ভোটার টানতে এ বার কার্পেট, গোলাপ

এত দিন ছিল টোটা। এ বার তার বদলে নোটা। এত দিন মাওবাদীরা বন্দুকের মুখে ভোটারদের ভয় দেখিয়েছে। এ বার বিহার-ঝাড়খণ্ডের বেশ কিছু জঙ্গি উপদ্রুত এলাকায় ভোটারদের উদ্দেশে মাওবাদীদের নির্দেশ ‘বুথে যাও। নোটা বোতাম টিপে ভোট দিয়ে এস। কথার যেন অন্যথা না হয়।’ যদিও বিষয়টি নিয়ে আদৌ উদ্বিগ্ন নয় নির্বাচন কমিশন। তাঁরা চান ভোটাররা অন্তত বুথে আসুন, নিজেদের অধিকার প্রয়োগ করুন।

Advertisement

প্রবাল গঙ্গোপাধ্যায় ও স্বপন সরকার

রাঁচি ও পটনা শেষ আপডেট: ০৯ এপ্রিল ২০১৪ ০২:২৫
Share:

প্রত্যন্ত এলাকার উদ্দেশে রওনা দিচ্ছেন ভোটকর্মীরা। পলামুর ডালটনগঞ্জে। মঙ্গলবার। ছবি: সৈকত চট্টোপাধ্যায়।

এত দিন ছিল টোটা। এ বার তার বদলে নোটা।

Advertisement

এত দিন মাওবাদীরা বন্দুকের মুখে ভোটারদের ভয় দেখিয়েছে। এ বার বিহার-ঝাড়খণ্ডের বেশ কিছু জঙ্গি উপদ্রুত এলাকায় ভোটারদের উদ্দেশে মাওবাদীদের নির্দেশ ‘বুথে যাও। নোটা বোতাম টিপে ভোট দিয়ে এস। কথার যেন অন্যথা না হয়।’ যদিও বিষয়টি নিয়ে আদৌ উদ্বিগ্ন নয় নির্বাচন কমিশন। তাঁরা চান ভোটাররা অন্তত বুথে আসুন, নিজেদের অধিকার প্রয়োগ করুন। ভোটারদের স্বাগত জানাতে তাই বুথে বুথে লাল কার্পেট, গোলাপ নিয়ে প্রস্তুত কমিশন।

ঝাড়খণ্ডের অতিরিক্ত মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক কে কে শোন জানান, মাওবাদী উপদ্রুত ওই চারটি কেন্দ্রের অধীনে ২১৩টি আদর্শ বুথ তৈরি করা হচ্ছে। এক এক জায়গায় এক এক রকমের ব্যবস্থা। কোথাও ভোটারদের লাল কার্পেট বিছিয়ে স্বাগত জানানো হবে। কোথাও বরযাত্রী বরণের মতোই ভোটারদের হাতে হাতে গোলাপ ফুল ধরানো হবে। কোথাও আবার চা-জল খাওয়ানোর ব্যবস্থাও করেছে কমিশন। বিহারের বিভিন্ন এলাকাতেও একই রকম ব্যবস্থা। শোনের বক্তব্য, “আমাদের লক্ষ্য, ভোটাররা যেন কারও কথায় প্ররোচিত হয়ে ভোটদানে বিরত না হন।” কিন্তু নোটা-ভোটের জন্য মাওবাদীদের হুমকি? কমিশনের এক পদস্থ কর্তার কথায়, সেটাও ভোটারের অধিকারের মধ্যেই পড়ে। কোনও ভোটারের যদি সংশ্লিষ্ট প্রার্থীদের পছন্দ না হয়, তবে তাঁর জন্য নোটা (নান অফ দ্য অ্যাবাব) বোতামের ব্যবস্থা করা হয়েছে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মেনেই। পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দেওয়ার অধিকার যেমন ভোটারদের রয়েছে, তেমনই অপছন্দ হলে তা ব্যক্ত করার অধিকারও সংবিধানই দিয়েছে। কমিশন চায়, ভোটাররা বুথ পর্যন্ত আসুন। তার পরে যেখানে মন চায় ভোট দিন।

Advertisement

আগামী বৃহস্পতিবার, ১০ এপ্রিল তৃতীয় পর্বে দেশের ৯১টি লোকসভা আসনের সঙ্গে ভোট হচ্ছে বিহার-ঝাড়খণ্ডের ১০টি মাওবাদী উপদ্রুত আসনেও। ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থার পাশাপাশি আকাশপথেও নজরদারির ব্যবস্থা করা হয়েছে ঝাড়খণ্ডের পলামু, চাতরা, লোহারডাগা ও কোডারমা এবং বিহারের গয়া, ঔরঙ্গাবাদ, জামুই, নওয়াদা, কারাকাট ও সাসারামে। শুধু ঝাড়খণ্ডের চারটি আসনের জন্য রাজ্য পুলিশ ও কেন্দ্রীয় বাহিনী মিলে ৪০০ কোম্পানি মোতায়েন করা হয়েছে। বিহারে মোতায়েন করা হয়েছে ২৩৭ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী। এ ছাড়াও রয়েছে রয়েছে বিহার মিলিটারি পুলিশ, রাজ্য সশস্ত্র পুলিশ। বিহারে প্রায় ৮৩ লক্ষ ভোটার তাঁদের অধিকার প্রয়োগ করবেন। ঝাড়খণ্ডে এই সংখ্যা প্রায় ৫৬ লক্ষ। ঝাড়খণ্ড পুলিশের ডিজি রাজীব কুমার জানান, প্রতিটি বুথে আধাসামরিক বাহিনী থাকবে। তিনি বলেন, “নিরাপত্তায় কোনও ফাঁক রাখা হচ্ছে না। যে কোনও ধরনের ঘটনার সঙ্গে মোকাবিলায় জওয়ানদের জন্য হেলিকপ্টারও তৈরি রাখা হচ্ছে।” নির্বাচনের মুখে গত কালই মাওবাদীদের মাইন বিস্ফোরণে তিন জওয়ানের মৃত্যু হয়েছে। আজও একই রকম হামলার পরিকল্পনায় পলামুর ডেমা আর ওঁরাওয়ায় রাস্তার উপরেই মাইন পেতে রেখেছিল জঙ্গিরা। কিন্তু পুলিশি তৎপরতায় সেগুলি নিষ্ক্রিয় করা সম্ভব হয়েছে।

এ দিকে আজই মাওবাদী প্রভাবিত বিহারের ছয় কেন্দ্রে এক ঘণ্টা আগে ভোট শেষ করার জন্য রাজ্য প্রশাসনের তরফে নির্বাচন কমিশনের কাছে অনুরোধ জানানো হয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী সকাল সাতটা থেকে বিকেল চারটে পর্যন্ত ভোট চলার কথা। রাজ্য প্রশাসন চাইছে তিনটে পর্যন্ত ভোট নেওয়া হোক। কারণ ভোট-পরবর্তী কাজ শেষ করতে সময় লাগবে। সন্ধ্যার আগে যাতে ভোট কর্মীরা নিরাপদে ফিরে যেতে পারেন, সে দিকে তাকিয়েই এক ঘণ্টা আগে ভোট প্রক্রিয়া শেষ করার জন্য রাজ্যের মুখ্যসচিব অশোক কুমার সিন্হা কমিশনের কাছে অনুরোধ জানিয়েছেন। তবে কমিশন এখনও এ ব্যাপারে কোনও সিদ্ধান্ত নেয়নি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন