বন্ধুত্বের টানে শর্মিষ্ঠার প্রচারে সুস্মিতা

কাছাকাছি দাঁড়িয়ে দু’জন। ‘বড় দিদি’-র প্রশংসা আর প্রচারে ‘ছোট বোন’ অনর্গল কথা বলে চলেছেন! রক্তের সম্পর্ক নেই কে বলবে! বন্ধুত্ব ছিল ওঁদের বাবাদের মধ্যেও। চিত্তরঞ্জন পার্কে বিপিনচন্দ্র পাল সভাগৃহের শনি-সন্ধ্যা যেন সেই নস্টালজিয়া উস্কে দিল চকিতে। প্রণব মুখোপাধ্যায়-কন্যা শর্মিষ্ঠা ও সন্তোষমোহন দেব-কন্যা সুস্মিতা প্রমাণ করলেন পরের প্রজন্মেও বইছে সেই পারিবারিক সম্পর্কের ধারা। বিপিনচন্দ্র পাল সভাগৃহে বসে যেন ফ্ল্যাশব্যাকে দেখা যাচ্ছিল প্রায় তিরিশ বছর আগের এক বিকেলের ঘটনা! আগরতলা সার্কিট হাউসে বসে আছেন ত্রিমূর্তি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০১ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০২:২২
Share:

দিল্লির বিপিনচন্দ্র পাল সভাগৃহে সুস্মিতা ও শর্মিষ্ঠা (ডান দিকে)। শনিবার রাজেশ কুমারের তোলা ছবি।

কাছাকাছি দাঁড়িয়ে দু’জন। ‘বড় দিদি’-র প্রশংসা আর প্রচারে ‘ছোট বোন’ অনর্গল কথা বলে চলেছেন! রক্তের সম্পর্ক নেই কে বলবে! বন্ধুত্ব ছিল ওঁদের বাবাদের মধ্যেও। চিত্তরঞ্জন পার্কে বিপিনচন্দ্র পাল সভাগৃহের শনি-সন্ধ্যা যেন সেই নস্টালজিয়া উস্কে দিল চকিতে। প্রণব মুখোপাধ্যায়-কন্যা শর্মিষ্ঠা ও সন্তোষমোহন দেব-কন্যা সুস্মিতা প্রমাণ করলেন পরের প্রজন্মেও বইছে সেই পারিবারিক সম্পর্কের ধারা।

Advertisement

বিপিনচন্দ্র পাল সভাগৃহে বসে যেন ফ্ল্যাশব্যাকে দেখা যাচ্ছিল প্রায় তিরিশ বছর আগের এক বিকেলের ঘটনা! আগরতলা সার্কিট হাউসে বসে আছেন ত্রিমূর্তি। কংগ্রেস থেকে বহিষ্কৃত হওয়ার পর সেই প্রথম রাজীব গাঁধীর সঙ্গে দেখা হল প্রণব মুখোপাধ্যায়ের। মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকায় বরাক উপত্যকার ডাকসাইটে কংগ্রেস নেতা সন্তোষমোহন দেব। দলে ফিরে এসে এর পরেই ত্রিপুরা ভোটে প্রচারে নেমে পড়েন প্রণববাবু।

মুখোপাধ্যায় ও দেব পরিবারের সেই বন্ধুত্বের রেখচিত্র পরের তিন দশক ধরে শুধু উপরের দিকে গিয়েছে। দিল্লি বিধানসভা ভোটে গ্রেটার কৈলাস বিধানসভা কেন্দ্র থেকে কংগ্রেসের প্রার্থী হয়েছেন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের মেয়ে শর্মিষ্ঠা। কংগ্রেসেরই অনেকে বলছেন, অসীম বুকের পাটা থাকলে বুঝি এমন ঝুঁকি নেওয়া যায়! দিল্লিতে কংগ্রেসের ঘোর দুঃসময় চলছে। সেই সময়ে ইনিংস শুরু করাটা কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হওয়ারই সামিল। শর্মিষ্ঠার সেই লড়াইয়ে অংশীদার হতে পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন অসমের শিলচরের সাংসদ তথা সন্তোষ-কন্যা সুস্মিতা দেব।

Advertisement

দক্ষিণ দিল্লির বাঙালি মহল্লা চিত্তরঞ্জন পার্ক গ্রেটার কৈলাস বিধানসভা কেন্দ্রের মধ্যে পড়ে। লোকে বলে মিনি কলকাতা। দেশ ভাগের পরে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের অনেক পরিবার এসে এখানে পাকাপাকি ভাবে থাকতে শুরু করেন। আছেন সিলেটের প্রচুর মানুষও। বিপিনচন্দ্র পাল সভাগৃহটি কার্যত একার উদ্যোগে গড়েছিলেন সন্তোষবাবু। এটি শ্রীহট্ট সম্মিলনীর অধীনে একটি প্রতিষ্ঠান। যার অছি পরিষদে সুস্মিতা এখন সদস্য। স্বাভাবিক ভাবেই চিত্তরঞ্জন পার্ক চত্বরে সন্তোষবাবু ও তাঁর পরিবারকে ঘিরে বহু মানুষের আবেগ ও স্মৃতি রয়েছে। শর্মিষ্ঠার হয়ে প্রচারে আজ সেটাই পুঁজি করলেন সুস্মিতা। অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন প্রণব মুখোপাধ্যায়ের ছেলে অভিজিৎও।

লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের কিঙ্গস কলেজ থেকে আইন পাশ করেছেন সুস্মিতা। এক সময়ে ওকালতিও করেছেন চুটিয়ে। কথাবার্তায় চৌখস। বাংলায় কথা বলার সময় সিলেটি টানটাও ধরা পড়ে স্পষ্ট।

প্রণব-সন্তোষ বন্ধুত্বের প্রসঙ্গ তুলতেই তাঁর চোখ উজ্জ্বল হয়ে উঠল। বললেন, “২০১১ সালে যখন শিলচর থেকে বিধানসভা নির্বাচনে প্রার্থী হই তখন উনি (প্রণববাবু) আমার জন্য প্রচারে গিয়েছিলেন। বেশি কথা বলেননি। শুধু বলেছিলেন, সুস্মিতা ছোট্ট মেয়ে। আপনারা সন্তোষবাবুকে হারিয়ে যে ভুল করেছেন, তা আর করবেন না। সুস্মিতা বয়সে ছোট হলেও ও আপনাদের সব সমস্যার কথা জানে। তা গুরুত্বের সঙ্গে তুলেও ধরছে।” সুস্মিতার মতে, শুধু ওইটুকুতেই জাদুর মতো কাজ হয়েছিল। শিলচরের বাসিন্দারা তাঁর পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। সন্তোষবাবুর চেয়েও বেশি ব্যবধানে জিতেছিলেন সুস্মিতা।

অসমে ব্রহ্মপুত্র ও বরাক উপত্যকার রাজনীতিকদের মধ্যে টানাপড়েন দীর্ঘদিনের। বরাক উপত্যকার বাঙালিরা রাজ্য রাজনীতিতে কখনওই বেশি দূর উঠতে পারেননি। বাধা পেয়েছেন। সন্তোষবাবুকে কেন্দ্রের রাজনীতিতে নিয়ে আসার নেপথ্যে ছিলেন প্রণববাবুই।

শর্মিষ্ঠার কথায়,“আমরা একটা বড় পরিবারের মতো। রাজনীতি হোক বা তার বাইরের বিষয়, সব সময় একে অপরের পাশে থেকেছি। সুস্মিতা আমার ছোট বোন। শিলচরে পুরভোট আসন্ন। তার মাঝেও গত দু’দিন ধরে একটানা গ্রেটার কৈলাশ ও চিত্তরঞ্জন পার্কে বাড়ি বাড়ি গিয়ে প্রচার করছে।”

গত কাল সকালে চিত্তরঞ্জন পার্কের প্রায় চারশ’ বাড়িতে ঘুরেছেন সুস্মিতা। বিকেলে গ্রেটার কৈলাশ চত্বরে ঘুরেছেন। আজও কমবেশি সেই রুটিন ছিল। বললেন, “শর্মিষ্ঠাদি এখানেই বড় হয়েছেন। স্থানীয় মানুষ সবাই ওঁকে চেনেন। এমন নয় যে দুম করে উনি প্রার্থী হয়ে গিয়েছেন। হত পাঁচ-ছ’মাস ধরে দিদি গ্রেটার কৈলাশ নির্বাচন কেন্দ্রে জনসংযোগ অভিযান চালাচ্ছেন।” কিন্তু দিদির রাজনৈতিক সম্ভাবনা নিয়ে বোনের কী ধারণা? সুস্মিতার মতে, “রাজনীতিতে মানুষ নেতানেত্রীর কাছে এখন দায়বদ্ধতা চায়। দিদিও সে কথা তুলে ধরছেন।” ছোট বোন জানাচ্ছেন, গত কাল বিজেপি ও আম আদমি পার্টির প্রার্থীর সঙ্গে এক বিতর্কসভায় উপস্থিত ছিলেন তাঁর দিদি। ওই দু’জনকে বোল্ড আউট করে দিয়েছেন তিনি।

ফলের বিচার এখনই করা ঠিক হবে না। বরং দিল্লি কংগ্রেসের সম্পাদক নরেশ কুমারের কথায়, আজকের ছবিটার তাৎপর্য অন্য। শারীরিক অসুস্থতার কারণে সন্তোষবাবু সংসদীয় রাজনীতি থেকে প্রায় অবসর নিয়েছেন। রাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচিত হয়ে রাজনীতির উর্ধ্বে চলে গেছেন প্রণববাবু। কিন্তু তাঁদের রাজনৈতিক বন্ধুত্ব কেবল পরের প্রজন্মে প্রসারিত হয়নি, কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াইও করছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন