ইন্দিরা গাঁধীর রেকর্ড এ বার ভাঙতে চলেছে।
১৯৮৪ সালে ইন্দিরার চিতার আগুন দেশ জুড়ে যে আবেগ উস্কে দিয়েছিল, তার ঢেউ আছড়ে পড়েছিল ভোট বাক্সে। স্বাধীন ভারতের ইতিহাসে সর্বাধিক ভোটদানের (৬৪.০১ শতাংশ) হার ছিল সে বছরই। কিন্তু চলতি লোকসভা নির্বাচনের সাতটি রাউন্ডের পরই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে, পুরনো রেকর্ড চুরমার করে এ বারই ভোটদানের হার সর্বোচ্চ স্থান ছুঁতে চলেছে।
মোট ৫৪৩টি লোকসভা আসনের মধ্যে ৪৩৮টি আসনে ভোটদান শেষ। এখনই ভোটদানের হার ছুঁয়েছে ৬৬.৯ শতাংশ। অনুমান করা হচ্ছে আগামীকাল এবং ১২ তারিখ, বাকি দুই পর্বে ১০৫টি আসনে ভোট শেষ হওয়ার পর এই হার আরও বাড়বে। গত লোকসভা নির্বাচন তথা ২০০৯-এর তুলনায় এ বারের ভোটদানের হার বেড়েছে ৯.২১ শতাংশ।
উপনির্বাচন কমিশনার বিনোদ জুৎসি বলেছেন, “যে ভাবে মানুষ বেরিয়ে এসে ভোট দিচ্ছেন, তা এক কথায় অভূতপূর্ব।” দেখা যাচ্ছে উত্তরপ্রদেশে যে ক’টি আসনে ভোট হয়েছে সেখানে ভোটদানের হার গড়ে ১৫ শতাংশ বেড়েছে। বেঙ্গালুরু, মুম্বই, দিল্লির মতো ব্যস্ত শহরেও বেড়েছে ভোটদানের হার। কমিশনের বক্তব্য, গত কয়েক বছর ধরে মানুষের কাছে পৌঁছনোর যে চেষ্টা লাগাতার করে গিয়েছেন কর্মী-অফিসারেরা, এ বার তার ফল ফলেছে। ভোটদান নিয়ে সাধারণ মানুষের উদ্দীপনা এবং সচেতনতা বাড়ানোর জন্য গণমাধ্যমকে ব্যবহার করার যে কৌশল নেওয়া হয়েছে, সেটিও সফল বলেই দাবি করছে কমিশন। বিজেপি নেতৃত্বের বক্তব্য, এ বার তরুণ প্রজন্মের (১৮ থেকে ২৫ বছর বয়স্ক) ভোটারের সংখ্যা প্রায় ১২ কোটি। তাঁরা যাতে ভোটদানে উৎসাহী হন, সে জন্য তাঁদের দলের পক্ষ থেকেও বিভিন্ন রকম কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। দলের শীর্ষ নেতৃত্বের দাবি, মহিলাদের ভোট সচেতনতা বাড়াতেও গত কয়েক বছর ধরে সক্রিয় থেকেছেন নেতা-কর্মীরা।
সামাজিক গণমাধ্যম, বিভিন্ন পণ্য উৎপাদক ব্র্যান্ডও যে ভাবে এ বার নির্বাচনকে প্যাকেজ করেছে, সমাজবিজ্ঞানীরা মনে করছেন তাতেও কিছুটা কাজ হয়েছে। তাঁদের মতে, গ্রামের মধ্যবিত্ত এবং নিম্নমধ্যবিত্ত মানুষ চিরকালই ভোট দিতেন। সমস্যা ছিল শহরের বহুতলের বাসিন্দাদের নিয়ে। তাঁদের আম আদমির সঙ্গে বুথে লাইন দিতে অনীহা ছিল। আশিস নন্দীর মতে, রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে এমন মানুষ এখন খুব কমই রয়েছেন যাঁদের দেখে মানুষ বহুতল থেকে নেমে আসবেন। অথবা পিকনিক বাতিল করবেন। কিন্তু এ বার কমিশন যেভাবে তারকাদের ভোটের অ্যাম্বাসাডার হিসেবে ব্যবহার করছে, সেটা প্রভাব ফেলছে নাগরিক মননে। ফিল্ম, ক্রীড়া, শিল্প সমস্ত ক্ষেত্রের তারকারা ভোট দিয়ে এসে সংবাদমাধ্যমের সামনে বুক ফুলিয়ে দাঁড়াচ্ছেন। ভোটদানের প্রয়োজন ব্যাখ্যা করছেন। সব মিলিয়ে ভোটদানকে একটি ‘সামাজিক ফেনোমেনন’-এ পরিণত করা হয়েছে, যার থেকে বিচ্ছিন্ন থাকতে পারছেন না মানুষ।
রাজনৈতিক দলগুলির অবশ্য নিজস্ব ব্যাখ্যা রয়েছে। বিজেপি নেতা অরুণ জেটলি যেমন বললেন, “ভোটদানের হার বাড়ার কারণ একটাই। সেটা হল দেশজুড়ে মোদী-ঝড়। মোদীকে জেতাতে এ বার মানুষ রাস্তায় নেমেছেন।” কংগ্রেসের পক্ষ থেকে স্বাভাবিক ভাবেই মোদী প্রসঙ্গটি উড়িয়ে দিয়ে বলা হয়েছে, সময় বদলানোর সঙ্গেই মানুষের স্বাভাবিক সচেতনতা বাড়ছে। কংগ্রেস নেতা তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী কপিল সিব্বল বলেন, “উত্তরপ্রদেশের ভোটদানের হার ১৫ শতাংশ বেড়েছে বলে খুবই হইচই হচ্ছে। কিন্তু ২০১২ সালে বিধানসভাতেই ১৩ শতাংশ ভোট বেড়েছিল।” ভোট-বিশেষজ্ঞদের একাংশের মতেও, ভোটদানের হার বৃদ্ধি মানেই তা প্রতিষ্ঠানবিরোধী হবে এমন ভাবার কোনও কারণ নেই। সাম্প্রতিক উদাহরণে গুজরাত এবং মধ্যপ্রদেশের বিধানসভা নির্বাচন ব্যাখ্যা করে দেখা যাচ্ছে, এই দুই রাজ্যে বিজেপি ক্ষমতাসীন থাকা সত্ত্বেও তাদের পক্ষেই ভোট বেড়েছে।
রাহুল, বরুণ, রাবড়ীর ভাগ্য নির্ধারণ আজ
নিজস্ব প্রতিবেদন
অন্ধ্রপ্রদেশের সীমান্ধ্র এলাকা, উত্তরপ্রদেশ, বিহার, পশ্চিমবঙ্গের কিছু অংশ মিলিয়ে গোটা দেশে মোট ৬৪টি আসনে ভোট আগামিকাল। মোট ১,৭৩৭ জন প্রার্থীর ভাগ্য নির্ধারণ করবেন ভোটাররা। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন রাহুল গাঁধী, তাঁর তুতো ভাই বরুণ, রামবিলাস পাসোয়ান, লালুপ্রসাদের স্ত্রী রাবড়ী দেবী ও বিজেপি নেতা রাজীবপ্রতাপ রুডি। অমেঠীতে রাহুলের বিরুদ্ধে বিজেপি প্রার্থী অভিনেত্রী স্মৃতি ইরানি। প্রচারের শেষ বেলায় সেখানে সভা করেছেন বিজেপির প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী নরেন্দ্র মোদী। অমেঠীর লড়াইয়ের দিকে তাকিয়ে রয়েছে অনেক শিবিরই। পঞ্চম দফায় সাতটি লোকসভা কেন্দ্রে ভোটের জন্য প্রস্তুত বিহার। আগামী কালের নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে নিরাপত্তা ব্যবস্থা কঠোর করেছে প্রশাসন। এক দিকে নেপাল-বিহার সীমান্ত, অন্য দিকে কয়েকটি কেন্দ্রে মাওবাদী প্রভাবিত এলাকা থাকায় বাড়তি সতর্কতা নেওয়া হয়েছে। সিওহর, সীতামঢ়ী, মুজফ্ফরপুর, মহারাজগঞ্জ, সারন, হাজিপুর, উজিয়ারপুরে আগামী কাল ভোট গ্রহণ করা হবে। সীতামঢ়ী, মুজফ্ফরপুরের কয়েকটি এলাকা মাওবাদী প্রভাবিত। পুলিশ জানিয়েছে, আজ সকালে মুজফ্ফরপুরের হাতৌড়ি এলাকায় রেল লাইন থেকে ৪টি কৌটো বোমা উদ্ধার করা হয়। নির্বাচন কমিশন সূত্রের খবর, সাতটি আসনে ভোট করাতে ৬৬ হাজার জওয়ান মোতায়েন করা হয়েছে। তার মধ্যে ১৪৫ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী।