কুয়োয় পড়ে গিয়ে যারপরনাই ভয় পেয়ে গিয়েছিল বছর তিনেকের এক খুদে। হঠাৎই নেমে এল ‘আশার হাত’। না মানুষের নয়, হাতটি ছিল এক যন্ত্রমানব বা রোবটের। শেষমেশ সেই রোবটের হাত ধরেই কুয়ো থেকে উঠেছে দক্ষিণ তামিলনাড়ুর ওই বাসিন্দা। এ ভাবে তাঁদের সন্তানের প্রাণ বাঁচানোর জন্য শিশুটির মা-বাবা অবশ্য ধন্যবাদ জানাচ্ছেন এম মনিগন্ডনকে। তাঁর তৈরি যন্ত্রমানবই তো বুধবার প্রাণ বাঁচিয়েছে খুদের।
কে এই মনিগন্ডন? না নামীদামি কোনও ইঞ্জিনিয়ার নন। পেশায় শিক্ষক তামিলনাড়ুর তিরুনেলভেলি গ্রামের বাসিন্দা মানুষটি আসলে আইটিআই-এর প্রাক্তন ছাত্র। গ্রামের মানুষদের বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ দেন। কয়েক বছরের অক্লান্ত পরিশ্রমের পর তিনি আর তাঁর দল মিলে তৈরি করেছেন ওই ‘বোরওয়েল রোবট’টি। হঠাৎ এ রকম একটি যন্ত্র তৈরির চেষ্টা কেন? আসলে ২০০৩ সাল নাগাদ মনিগন্ডনের আপন সন্তানই কুয়োয় পড়ে গিয়েছিল। সেই স্মৃতি আজও তাড়া করে বেড়ায় তাঁকে। বোরওয়েল রোবট তৈরির তাগিদ এসেছিল সেখান থেকেই। মনিগন্ডনের নিজের বয়ানে, “প্রত্যেক দিন সকালে উঠে প্রার্থনা করি কোথাওই যেন ওই যন্ত্র ব্যবহার করার মতো পরিস্থিতি যেন তৈরি না হয়।” কিন্তু বুধবার ওই যন্ত্র ব্যবহার না করে আর কোনও উপায় ছিল না। তথ্য বলছে, সে দিনই প্রথম কুয়ো থেকে কোনও শিশুকে অক্ষত উদ্ধার করতে সফল হল যন্ত্রটি।
ঠিক কী রকম দেখতে রোবটটি? মনিগন্ডন জানালেন, লোহার তৈরি ওই যন্ত্রমানবের উচ্চতা মাত্র ২ ফুট। ওজন পাঁচ কিলোগ্রাম। তবে এটি প্রায় ৫০ কিলোগ্রাম ওজন তুলতে সক্ষম। এর মাথায় একটি ‘হুক’ লাগানো রয়েছে। সেখানেই দড়ি ঢুকিয়ে কুয়োর মধ্যে নামানো হয় রোবটটিকে। যন্ত্রে রয়েছে উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন ক্যামেরাও। কুয়োর গাঢ় অন্ধকারের মধ্যেও যাতে ছবি তোলা যেতে পারে সেই ভেবেই এই ব্যবস্থা। কিন্তু শিশুটিকে কী ভাবে উদ্ধার করল এই যন্ত্রমানব?
মনিগন্ডন জানালেন রোবটটির দু’টি হাত রয়েছে। সেগুলিই গিয়ে শিশুটির হাত দু’টি চেপে ধরে। আর তার পর উপরে তোলে। কিন্তু যান্ত্রিক হাত যদি শিশুর নরম পেশির উপর বেশি জোর দিয়ে ফেলে? সে ক্ষেত্রে তো ক্ষতির সমূহ সম্ভাবনা। মনিগন্ডন জানালেন তার জন্যও ব্যবস্থা রয়েছে। শিশুটি কতটা চাপ নিতে পারছে তা পর্যবেক্ষণ করার জন্য যন্ত্রের মধ্যে বিশেষ ধরনের ‘সেন্সর’ রয়েছে। প্রয়োজন মতো তারাই চাপ কমায়-বাড়ায়। অর্থাৎ কুয়ো থেকে শিশুদের উদ্ধার করতে এই যন্ত্রমানবের যে জুড়ি মেলা ভার, সে কথা পরিষ্কার।
আর তা ভেবেই মনিগন্ডন চান সরকার যন্ত্রটি বানাতে উদ্যোগী হোক। যন্ত্রটি বানাতে খরচ হয় ৬০ হাজার টাকা। সে দিক থেকেও এটি সাশ্রয়ী। প্রয়োজন স্রেফ সরকারি উদ্যোগের। কারণ মনিগন্ডন চান না কোনও শিশুরই গুড়গাঁওয়ের খুদে বাসিন্দা মাহির মতো পরিণতি হোক। ২০১২-র জুনে গুড়গাঁও-র মানেসর এলাকার একটি ৭০ ফুট গভীর কুয়োয় পড়ে গিয়েছিল বছর পাঁচেকের মাহি। দীর্ঘ চেষ্টার পরও তাকে প্রাণে বাঁচানো যায়নি। ২০০৬ সালে একই রকম পরিস্থিতিতে পড়েছিল হরিয়ানার ‘প্রিন্স’। ভাগ্যক্রমে সে অবশ্য প্রাণে বেঁচে যায়।
মনিগন্ডন জানেন, এমন ভাগ্য সকলের না-ও হতে পারে। আর তাই তাঁর ‘উপহার’ বোরওয়েল রোবট। কুয়োর আঁধারে এখন তার হাতই ভরসা যোগাবে বিপাকে পড়া শিশুদের।