন ছিল চোখে পড়ার মতো। আগের চার দফাতেও এই ছবিটাই চোখে পড়েছে। নির্বাচনের শেষ দিনেও তার বদল হয়নি। সকালের আলো ফুটতে না ফুটতেই বুথে বুথে লম্বা লাইন। এক-আধটা কেন্দ্রে নয়। গোটা রাজ্যের প্রায় সব ক’টা কেন্দ্রেই ভোটারদের উৎসাহ এ বার সারা দেশের নজর কেড়েছে।

নির্বাচন কমিশন সূত্রে শান্তিপূর্ণ ভোটের দাবি করা হলেও আজ কিছু বিক্ষিপ্ত হিংসার ঘটনা ঘটেছে। কাঠুয়া জেলায় বিজেপি প্রার্থী নির্মল সিংহকে মারধর করার অভিযোগে এফআইআর দায়ের হয়েছে কংগ্রেসের মন্ত্রী মনোহরলাল শর্মার বিরুদ্ধে। বুথের মধ্যে হিংসায় উস্কানি দেওয়ার অভিযোগে এফআইআর দায়ের হয়েছে রাজেন্দ্র সিংহ নামে এক নির্দল প্রার্থীর বিরুদ্ধেও। তবে পুলিশ সূত্রে জানানো হয়েছে, কোথাও হতাহতের কোনও খবর নেই।

ভোট ঝাড়খণ্ডেও

জম্মু-কাশ্মীরের সঙ্গে আজ সর্বোচ্চ ভোট পড়ল ঝাড়খণ্ডেও। নির্বিঘ্নে শেষ হল রাজ্যের পঞ্চম তথা শেষ দফার নির্বাচন। রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক পি কে জাজোড়িয়া জানিয়েছেন, আজ মোট ৭০.৪২ শতাংশ ভোট পড়েছে। সাঁওতাল পরগনার ষোলোটি আসনে আজ নির্বাচন ছিল। যার মধ্যে দুমকা ও বারহেট আসন দুটি রয়েছে। যে দুটি আসনের প্রার্থী স্বয়ং রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেন। দুমকায় ৬৩ শতাংশ আর বারহেটে ৬৯ শতাংশ ভোট পড়েছে। সাঁওতাল পরগনায় ৭০ শতাংশ ভোটের আশা করা হচ্ছে বলে মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক গতকালই জানিয়েছিলেন। ভোটারদের ভোট দেওয়াতে বিভিন্নভাবে ভোটের সপক্ষে কমিশন প্রচার করেছিল। কমিশন জানায়, পাঁচ দফার নির্বাচনে গড়ে মোট ৬৬ শতাংশ ভোট পড়েছে। যা ২০০৯ সালের থেকে ৯ শতাংশ বেশি। সেবারে এ রাজ্যে ভোট পড়েছিল ৫৬.৯৭ শতাংশ। এদিকে নির্বাচন শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই তার ফলাফল কী হতে পারে তা নিয়ে বিভিন্ন মহলে আলোচনা শুরু হয়ে গিয়েছে। আগামী ২৩ তারিখ চতুর্থ বিধানসভা নির্বাচনের ফল ঘোষণা হওয়ার কথা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন