তিন মাস বাদে জম্মু ও কাশ্মীরে বিধানসভা নির্বাচন। তার আগে ভারত-পাক বিদেশসচিব পর্যায়ের আলোচনা ভেস্তে যাওয়াকে উপত্যকায় প্রচারের বড় অস্ত্র করতে চাইছে কংগ্রেস। এ ব্যাপারে ইঙ্গিত দিয়ে প্রাক্তন বিদেশমন্ত্রী সালমন খুরশিদ আজ বলেন, “হঠাৎই বিদেশসচিব পর্যায়ের বৈঠক ডেকে বসার কোনও কারণ ছিল না। আবার সেই বৈঠক যে ভাবে বাতিল করে দেওয়া হল, তা-ও অর্বাচীনের মতো। বিদেশনীতির ক্ষেত্রে এ হল মোদী সরকারের প্রথম বড় ব্যর্থতা। এর গুরুতর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে কাশ্মীরের পরিস্থিতিতে।”
এ মাসের ২৬ তারিখ ইসলামাবাদে ভারত-পাক বিদেশসচিব পর্যায়ের বৈঠক হওয়ার কথা ছিল। কেন্দ্রে মোদী সরকার এই মর্মে ঘোষণার পরই কংগ্রেস তার কার্য-কারণ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল। তার মধ্যেই ভারতে পাক হাইকমিশনার আবদুল বাসিত উপত্যকার হুরিয়ত নেতাদের দিল্লিতে আলোচনায় ডাকেন। বিচ্ছিন্নতাবাদী হুরিয়ত নেতাদের সঙ্গে পাক কূটনীতিকের ওই বৈঠকের প্রতিবাদ করেই বিদেশসচিব পর্যায়ের বৈঠক বাতিল করে দেয় নয়াদিল্লি।
আজ সেই প্রসঙ্গেই প্রাক্তন বিদেশমন্ত্রী খুরশিদ বলেন, বিদেশসচিব পর্যায়ের আলোচনা শুরু করার জন্য আসলে কূটনৈতিক স্তরে দরকারি পরামর্শটুকুও করেনি সরকার। আলোচনা করেছিল গোয়েন্দা পর্যায়ে। সরকার এ-ও ভেবেছিল, বিদেশসচিব পর্যায়ের বৈঠক থেকে হয়তো কোনও নাটকীয় ফল পাওয়া যাবে। খুরশিদ বলেন, এই প্রয়াস ব্যর্থ হওয়ারই ছিল। তা ছাড়া হুরিয়ত নেতাদের সঙ্গে পাক কূটনীতিকের বৈঠকের কারণ দেখিয়ে যে ভাবে বৈঠক বাতিল করা হল, তা থেকে বোঝা যাচ্ছে মোদী সরকার কাশ্মীরের সমস্যাটাই বোঝে না।
প্রশ্ন হল, বৈঠক বাতিল করে দেওয়ার পদক্ষেপকে অনেকেই যখন বাহবা দিচ্ছেন, তখন খুরশিদ-গুলাম নবি আজাদরা কেন বিষয়টি নিয়ে সমালোচনায় মুখর?
জবাবে ঘরোয়া আলোচনায় কংগ্রেস নেতারা বলছেন, অতীতে বাজপেয়ীর সময় এবং পরে মনমোহন জমানাতেও পাক রাষ্ট্রদূতেরা হুরিয়ত নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। কিন্তু তাতে দ্বিপাক্ষিক আলোচনা বন্ধ হয়নি। ওই সব বৈঠককে গুরুত্ব না দিয়ে প্রকারান্তরে হুরিয়ত গোষ্ঠীগুলিকেই অপ্রাসঙ্গিক করে তুলেছিল নয়াদিল্লি। কিন্তু হুরিয়ত নেতাদের সঙ্গে পাক দূতের সাক্ষাতের পর যে ভাবে বৈঠক ভেস্তে দেওয়া হল, তাতে বিচ্ছিন্নতাবাদীরা ফের প্রাসঙ্গিকতা ফিরে পেল। কংগ্রেস নেতারা মনে করছেন, এর পর কেন্দ্রে মোদী সরকার সম্পর্কে উপত্যকার মানুষের মনে অসন্তোষ বাড়বে। আর সেই কারণেই এই সরকারের পাক-নীতির বিরোধিতায় উপত্যকায় প্রচারে নামতে চাইছে কংগ্রেস।
দলের এক শীর্ষ সারির নেতা আজ বলেন, জম্মু-কাশ্মীরের নির্বাচনে বিজেপি মেরুকরণের খেলায় নেমেছে। উপত্যকায় বিজেপির শক্তি নেই। কিন্তু হুরিয়তদের বিরোধিতা করে জম্মুর হিন্দু প্রধান ২৭টি আসন দখল করতে চাইছে বিজেপি। এই অবস্থায় মিশন ৪৪-এর জন্য কংগ্রেসকে উপত্যকার ভাবাবেগের ওপর বাড়তি গুরুত্ব দিতে হচ্ছে। হুরিয়তদের সমর্থন না জানালেও কংগ্রেস এ কথাই বোঝাতে চাইছে যে উপত্যকার মানুষের স্বরকে উপেক্ষা করছে কেন্দ্র। তবে কংগ্রেসরই এক নেতার কথায়, আসলে জম্মু-কাশ্মীরের ভোট নিয়ে উৎকণ্ঠায় রয়েছে কংগ্রেস। উপত্যকায় ন্যাশনাল কনফারেন্স এবং পিডিপি শক্তিশালী। কংগ্রেসের শক্তি সেখানে কম। বরং কংগ্রেসের ভোট বেশি ছিল জম্মুতে। কিন্তু এখন জম্মুতে বিজেপির কাছে জমি হারানোর পর উপত্যকায় খড়কুটো ধরে আঁকড়ে থাকতে চাইছেন গুলাম নবি আজাদরা। আর তাই মোদী সরকার পাক নীতির বিরুদ্ধে তাঁরা সরব হয়েছেন।