সংসদের অধিবেশনের আগেই মন্ত্রিসভার একটি রদবদলের ব্যাপারে শীর্ষস্তরে আলোচনা শুরু করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এ ব্যাপারে বিভিন্ন মহল থেকে মতামত নিচ্ছেন তিনি।
অনেক দিন ধরে এমনিতেই মন্ত্রিসভার একটি ছোটখাটো রদবদলের পরিস্থিতি তৈরি হয়ে রয়েছে। কিন্তু এখন ললিত-বিতর্কে যে ভাবে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সুষমা স্বরাজের বিরুদ্ধে অভিযোগ আছড়ে পড়েছে, তার উপর কংগ্রেস সংসদ একেবারে স্তব্ধ করে দেওয়ার হুমকি দিয়ে বসে রয়েছে। মানবসম্পদ উন্নয়নমন্ত্রী স্মৃতি ইরানির বিরুদ্ধেও নিরন্তর অভিযোগ আসছে। পাশাপাশি, সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রী নাজমা হেপতুল্লা ৭৫ বছর পার করেছেন। ফলে তাঁকে মন্ত্রিসভা থেকে সরিয়ে রাজ্যপাল করার প্রস্তাবও রয়েছে। আগামী বছর কেন্দ্রের ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পমন্ত্রী কলরাজ মিশ্রও পার করবেন ৭৫-এর কোঠা। শরিক শিবসেনা থেকে এক জনকে মন্ত্রী করার দাবিও পুরনো। নতুন শরিক পিডিপি থেকেও কাউকে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় নিয়ে আসার চাপ রয়েছে। সামনের বিহার নির্বাচনের কথা মাথায় রেখে সে রাজ্যের প্রতিনিধিত্ব বাড়ানোর ভাবনাও রয়েছে বিজেপি-তে।
এই অবস্থায় মন্ত্রিসভায় একটি রদবদল এমনিতেই অবশ্যম্ভাবী হয়ে উঠেছে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীকে ভাবতে হচ্ছে, রদবদল করলে ছোটখাটো করা হবে না কি বিগ ফোর-এও হাত দেওয়া হবে? দলের অনেকে বলছেন, ললিত-কাণ্ডে যেহেতু সুষমা বা বসুন্ধরাকে না সরানোর সিদ্ধান্ত আপাতত নেওয়া হয়েছে, সে ক্ষেত্রে সুষমার মন্ত্রক বদল করলে বিরোধীদের নিরস্ত্র করা যাবে। সংসদও মসৃণ ভাবে চলতে পারবে। কিন্তু বিজেপি-রই অনেকের আশঙ্কা রয়েছে, শুধু মন্ত্রক বদল করলেই কি বিরোধীরা শান্ত হয়ে সব বিল পাশ করতে দেবে? তারা তখনও ইস্তফার দাবিতে সরব হবে। আবার বিলগুলি পাশ না হলে, নিদেনপক্ষে ভোটাভুটিতে রাজ্যসভায় তা পরাস্ত না হলে সংসদের যৌথ অধিবেশন ডেকেও পাশ করানো সম্ভব নয়।
শুধু তাই নয়, এক বার যদি সুষমাকে বিদেশ থেকে সরিয়ে মানবসম্পদ বা অন্য কোনও মন্ত্রকে দেওয়া হয়, তা হলে দলের অরুণ জেটলি বিরোধীরাও ছেড়ে কথা বলবেন না। তাঁরা চাইবেন, সরাতে হলে দু’জনকেই সরানো হোক। কারণ, ললিত মোদী থেকে বিজেপি সাংসদ কীর্তি আজাদ— তাঁরা সকলে জেটলির বিরুদ্ধেও প্রকাশ্যে সরব হয়েছেন। অর্থমন্ত্রক থেকে জেটলিকে সরানোর দাবিও দলের মধ্যে প্রবল হবে। ফলে স্মৃতি ইরানিকে মানবসম্পদ থেকে সরিয়ে যদি সংস্কৃতির মতো দফতরে কিংবা দলের কাজেই ব্যবহার করা হয়, বিগ ফোর-এ হাত দিলে দলের কোন্দল বাড়বে বই কমবে না। সব মিলিয়ে প্রধানমন্ত্রী এখন শীর্ষস্তরে আলোচনা করে বোঝার চেষ্টা করছেন, রদবদল করা হলে সেটি কি মোটামুটি বড় আকারে হবে, না কি ছোটখাটো রদবদল করেই ক্ষান্ত হবেন। আলোচনা করছেন, মন্ত্রক বদল করেই কি সংসদ মসৃণ হবে? সরকারি এক সূত্রের মতে, এ মাসের ৬ তারিখে রাশিয়া সফরে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী। সেখান থেকে ফিরেই এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন তিনি।
তবে নাজমাকে সংখ্যালঘু মন্ত্রক থেকে সরিয়ে তেলঙ্গানার রাজ্যপাল করা হলে সেই মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী মোখতার আব্বাস নকভির পদোন্নতি হওয়া পাকা। হয় তাঁকে সেই মন্ত্রকের পূর্ণমন্ত্রী করা হতে পারে, অথবা স্বাধীন দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে। পদোন্নতির আশায় রয়েছেন রাজীবপ্রতাপ রুডি, মনোজ সিনহার মতো নেতারাও। এম জে আকবরকে সম্প্রতি রাজ্যসভায় জিতিয়ে আনা হয়েছে। তাঁকে বিদেশ বা সংখ্যালঘু মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী করা নিয়েও জোর আলোচনা চলছে রাজধানীর অলিন্দে। বিজেপি-র শীর্ষ সূত্রের মতে, আকবরকে মন্ত্রিসভায় নিয়ে আসার ব্যাপারে অনেক আগেই আশ্বাস দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। সে কারণেই তাঁকে বাংলাদেশ সফরের সময়েও যথেষ্ঠ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর সফরের আগেই তিনি বাংলাদেশ পৌঁছে দৌত্যের কাজটি করেন। শিবসেনার অনিল দেশাইকে আগেই মন্ত্রী করার কথা ঘোষণা হয়েছিল। কিন্তু সেই সময় উদ্ধব ঠাকরের সঙ্গে বিজেপি নেতৃত্বের বিবাদের কারণে দিল্লি বিমানবন্দরে এসেও ফিরে যান অনিল। কিন্তু উদ্ধব চান দেশাইকে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী করতে। প্রতিমন্ত্রীতে তিনি সন্তুষ্ট নন। সে ক্ষেত্রে শিবসেনা এবং পিডিপি-কে মন্ত্রিসভায় আনতে হলে বর্তমান নেতাদের কারও উপরেও কোপ যে পড়বে, সেটি নিশ্চিত।