রাজ্যসভায় বেবিকে প্রার্থী করার ছকে উত্তপ্ত কেরল সিপিএম

একটা নির্বাচনের এখনও দু’বছর দেরি। আর একটা ভোট বছরখানেক দূরে। অদূর ভবিষ্যতের সেই জোড়া নির্বাচনের ঘুঁটি সাজাতে গিয়েই ফের উত্তপ্ত হচ্ছে কেরল সিপিএমের সমীকরণ! দলের শীর্ষ নেতৃত্বের সবুজ সঙ্কেত নিয়ে এ বারের লোকসভা ভোটে পলিটব্যুরো সদস্য এম এ বেবিকে প্রার্থী করেছিল কেরল সিপিএম। বাম জোট ভেঙে বেরিয়ে কংগ্রেস সমর্থন নিয়ে আরএসপি-র এন কে প্রেমচন্দ্রন শেষ পর্যন্ত কোল্লম লোকসভা আসনে হারিয়ে দিয়েছেন বেবিকে।

Advertisement

সন্দীপন চক্রবর্তী

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৭ জুলাই ২০১৪ ০২:০৯
Share:

একটা নির্বাচনের এখনও দু’বছর দেরি। আর একটা ভোট বছরখানেক দূরে। অদূর ভবিষ্যতের সেই জোড়া নির্বাচনের ঘুঁটি সাজাতে গিয়েই ফের উত্তপ্ত হচ্ছে কেরল সিপিএমের সমীকরণ!

Advertisement

দলের শীর্ষ নেতৃত্বের সবুজ সঙ্কেত নিয়ে এ বারের লোকসভা ভোটে পলিটব্যুরো সদস্য এম এ বেবিকে প্রার্থী করেছিল কেরল সিপিএম।

বাম জোট ভেঙে বেরিয়ে কংগ্রেস সমর্থন নিয়ে আরএসপি-র এন কে প্রেমচন্দ্রন শেষ পর্যন্ত কোল্লম লোকসভা আসনে হারিয়ে দিয়েছেন বেবিকে। সেই পরাজয় নিয়ে দলের অন্দরে এখনও জলঘোলা অব্যাহত। তারই মধ্যে কেরল সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক পিনারাই বিজয়ন এ বার প্রস্তাব দিয়েছেন, বেবিকে এর পরে রাজ্যসভায় বাম প্রার্থী করা হোক!

Advertisement

কেরলে রাজ্যসভায় আবার ভোট হবে আগামী বছর এবং তাদের বিধায়ক-সংখ্যার জোরে বাম জোট এলডিএফের প্রার্থীর জয় সেখানে নিশ্চিত। যাতে বাম শরিকদের সঙ্গে কথা বলে আগে থেকেই বেবির রাস্তা মসৃণ করা যায়, তার জন্য দলের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীতে এখনই প্রস্তাবটা পেড়ে রেখেছেন বিজয়ন।

এবং গোল বেধেছে সেখানেই! কারণ, বেবি নিজেই রাজ্যসভার সাংসদ হয়ে দিল্লি-যাত্রায় আগ্রহী নন! বিজয়নের পরিকল্পনা ঠেকাতে তিনি আবার দলের অন্দরে অন্তত তিনটি বিকল্প নাম ভাসিয়ে রেখেছেন। বিজয়নের মতোই বেবিরও এখন আসল লক্ষ্য ২০১৬ সালের বিধানসভা ভোট! যখন নবতিপর ভি এস অচ্যুতানন্দন আর মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী হয়ে ভোটে দাঁড়াবেন না। ভি এসের শূন্যস্থান দখল করার জন্যই দৌড় শুরু হয়ে গিয়েছে বিজয়ন-বেবিদের!

দীর্ঘ দিন লাভালিন কেলেঙ্কারির মামলায় জর্জরিত বিজয়ন লোকসভা ভোটের আগেই সিবিআইয়ের বিশেষ আদালতে ক্লিন চিট পেয়েছেন। কেরল সিপিএম সূত্রের খবর, দুর্নীতির কলঙ্ক মুছে গিয়েছে মনে করে তখন থেকেই মুখ্যমন্ত্রীর চেয়ার স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছেন বিজয়ন। আবার বিধায়ক তথা রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী বেবির মনোবাসনা, ভি এসের যে নিজস্ব সমর্থনের বৃত্ত আছে, প্রবীণ নেতার অবসরের পরে সেই বলয়ে ঢুকে পড়া। কিন্তু সাংসদ হয়ে দিল্লি চলে গেলে সেই স্বপ্ন অধরা থেকে যাবে। তাই তিরুঅনন্তপুরমেই ঘাঁটি আগলে পড়ে থাকতে চান রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী। তাতে আবার প্রমাদ গুনছেন বিজয়ন!

সিপিএম সূত্রের খবর, রাজ্য সম্পাদকের প্রস্তাবের বিকল্প হিসাবে বেবি বলেছেন, রাজ্যসভায় যোগ্য প্রার্থী হিসাবে যেতে পারেন রাজ্যের প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী টমাস আইজ্যাক। তিনি না হলে মহিলা মুখ শৈলজা মাস্টার। এঁদের দু’জনের কেউ একান্তই পছন্দ না হলে পি শাইনাবা। মলপ্পুরমের মতো সংখ্যালঘু কেন্দ্র থেকে প্রথম মহিলা প্রার্থী হিসাবে যে সিপিএম নেত্রী এ বার লোকসভা ভোটে লড়েছিলেন। এমন প্রস্তাব শুনে রীতিমতো ফাঁপরে পড়ে গিয়েছে বিজয়ন-শিবির!

তিন বারের বেশি কোনও কমিটির শীর্ষে থাকা যাবে না এই নিয়ম মানলে আগামী বছর রাজ্য সম্মেলনেই বিজয়নকে সরতে হবে রাজ্য সম্পাদক পদ থেকে। বিজয়ন যেমন পরের বিধানসভা ভোটে মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী হতে চাইছেন, তেমনই দলে বিজয়নের চেয়ারের দিকে নজর রেখেছেন পলিটব্যুরোর আর এক সদস্য কোডিয়ারি বালকৃষ্ণন। রাজ্যের প্রাক্তন পুলিশমন্ত্রী বালকৃষ্ণনের মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার ইচ্ছা একেবারে নেই, তা-ও নয়! অতএব? কেরল সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্যের কথায়, “মামলা জটিল!”

পরিস্থিতি দেখে বেবি-শিবির এখন অপেক্ষায় আছে, বিজয়নের মুখ্যমন্ত্রিত্ব-অভিযান কবে প্রবল আকার নেয় এবং স্বমূর্তি ধরেন এক ও অদ্বিতীয় ভি এস!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন