বিদ্বেষ রুখতে আইন কড়া করছে সরকার

উত্তর-পূর্বের বাসিন্দাদের উপর হামলা চালালে এ বার জেলে যেতে হবে। এই ধরনের বিদ্বেষজনিত হামলাকে এ বার জামিন অযোগ্য অপরাধের তালিকায় আনতে চাইছে মোদী সরকার। উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলির মুখ্যমন্ত্রীদের দাবি মেনেই সরকার এই পরিকল্পনা নিয়েছে।

Advertisement

প্রেমাংশু চৌধুরী

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৩ জুলাই ২০১৪ ০৩:১৪
Share:

উত্তর-পূর্বের বাসিন্দাদের উপর হামলা চালালে এ বার জেলে যেতে হবে। এই ধরনের বিদ্বেষজনিত হামলাকে এ বার জামিন অযোগ্য অপরাধের তালিকায় আনতে চাইছে মোদী সরকার। উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলির মুখ্যমন্ত্রীদের দাবি মেনেই সরকার এই পরিকল্পনা নিয়েছে।

Advertisement

দু’বছর আগে বেঙ্গালুরুতে মণিপুরী যুবক রিচার্ড লইতংবাম খুন হন। তার পর থেকেই উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলির মুখ্যমন্ত্রীরা দাবি তোলেন, সেখানকার বাসিন্দাদের উপর এই ধরনের আক্রমণ বন্ধ করতে পৃথক আইন হোক। গত জানুয়ারিতে দিল্লিতে অরুণাচলের নিদো টানিয়ার গণপিটুনিতে খুন হওয়ার পর সেই দাবি আরও জোরালো হয়। কিন্তু মনমোহন সরকারের তরফে এ বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। এ বার মোদী সরকার সেই পদক্ষেপ করছে। পৃথক আইন না করলেও ভারতীয় দণ্ডবিধিতে রদবদল করে উত্তর-পূর্বের বাসিন্দাদের প্রতি বৈষম্য ও তাঁদের উপর হামলা রুখতে চাইছে মোদী সরকার। নতুন ব্যবস্থায় এই ধরনের সমস্ত অপরাধ জামিন অযোগ্য অপরাধের তালিকায় পড়বে। শাস্তি অন্তত তিন বছরের কারাদণ্ড। রবিবার রাতে দিল্লিতে ফের মণিপুরী যুবক সালোনি খুন হওয়ার পরে এ বিষয়ে আর দেরি করতে চাইছে না কেন্দ্র।

বিজেপি নেতৃত্ব মনে করছে, ভারতীয় দণ্ডবিধিতে সংশোধন করে উত্তর-পূর্বের বাসিন্দাদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা গেলে ওই রাজ্যগুলিতে বিজেপি রাজনৈতিক ভাবেও লাভবান হবে। প্রধানমন্ত্রী উত্তর-পূর্বের উন্নয়নে জোর দিয়েছেন। আর্থিক বাজেট ও রেল বাজেটেও তার প্রতিফলন আছে। অরুণাচলের নেতা কিরেণ রিজিজুকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী করা হয়েছে। কিরেণ বলেন, “উত্তর-পূর্বের মানুষদের উপর বারবার হামলাকে যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়েই দেখছি।”

Advertisement

উল্টো দিকে মনমোহন-সরকারের জমানাতেই অসমের মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ, মিজোরামের লাল থানওয়ালা, মেঘালয়ের মুকুল সাংমা, মণিপুরের ওক্রাম ইবোবি সিংহরা কেন্দ্রের কাছে জাতিবিদ্বেষ রোখার জন্য পৃথক আইনের জন্য আবেদন করেন। ইউপিএ কংগ্রেসের মুখ্যমন্ত্রীদের কথাতেও নড়ে বসেনি। মিজোরামের অ্যাডভোকেট জেনারেল বিশ্বজিত্‌ দেব বলেন, “চিদম্বরম, শিন্দের কাছে চিঠি লিখেছিলাম। মুখ্যমন্ত্রীরাও দাবি তুলেছিলেন। সব রাজ্যে উত্তর-পূর্বের বাসিন্দাদের প্রতি জাতিবিদ্বেষ দমন করার জন্য পুলিশের অপরাধ দমন শাখার একজন নির্দিষ্ট অফিসার নিয়োগ করার জন্যও অনুরোধ জানানো হয়েছিল।” লোকসভা নির্বাচনের প্রচারে অসমে গিয়ে রাহুল গাঁধীও পৃথক আইনের কথা বলেন। ভারতীয় দণ্ডবিধি সংশোধন করা হলেও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক মনে করছে, মুখ্যমন্ত্রীদের দাবি মেনে জাতিবিদ্বেষ রোখার জন্য পৃথক আইন সম্ভব নয়।

বর্তমানে ভারতীয় দণ্ডবিধির ১৫৩-এ ধারায় বিদ্বেষজনিত অপরাধ দমনের কথা বলা হয়েছে। মূলত এই ধারাটিকেও আরও শক্ত করা হবে। এমন কোনও হামলা, যাতে বিশেষ কোনও জাতি, সম্প্রদায় বা ধর্মীয় গোষ্ঠীর মধ্যে আতঙ্ক তৈরি হয়, সেগুলি বিদ্বেষজনিত হামলা বলে গণ্য হবে। উত্তর-পূর্বের বাসিন্দাদের সমস্যা খতিয়ে দেখে মদনপ্রসাদ বেজবড়ুয়া যে সুপারিশ করেছেন, তা-ও দ্রুত কার্যকর করা হবে। পুলিশ বাহিনীতে উত্তর-পূর্বের জন্য বিশেষ সেল তৈরির সিদ্ধান্তও এর মধ্যে থাকবে। এ দিকে দিল্লি-সহ দেশের অন্য প্রান্তে উত্তর-পূর্বের বাসিন্দাদের উপর হামলা রুখতে কেন্দ্রকে কঠোর পদক্ষেপ করার দাবি উঠেছে সংসদে। দুষ্কৃতী-হামলায় এক নাগা যুবকের মৃত্যুর প্রসঙ্গ লোকসভায় তোলেন কংগ্রেস সাংসদ নিনোঙ এরিং। এই ধরনের বিদ্বেষমূলক ঘটনা আটকাতে তিনি কেন্দ্রকে দ্রুত কঠোর আইন তৈরির অনুরোধ জানান। তৃণমূল সাংসদ সুখেন্দুশেখর রায় রাজ্যসভায় বলেন, “জানুয়ারি থেকে দিল্লিতে এ ভাবে তিন জন খুন হয়েছেন।” বিজেপি-র তরুণ বিজয় কালকের ঘটনার পাশাপাশি উত্তর-পূর্বের বাসিন্দাদের উপর আরও কয়েকটি হামলার উদাহরণ তুলে ধরেন।

কেন্দ্রীয় সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রী নাজমা হেপতুল্লাকে সদস্যদের উদ্বেগের বিষয়টি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে জানাতে অনুরোধ করেন রাজ্যসভার ডেপুটি চেয়ারম্যান পি জে কুরিয়েন ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন