রাস্তার শিলান্যাস অনুষ্ঠানে রামদাস কাঠিয়াবাবা। রয়েছেন কমলাক্ষ দে পুরকায়স্থ। সোমবার। ছবি: শীর্ষেন্দু সী
সরকারি প্রকল্পে রাস্তার শিলান্যাস করলেন ধর্মীয় নেতা। অনুষ্ঠানে করিমগঞ্জ জেলা কংগ্রেস সভাপতিকে ‘সমাজসেবক’ পরিচয়ে ডাকা হল মঞ্চে। পরিষদীয় সচিবকে বলা হল ‘অসমের করিতকর্মা বিধায়ক’। এ সব নিয়ে অনুষ্ঠানের পর ছড়াল বিতর্ক।
করিমগঞ্জে ১০৮ রামদাস কাঠিয়াবাবার শিষ্যের সংখ্যা ২০ হাজারের বেশি। উত্তর করিমগঞ্জে প্রায় তিন হাজার। আজ করিমগঞ্জ শহরের বিপিন পাল রোড এলাকায় একটি রাস্তার শিলান্যাস করলেন সেই ১০৮ রামদাস কাঠিয়াবাবা। এসিএসপি প্রকল্পের অধীনে প্রায় ১১ লক্ষ টাকা দিয়ে তৈরি হবে রাস্তাটি। পূর্ত বিভাগ কাজ তদারকি করবে।
সরকারি অনুষ্ঠানের মঞ্চে পরিষদীয় সচিবের নাম কমলাক্ষ দে পুরকায়স্থের বদলে লেখা হয় ‘কালাক্ষ দে পুরকায়স্থ’। শিলান্যাসের ফলকে তা ছিল— ‘কমলাকস্ম দে পুরকায়স্থ’! বিকেলে রামদাস কাঠিয়াবাবা এবং পরিষদীয় সচিব যৌথ ভাবে রাস্তার কাজের শিলান্যাস করেন। উদ্বোধন অনুষ্ঠানে জেলা কংগ্রেস সভাপতি সতু রায়কে ‘সমাজসেবক’ হিসেবে পরিচয় দিয়ে মঞ্চে ডেকে নিয়ে যাওয়া হয়। তিনি বিধায়কের কাজের প্রশংসা করে বলেন, ‘‘অসমের মুখ্যামন্ত্রী তরুণ গগৈও বিধায়কের কর্ম তৎপরতায় খুশি।’’ উত্তর করিমগঞ্জের বিধায়ক অসমের সব চেয়ে করিতকর্মা বিধায়ক বলে মন্তব্য করেন তিনি। উত্তর করিমগঞ্জে সাধারণ মানুষের সমস্ত সমস্যার সমাধান হয়ে গিয়েছে বলেও দাবি করেন জেলা কংগ্রেস সভাপতি। সতুবাবু বলেন, ‘‘ভবিষ্যতে কমলাক্ষবাবু ফের সুযোগ পেলে বাকি সমস্যাও মিটিয়ে দিতে চেষ্টার ত্রুটি করবেন না। তিনি তাঁর কার্যকালে জেলায় কোটি কোটি টাকার উন্নয়ন করেছেন।’’ কাঠিয়াবাবাও বিধায়কের প্রশংসা করেন।
সরকারি অনুদানে নির্মিত রাস্তার শিলান্যাস ধর্মগুরুকে দিয়ে করানো নিয়ে করিমগঞ্জে বিতর্ক ছড়িয়েছে। নাগরিকদের একাংশের বক্তব্য, ধর্মগুরুকে দিয়ে রাস্তার শিলান্যাস করিয়ে তাঁর ভক্তদের ভোট টানার চেষ্টা করছে কংগ্রেস। সরকারি বা রাজনৈতিক অনুষ্ঠানে ধর্মগুরুর উপস্থিতি অনেকের কাছেই কাম্য ছিল না।
এ নিয়ে শহর ব্লক কংগ্রেস সভাপতি তাপসকান্তি পুরকায়স্থের মন্তব্য, ‘‘ওই রাস্তার পাশে একটি আশ্রম তৈরি করবেন ভক্তরা। সে জন্য ধর্মীয় নেতাকে অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। এর সঙ্গে ভোট প্রচারের সম্পর্ক নেই।’’ পাশাপাশি বানান-বিভ্রাটের দায় তিনি পূর্ত বিভাগের উপর চাপিয়েছেন। যদিও পূর্ত দফতরের এক কর্তার বক্তব্য, এ সব অনুষ্ঠানে ফলক তৈরির ‘দায়িত্ব’ তাঁদের হাতে থাকে না।
এ দিন করিমগঞ্জের জেলাশাসকের দায়িত্ব নিয়ে জেলার রাস্তাঘাটের দুরবস্থায় উদ্বেগ প্রকাশ করেন মনোজ ডেকা। রাস্তার হাল বদলাতে তিনি চেষ্টা চালাবেন বলেও মন্তব্য করেন। এর আগে অসম পর্যটন বিভাগের ডিরেক্টর ছিলেন তিনি। করিমগঞ্জের পূর্বতন জেলাশাসক সঞ্জীব গোঁহাই বরুয়া রাজ্যের স্বরাষ্ট্র সচিবের দায়িত্বভার গ্রহণ করেছেন। তাঁর স্থলাভিষিক্ত হয়েছেন মনোজবাবু।
এ দিন দায়িত্ব বুঝে নেওয়ার পর তিনি জেলার সরকারি দফতরগুলির উচ্চপদস্থ আধিকারিক এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। মনোজবাবু বলেন, ‘‘মৎস্য ও পর্যটন বিভাগের দায়িত্বে থাকাকালীন কয়েক বার করিমগঞ্জে এসেছিলাম। পুর-নির্বাচনে পর্যবেক্ষকের দায়িত্বও এখানে পালন করেছি। তাই করিমগঞ্জের সঙ্গে আমার সম্পর্ক অনেক পুরনো।’’