ভোটব্যাঙ্ক হারিয়ে ভোটের দিনেও ছন্নছাড়া কংগ্রেস

দৃশ্য এক। সকাল ১০টা। পূর্ব দিল্লির কোন্ডলি বাজার সংলগ্ন বুথ। আশপাশে একশ মিটারের মধ্যে কংগ্রেসের কোনও বুথ অফিস নেই! পাশাপাশি দুই শিবিরে শুধু বিজেপি আর আপ-এর কর্মীরা! এমন অন্তত একশ বুথে দলের কোনও বুথ অফিস নেই বলে খবর এলো খোদ এআইসিসি কন্ট্রোল রুমে। দৃশ্য দুই। বেলা ১১টা। ইন্ডিয়া গেটের কাছে নির্মাণ ভবনের বুথে ভোট দিতে এলেন কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গাঁধী।

Advertisement

শঙ্খদীপ দাস

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০৩:০০
Share:

বুথের পথে প্রিয়ঙ্কা। সঙ্গে রবার্ট বঢরা। শনিবার নয়াদিল্লিতে। ছবি: পিটিআই

দৃশ্য এক। সকাল ১০টা। পূর্ব দিল্লির কোন্ডলি বাজার সংলগ্ন বুথ। আশপাশে একশ মিটারের মধ্যে কংগ্রেসের কোনও বুথ অফিস নেই! পাশাপাশি দুই শিবিরে শুধু বিজেপি আর আপ-এর কর্মীরা! এমন অন্তত একশ বুথে দলের কোনও বুথ অফিস নেই বলে খবর এলো খোদ এআইসিসি কন্ট্রোল রুমে।

Advertisement

দৃশ্য দুই। বেলা ১১টা। ইন্ডিয়া গেটের কাছে নির্মাণ ভবনের বুথে ভোট দিতে এলেন কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গাঁধী। তাঁর সঙ্গে দিল্লির প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অরবিন্দ সিংহ লাভলি। দিল্লির গাঁধীনগর কেন্দ্র থেকে বিধায়ক ছিলেন তিনি। অথচ লাভলির ভোটই নেই ওই বুথে!

এর পরেও ভালো ফলের আশা করতে পারে কংগ্রেস?

Advertisement

ভরাডুবি সত্ত্বেও গত বিধানসভা নির্বাচনে ২৫ শতাংশ ভোট পেয়েছিল কংগ্রেস। আজ তামাম বুথ ফেরত সমীক্ষা জানিয়ে দিচ্ছে সেই ধস অব্যাহত। অনুমান, ৬ থেকে ১১ শতাংশ পর্যন্ত ভোট কমতে পারে কংগ্রেসের। কংগ্রেসের ওপর আস্থা হারিয়ে নিঃসন্দেহে সেই ভোটের বড় অংশ যাচ্ছে আম আদমি পার্টি (আপ)-র দিকে। গত ভোটে দিল্লিতে ৮টি আসন পেয়েছিল কংগ্রেস। বুথ ফেরত সমীক্ষাগুলির মতে এ বার কংগ্রেস সর্বোচ্চ আসন পেতে পারে পাঁচটি। এই আশঙ্কাও রয়েছে এ যাত্রায় হয়তো খাতাই খুলতে পারল না কংগ্রেস!

আশ্চর্য হচ্ছেন সনিয়া গাঁধী? নাকি তিনি জানতেন! তাই আজ সকালে ভোট দিয়ে বলেন, “মানুষ যাঁদের ভোট দেবেন, তাঁরাই জিতবেন!” কংগ্রেস জিতবে, এমন কোনও সুদূর আশাবাদও তাঁর কথায় খুঁজে পাননি দলের কর্মীরা।

বস্তুত দিল্লিতে গত বিধানসভা ভোটেই দেখা গেছিল, কংগ্রেসে ক্ষত তৈরি করে ভোট বাড়ছে আপ-এর। সমাজের নিচু তলার যে ভোট কংগ্রেসের সম্পদ ছিল, তা এখন আপ-মুখী। দলে আগাম আশঙ্কা ছিল, সেই ক্ষত এ বার গভীরতর হতে পারে। সংখ্যালঘু ভোটের বড় অংশও কংগ্রেসে আস্থা হারিয়ে চলে যেতে পারে আপ-এর দিকে। তাই শেষ বেলায় মাঠে নেমেছিলেন রাহুল গাঁধী। বেছে বেছে গরিব ও সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এলাকায় ঘুরেছেন। গরিব ও সংখ্যালঘুদের ক্ষমতায়ন ও আর্থিক সুরাহার কথা বলেছেন। কিন্তু বুথ ফেরত সমীক্ষা প্রকাশের আগে থেকেই কংগ্রেস নেতারা বলছেন, রাহুলের সেই সব কথা প্রতীকি হয়েই থেকে গিয়েছে। আদতে দলের চিরাচরিত ওই ভোট ব্যাঙ্ক থেকে বিচ্ছিন্নই হয়ে পড়েছেন কংগ্রেসের নেতারা।

কোন্ডলি তথা পূর্ব দিল্লিতে দশ বছর সাংসদ ছিলেন কংগ্রেসের সন্দীপ দীক্ষিত। তাঁর মা শীলা দীক্ষিত ১৫ বছর একটানা মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন। এ বার ভোট-প্রচার দূরের কথা লোকসভা ভোটের পর থেকে পূর্ব দিল্লিতে সন্দীপের মুখই দেখা যায়নি। কোন্ডলির অদূরে ত্রিলোকপুরীতে যখন গোষ্ঠী সংঘর্ষে সংখ্যালঘুরা আক্রান্ত হয়েছেন, তখন এক বার সেখানে গিয়েও দাঁড়াননি সনিয়া বা রাহুল। সংখ্যালঘু এলাকা চাঁদনি চকে কংগ্রেস সাংসদ ছিলেন প্রাক্তন কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী কপিল সিব্বল। হারার পর ও মুখো হননি তিনি। বিধানসভা ভোটে তাঁর কাছ কোনও সাহায্য পাননি চাঁদনি চকের কংগ্রেস কর্মীরা। তিনি খবরে থেকেছেন তৃণমূল কংগ্রেসের হয়ে মামলা লড়ে। শেষ মুহূর্তে অজয় মাকেনকে মুখ্যমন্ত্রী প্রার্থী করে কংগ্রেস ভোটে লড়লেও তা যেন জোর করে তেতো গেলানো। কারণ, বিধানসভা ভোটে প্রার্থী হবেন না ঘোষণা করে আগের তিন মাস পালিয়ে বেড়িয়েছেন। অনেকের মতে, কিরণ বেদী ও কেজরীবালের তুলনায় প্রশাসনিক অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা দু’টিই বেশি মাকেনের। ভাবমূর্তিও স্বচ্ছ। দুর্দিনে তাঁর থেকে ভালো মুখ কংগ্রেসে ছিল না। শুধু সময় থাকতে ঝুঁকি নিতে ভয় পেলেন মাকেন। শেষ মুহূর্তে তাঁকে যখন মুখ্যমন্ত্রী প্রার্থী করা হল, তখন আবার গোঁসাঘরে খিল দিলেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অরবিন্দ সিংহ লাভলি। কার্যত নিধিরাম সর্দার হয়ে লড়লেন মাকেন।

তবে প্রশ্ন উঠছে, এর পরেও রাহুলের সভা ও রোড-শোগুলিতে কেন ভিড় হল? টিম রাহুলের এক তরুণ সদস্যের মতে, কংগ্রেসের প্রতি মানুষের সহানুভূতি নেই তা নয়। কিন্তু গত আট মাস ধরে কংগ্রেসকে মাঠে না-দেখে দলের ঘোর সমর্থকরাও বুঝে গেছেন, আর যাই হোক বিজেপিকে হারানোর ক্ষমতা এঁদের নেই। পারলে সেটা আপ-ই পারে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন