অপারেশন পশ্চিমবঙ্গ

মোদী, অমিতের নতুন কৌশলেই মন্ত্রী হচ্ছেন বাবুল

বাঙালি গায়ক, আসানসোলের সাংসদ বাবুল সুপ্রিয় হলেন পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির তুরুপের তাস। নরেন্দ্র মোদী এবং অমিত শাহ ২০১৬-এর বিধানসভা নির্বাচনকে লক্ষ্য রেখে ‘অপারেশন পশ্চিমবঙ্গ’ হাতে নিয়েছেন। বাবুলকে মন্ত্রী করা আপাতত সেই পরিকল্পনারই সবচেয়ে বড় অঙ্গ। বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ আজ মন্ত্রিসভা নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি। কিন্তু তিনি বলেছেন, “কে মন্ত্রী হবেন আর কে হবেন না, সেটা প্রধানমন্ত্রীর বিচার্য বিষয়।

Advertisement

জয়ন্ত ঘোষাল

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৯ নভেম্বর ২০১৪ ০৩:০৫
Share:

বাঙালি গায়ক, আসানসোলের সাংসদ বাবুল সুপ্রিয় হলেন পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির তুরুপের তাস।

Advertisement

নরেন্দ্র মোদী এবং অমিত শাহ ২০১৬-এর বিধানসভা নির্বাচনকে লক্ষ্য রেখে ‘অপারেশন পশ্চিমবঙ্গ’ হাতে নিয়েছেন। বাবুলকে মন্ত্রী করা আপাতত সেই পরিকল্পনারই সবচেয়ে বড় অঙ্গ। বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ আজ মন্ত্রিসভা নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি। কিন্তু তিনি বলেছেন, “কে মন্ত্রী হবেন আর কে হবেন না, সেটা প্রধানমন্ত্রীর বিচার্য বিষয়। দলের সভাপতি হিসেবে বলতে পারি পশ্চিমবঙ্গে কী করলে বিজেপির বৃদ্ধি হয়, তৃণমূলকে ক্ষমতাচু্যুত করা যায়, সেটা নিশ্চিত করা আমার কর্তব্য। এ কাজ থেকে কোনও ভাবেই আমি সরে আসতে পারি না।”

বিজেপি সূত্র বলছে, বাবুলকে মন্ত্রী করা হলেও তাঁকে নিয়ে আপাতত অন্য কিছু ভাবা হচ্ছে না। রাজ্য সভাপতির পদ থেকে রাহুল সিংহকে সরানো হচ্ছে না। রাহুল সিংহের নেতৃত্বে পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি নির্বাচনে যাবে। বাবুলকে পশ্চিমবঙ্গের সংগঠন ও দিল্লির বিজেপি সরকারের যোগসূত্র হিসাবে ব্যবহার করা হবে। এর ফলে কলকাতার পুর নির্বাচনী প্রচারেও তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে পারবেন। পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির সাধারণ সম্পাদক অমল চট্টোপাধ্যায় ও রাহুল সিংহের সঙ্গে বাবুলের যোগাযোগ রেখে প্রচারের কৌশল, ভোটে লড়ার রণনীতি ঠিক করা হবে। বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব মনে করছেন, পশ্চিমবঙ্গে ভোটের আগে খুব বেশি অভিনেতা, খেলোয়াড় নিয়ে এসে দলের গ্ল্যামার বাড়ানোর চেষ্টা না করে রাজনৈতিক আক্রমণ করাটা অনেক বেশি জরুরি। এক দিকে সারদা কেলেঙ্কারি অন্য দিকে পশ্চিমবঙ্গের তালিবানিকরণ-- দু’টি বিষয়কে প্রচারের মূল হাতিয়ার করা হবে।

Advertisement

অটলবিহারী বাজপেয়ী বহু বছর আগে কলকাতায় দলের কর্মসমিতির বৈঠকে যোগ দিতে যাওয়ার পথে কালকা মেলে বসে এই প্রতিবেদককে বলেছিলেন, “যে দলটির প্রতিষ্ঠার সময় থেকেই মূল অনুপ্রেরণা শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়, সেই দলের বৃদ্ধি পশ্চিমবঙ্গে কেন হল না, তা আমাদের কাছে গবেষণার বিষয়। বাঙালি বামপন্থী র্যাডিকালিজমে আচ্ছন্ন। সে জন্যই কি বিজেপির সাংস্কৃতিক জাতীয়তাবাদ তাদের না পসন্দ!” সে বার বাজপেয়ী-আডবাণী কলকাতার একটি সিনেমা হলে গিয়ে ‘পথের পাঁচালি’ দেখেছিলেন। তাঁদের ইচ্ছে ছিল সংস্কৃতিমনস্ক বাঙালি সমাজের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনের। এর পর লালকৃষ্ণ আডবাণী রামমন্দিরের বদলে অনুপ্রবেশ ও বাঙালির জাতীয়তাবাদী আবেগকে মূলধন করে এগোতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সে কাজে তিনি সফল হননি। রাজ্য স্তরে নেতৃত্বের সংকটের কথা বরাবরই স্বীকার করেছেন আডবাণীরা। পরে সেই কারণেই বিজেপি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত ধরে পশ্চিমবঙ্গে নিজেদের প্রভাব বাড়ানোর চেষ্টা করে। এ বারও লোকসভা নির্বাচনের আগে আডবাণী নিজের ব্লগে মমতার প্রশংসা করে এনডিএ-র সম্প্রসারণের কথা বলেছিলেন।

মোদী-অমিত শাহ কিন্তু রাজনীতির সেই কর্ড লাইন পরিত্যাগ করে সরাসরি বিজেপির মেন লাইনে চলতে চাইছেন। মহারাষ্ট্রে শিবসেনার সঙ্গ ত্যাগ করে একার জোরে লড়ে ফল পেয়েছে দল। বিজেপি শিবসেনার থেকে বড় দলে পরিণত হয়েছে। তারা ২৮০ আসনের সীমারেখা অতিক্রম করেছে। এবার তাই কর্নাটক, জম্মু-কাশ্মীর এমনকী বিহারেও ‘একলা চলো’ নীতি প্রয়োগ করতে মরিয়া বিজেপি। কেননা, অমিত শাহ মনে করেন না যে পশ্চিমবঙ্গে মমতা বিরোধী দলগুলি আলাদা লড়লেও তৃণমূলের সুবিধা হবে। বিজেপি একক ভাবে লড়লে লোকসভার ১৭ শতাংশ থেকে বিধানসভায় প্রায় ৩৫ শতাংশ ভোট পাওয়া যে কার্যত অসম্ভব-- এমন যুক্তি উড়িয়ে দিয়ে শাহ বলেন, “শীততাপনিয়ন্ত্রিত স্টুডিওতে বসে এ সব অঙ্ক নির্বাচনী গবেষকরা করুক। তাঁরা লোকসভা ভোটের সময়ও এই কাজ করেছিলেন। আমরা গণসমর্থনের ভিত্তিতে পশ্চিমবঙ্গে আবার এক পরিবর্তন আনব।”

আর সেই কাজের রূপায়ণে বিজেপির নতুন ঘোড়া বাবুল সুপ্রিয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন